প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের কর্মী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটি।
একইসঙ্গে সংগঠনটির পক্ষ থেকে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ করে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের অপকৌশল অনুকরণ করে বৈষম্যবিরোধী নেতারা দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নানা ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় একটি পরিকল্পিত চক্রান্তের অংশ হিসেবে ছাত্রদলকে নেতৃত্বশূন্য করা এবং ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে তারা নানাবিধ ষড়যন্ত্রের কৌশল অবলম্বন করছে।
বিজ্ঞাপন
রোববার (২০ এপ্রিল) নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল নেতারা পারভেজের মৃত্যুর ঘটনায় নিন্দা ও সমবেদনা জানিয়ে বলা হয়, আমরা জেনেছি, ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই-তিনজন শিক্ষার্থীর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বসে সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। এমন সময় মেহেরাজ ইসলাম এবং আরও দুইজন ছাত্রীসহ কয়েকজন ওই পথে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই তারা পারভেজকে উদ্দেশ্য করে ‘এদিকে তাকাচ্ছ কেন?’, ‘এদিকে তাকালে চোখ তুলে দেব’— এ ধরনের টিজিং ও উসকানিমূলক মন্তব্য করতে থাকেন। পারভেজ জবাবে বলেন, ‘কি দোষ করেছি ভাই?’ এতে তারা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। বিষয়টি মীমাংসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আব্দুস সালাম হস্তক্ষেপ করেন এবং উভয়পক্ষকে মীমাংসা করে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, প্রচণ্ড উচ্ছৃঙ্খল মেহেরাজ ইসলাম গং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করে দেয়া এই মীমাংসা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ১০-১৫টি লাশ ফেলার হুমকি দিয়ে বহিরাগতদের ডেকে আনে এবং পারভেজের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালায়। এই হামলায় মেহেরাজ ইসলামের সাথে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক শোভহান নিয়াজ তুষার ও যুগ্ম-সদস্য সচিব হৃদয় মিয়াজীর নেতৃত্বে এলাকার বেশকিছু উচ্ছৃঙ্খল সন্ত্রাসী জড়িত ছিল। তারা ছুরি দিয়ে পারভেজের বুকের ওপর আঘাত করে হত্যা করে।

বিজ্ঞাপন
ছাত্রদল নেতারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের মীমাংসার পর যখন সন্ত্রাসীরা হুমকি-ধামকি দিচ্ছিল, তখন শহীদ পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আকুতি জানিয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন কোনো ধরনের সহায়তা করেনি। ছাত্রদল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে পারভেজ ইসলামের ওপর চালানো এই হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। নতুবা তুচ্ছ একটি ঘটনার জেরে, প্রক্টর কর্তৃক মীমাংসার পরও একজন মেধাবী ছাত্রকে প্রকাশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করার প্রশ্নই আসে না।
অবিলম্বে এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবি করা বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কতিপয় সন্ত্রাসী রক্ষীবাহিনীর মতো সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব কায়েম করেছে। তারা বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কর্মীদের মবের ভয়ভীতি দেখিয়ে ছাত্রলীগের স্টাইলের সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি করছে। ক্যাম্পাস তো বটেই, এমনকি ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণের বাইরে গিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কার্যক্রম পরিচালনায়ও বাধা দেয়া হচ্ছে, যা গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এটা নতুন নামে সেই পুরাতন ফ্যাসিবাদ। এই চলমান দখলদারিত্ব ও সন্ত্রাসই এই হত্যার পেছনে খুনী-সন্ত্রাসীদের সাহস ও মদদ জুগিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, পারভেজের খুনিদের রাজনৈতিক প্রশ্রয়দাতাসহ খুন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত সকলের যথাযথ বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজে অশোচনীয় ভাষায় পোস্ট দেয়ার অভিযোগ তুলে বলা হয়, এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে অশোভনীয় ভাষায় যে পোস্ট দেওয়া হয়েছে, আমরা তার নিন্দা জানাই। তারা অভিযুক্তদের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে অশোভন ভাষায় আক্রমণ ও তদন্তের আগেই অভিযুক্তদের পক্ষ নেয়াটাই প্রমাণ করে, তারা অপরাধ আড়াল করাতে বিশ্বাসী। আমরা মনে করি এই সংগঠনের প্রতিটি কমিটিতে যেভাবে সাবেক ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের ঠাঁই দেওয়া হয়েছে, তারা যেভাবে সাবেক ছাত্রলীগারদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছেন, এই অশোভন ভাষা সেই প্রক্রিয়া ও চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ। আমরা তাদেরকে ষড়যন্ত্রের নীলনকশাহীন সঠিক ও ইতিবাচক ধারার ছাত্ররাজনীতি চর্চার আহ্বান জানাই।
ছাত্রদল নেতারা এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী, ইন্ধনদাতা, হুকুমদাতা এবং হামলাকারী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
একইসঙ্গে ছাত্রনেতাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানান।
নয়াপল্টনে পারভেজের জানাজা, বিক্ষোভ
এদিকে সংবাদ সম্মেলনের পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদল কর্মী পারভেজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় তার সহপাঠীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
পরে পারভেজ হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
বিইউ/এএস

