মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫, ঢাকা

নির্বাচিত পার্লামেন্টেই সংবিধান সংশোধন সম্ভব—অটল বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৪৯ এএম

শেয়ার করুন:

নির্বাচিত পার্লামেন্টেই সংবিধান সংশোধন সম্ভব—অটল বিএনপি

সংবিধান সংশোধন প্রশ্নে আগের অবস্থানেই অনড় রয়েছে বিএনপি। দলটি স্পষ্ট করে জানিয়েছে, কেবলমাত্র একটি নির্বাচিত জাতীয় সংসদই সংবিধান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার দিনভর বৈঠকে এই বার্তা দিয়েছে বিএনপি।

বৈঠকটি হয় সংসদ ভবনের এলডি হলে। সকাল ১১টা থেকে বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত চলে আলোচনা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে দলের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেয়।


বিজ্ঞাপন


কমিশনের পক্ষে বৈঠকে ছিলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ, ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও মনির হায়দার।

বিএনপি বৈঠকে জানায়, সংবিধান সংশোধন নিয়ে আলোচনা চলতে পারে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচিত পার্লামেন্ট। দলটি বলে, এই অবস্থান থেকে তারা একচুলও সরবে না।

বৈঠকে সংবিধানের বিভিন্ন অধ্যায় নিয়ে আলোচনা হয়। প্রস্তাবনা, প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, মৌলিক অধিকার এবং আইন বিভাগ নিয়ে মতবিনিময় হয়। এসব বিষয়ে বিএনপি ও কমিশনের মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। আবার কিছু বিষয়ে মতভেদ রয়ে গেছে।

বিএনপি বলেছে, যেসব বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, সেগুলো দলীয় ফোরামে আলোচনা করে পরে জানানো হবে।


বিজ্ঞাপন


বিএনপি ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে নিজেদের মত তুলে ধরে। দলটি বলেছে, এই অনুচ্ছেদ পুরোপুরি উন্মুক্ত করলে সরকার পরিচালনায় স্থিতিশীলতা থাকবে না। তারা চায়, সংসদ সদস্যরা অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধন, আস্থা ভোট এবং জাতীয় নিরাপত্তা ছাড়া অন্য বিষয়ে স্বাধীনভাবে মত দিতে ও ভোট দিতে পারেন।

গণভোট নিয়ে বিএনপি বলেছে, সব ধরনের সংবিধান সংশোধনীতে গণভোট বাধ্যতামূলক করা যাবে না। কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে—যেমন সংবিধানের প্রস্তাবনা বা ৮, ৪৮, ৫৬, ১৪২ অনুচ্ছেদ—গণভোট হতে পারে। কিন্তু প্রতিটি সংশোধনীতে গণভোটের বিধান দিলে সমস্যা হবে।

জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (NCC) নিয়েও আপত্তি জানায় বিএনপি। তারা বলেছে, এটি কার্যকর হলে নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এই ধরনের কাঠামো দেশে আগে কখনও ছিল না। তাই হঠাৎ করে এটি চালু করাও সঠিক হবে না।

ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদ নিয়েও নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে বিএনপি। তারা বলেছে, দলটি ধর্মনিরপেক্ষতা বা বহুত্ববাদের পক্ষে নয়। বিএনপি চায়, ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে যে মূলনীতি যুক্ত হয়েছে, তা বহাল থাকুক। সেখানে আছে—আল্লাহর ওপর আস্থা, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র। এই মূলনীতিগুলোই বিএনপি চায়।

তারা বলেছে, কমিশনের রিপোর্টে বিএনপির অবস্থান ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত ‘হ্যাঁ/না’ উত্তরের মাধ্যমে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ফলে দলটির প্রকৃত মতামত প্রতিফলিত হয়নি।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়েও বিএনপি তাদের অবস্থান জানায়। তারা বলে, সংবিধানের ৯৫ ও ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন না করে বিচার বিভাগের জন্য নতুন কোনো পদক্ষেপ নিলে তা অসাংবিধানিক হবে।

বিএনপি জানিয়েছে, কমিশনের রিপোর্টে থাকা ১৩১টি প্রস্তাবের মধ্যে তারা ২৫টি প্রস্তাবে একমত। আরও ২৫টির সঙ্গে আংশিক একমত। বাকিগুলোর বিষয়ে তারা দ্বিমত পোষণ করে।

বিএনপি আরও বলেছে, তারা সংস্কারের বিরুদ্ধে নয়। বরং বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সংস্কার তারাই করেছে। মাল্টি পার্টি গণতন্ত্র, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, দুর্নীতি দমন কমিশন, ভ্যাট ব্যবস্থা, পোশাক শিল্প, প্রবাসী কর্মসংস্থান, গ্রাম সরকার—এসব বিএনপি-ই চালু করেছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে নজরুল ইসলাম খান বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই বদলায়। তবে সংস্কার যেন এত দীর্ঘ না হয়, যাতে জনগণের আশা নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

সংলাপে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ব্যক্তি কেন্দ্রিক স্বৈরতন্ত্রের কবলে পড়েছে। ভবিষ্যতে যেন এমন না হয়, সেই চেষ্টার অংশ হিসেবেই এই আলোচনা।

বিএনপি ও কমিশনের মধ্যে পরবর্তী বৈঠক হবে আগামী রোববার (২১ এপ্রিল)। সেদিন আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

সংবিধান নিয়ে চলমান এই আলোচনা প্রক্রিয়াকে বিএনপি ইতিবাচকভাবে দেখছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই নিতে চায় দলটি। এজন্য তাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট ও অটল।

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর