ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি (এনসিপি) গঠনের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিসরে একটি নতুন শক্তি আত্মপ্রকাশ করেছে, যার লক্ষ্য একে অপরের মত-পথে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করা। দলটির নেতাদের দাবি—তারা একটি মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করবে, যেখানে সব মত, পথ ও ধর্মীয় আদর্শকে সম্মান জানানো হবে। তবে, এনসিপি’র আদর্শগত পরিচয় এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে অনেক প্রশ্ন উঠেছে।
দলটি গঠনের মূল উদ্দেশ্য হলো— একাত্মতার ভিত্তিতে জনগণের অধিকার রক্ষা করা এবং রাজনৈতিক বৈষম্য দূর করা। এনসিপি নিজেদেরকে বাংলাদেশপন্থী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, যা কেবল দেশের মানুষের, তাদের অধিকার এবং জাতীয় স্বার্থের কথা ভাববে। দলের নেতারা বলছেন, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন এবং মতবিরোধ ছিল, এবং তারা সেই শূন্যতা পূরণ করতে চান।
বিজ্ঞাপন
দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তাদের আন্দোলন এবং উদ্দেশ্যকে আরও স্পষ্ট করেছেন। তিনি জানান, তারা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো পুনর্গঠন করতে চান এবং এজন্য তারা ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ এবং ‘নতুন সংবিধান’ প্রণয়নের কথা বলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া গণঅভ্যুত্থান একটি নতুন যুগের সূচনা করবে, যেখানে জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা হবে এবং ক্ষমতাসীনদের স্বৈরাচারিতার অবসান ঘটবে। তার মতে— নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে দেশের সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটানো হবে, যাতে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলগুলো দেশের প্রগতি এবং জনগণের উন্নতির দিকে কাজ করতে পারে।
নাহিদ ইসলাম তার ঘোষণাপত্রে বলেছেন, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা হলে দেশের প্রতিটি নাগরিককে সমান অধিকার এবং নিরাপত্তা প্রদান করা হবে। তিনি উল্লেখ করেছেন, সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চান। তিনি আরও বলেছেন, তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হবে এমন, যেখানে সমাজে বিভেদ নয়, ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে, প্রতিশোধ নয়, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং পরিবারতন্ত্রের বদলে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কাজ করা হবে।
এনসিপি’র গঠনতন্ত্র এবং কর্মসূচি নিয়ে দলের নেতারা কাজ করছেন, তবে দলটি এখনো তাদের পলিসি এবং নীতি বিষয়ে বিস্তারিত ঘোষণা দেয়নি। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গঠনতন্ত্র এবং কর্মসূচি তৈরির জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে, যা দলের মৌলিক দিকগুলো নির্ধারণ করবে। দলের সদস্য সচিব মিরাজ মিয়া বলেছেন, তারা সব মতাদর্শের মানুষকে সম্মান জানিয়ে একটি শক্তিশালী দল গঠন করতে চান। তাদের মতে, এ ধরনের রাজনৈতিক ঐক্য দেশের উন্নতির জন্য সহায়ক হতে পারে। তবে, দলের আদর্শগত ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট সময় এবং প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
এনসিপি’কে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে তিনটি প্রধান কমিটি গঠন করা হবে, যা দলের সাংগঠনিক কাঠামো, নির্বাচনী প্রস্তুতি এবং রাজনৈতিক কর্মকৌশল নির্ধারণ করবে। দলের নেতারা জানিয়েছেন, তারা শিগগিরই নিজেদের নির্বাচন প্রক্রিয়া, গঠনতন্ত্র, কর্মসূচি এবং রাজনৈতিক ভিশন চূড়ান্ত করতে চান।
বিজ্ঞাপন
দলটি তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছানোর পরিকল্পনা করেছে। তারা আগামী তিন মাসের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা এবং মহানগরে কমিটি গঠন করতে চায়। এনসিপি’র সদস্য সচিব মিরাজ মিয়া জানান, রমজানের মধ্যে তারা দলের সাংগঠনিক কাঠামো চূড়ান্ত করার চেষ্টা করবেন এবং এই সময়ের মধ্যে প্রতীক চূড়ান্ত করতে চান, যাতে রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করা যায়। এনসিপি তাদের কার্যক্রমে কৃষক, শ্রমিক, প্রবাসী এবং প্রান্তিক জনগণের গুরুত্ব দিতে চান, কারণ তারা বিশ্বাস করেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে এই জনগণই সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল।
এনসিপি দাবি করছে— তারা দেশের সকল নাগরিককে সমান অধিকার প্রদান করবে এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ার জন্য তারা রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চাইছেন, যেখানে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং নীতিহীনতা কোনো স্থান পাবে না। দলের নেতা আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেছেন, তাদের উদ্দেশ্য হলো ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে’ অংশগ্রহণকারী জনগণের শক্তিকে সম্মান জানানো এবং সেই জনগণকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
তবে, এনসিপি’র ভবিষ্যৎ এবং তাদের রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে এখনও বেশ কিছু ধোঁয়াশা রয়ে গেছে, এবং বিরোধী দলগুলো তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। দলটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং রাজনীতি নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য এলে বোঝা যাবে, যখন তারা গঠনতন্ত্র এবং কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে এবং তাদের প্রথম নির্বাচনী পরিকল্পনা প্রকাশ করবে।
এইউ