নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থ স্বার্থ পরিত্যাগ করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, যদি বড় দলগুলো ছোট দলকে কাজ করতে না দেয় তাহলে তাদের মধ্যে স্বৈরাচারী মনোভাব প্রকাশ পেতে থাকবে।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর সংসদ ভবন সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ তথা ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি’র (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে অনুরোধ রেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, ৫ আগস্টে খুনি হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আমরা এই বাংলাদেশ নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেগুলো যদি বাস্তবায়ন করতে চাই, তাহলে আমাদের এই রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
এনসিপির মুখ্য সংগঠক বলেন, সব রাজনৈতিক দল যদি ছোট ছোট স্বার্থ একপাশে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি, তাহলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব।
তৃণমূল পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো যেন সহাবস্থান করতে পারে তেমন পরিবেশ গড়ার আহ্বান জানান সারজিস। বলেন, বড় রাজনৈতিক দল যদি ছোট দলকে সামনে এগুতে না দেয় তাহলে ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে স্বৈরাচারী আচরণ দেখা যেতে পারে। আমরা যেন আওয়ামী লীগ খুনি হাসিনা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করি।
এনসিপির কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, ১৯৭১ এর পরে এই একবিংশ শতাব্দিতে নতুন একটি অধ্যায় হলো ২০২৪। আমরা ২৪ সালে ফ্যাসিস্টবিরোধী যে লড়াই করেছি, খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে আমরা যে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করেছি, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের, মতের, ধর্মের, বর্ণের ও বয়সের মানুষ আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, আমাদের যে কোনো একটি বিষয়ের পক্ষে-বিপক্ষে কথা থাকবে, বিতর্ক থাকবে। কিন্তু দিন শেষে যেটা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য মঙ্গলজনক আমরা সবাই যেন সেটাতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের এই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি মিউচুয়াল রেসপেক্ট থাকে, তাহলে বাংলাদেশ হবে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ।
সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিয়ে সারজিস বলেন, বাংলাদেশের যত সরকারি কর্মচারী আছে, তারা যেন আর তাদের দায়িত্ব পালন বাদ দিয়ে তোষামোদিতে লিপ্ত না হয়। বাংলাদেশ পুলিশ নামক যেই প্রতিষ্ঠানটিকে খুনি হাসিনা ধ্বংস করে দিয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানটি যেন তাদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনে। আমলা, কর্মচারী, পুলিশ, বিচারক কেউ জনগণ থেকে ঘুষ নেবেন না। জনগণের সঙ্গে এই অন্যায়গুলো করবেন না।
‘সৃষ্টিকর্তা যাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রেখেছেন, সেই দায়িত্ব তাদের কাছে আমানত স্বরূপ। এই আমানত যেন আমরা খেয়ানত না করি।’
তিনি আরও বলেন, সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধবাবে খুনি হাসিনার হাতে ধ্বংস হওয়া সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার করতে হবে। এইসব প্রতিষ্ঠানে সেই মানুষগুলো যেন বসে যিনি দেশ ও মানুষের জন্য ভালো।
‘গুম খুনের বিচার যেন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে করতে পারি। খুনি হাসিনার বিচার যেন করতে পারি।’
নিজেদের স্বার্থের জন্য যেন কোনো অপরাধী যেন ছাড় না পেয়ে যায় সেজন্য সবাইকে সতর্ক করেন সারজিস। বলেন, কোনো অপরাধীর জন্য সুপারিশ নিয়ে আমরা যেন থানায় না যাই। কোনো বিচারকের কাছে যেন না যাই। নিজেদের স্বার্থের জন্য যেন কোনো অপরাধী যেন ছাড় না পেয়ে যায়।
ফ্যাসিস্টবিরোধী লড়াইয়ে অংশ নেওয়া সব রাজনৈতিক দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সারজিস। বলেন, আপনাদের সবার প্রতি আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা।
তিনি আরও বলেন, নতুন বাংলাদেশে ধ্বজভঙ্গ শিক্ষার সিস্টেমকে আমাদের ঠিক করতে হবে, এই কারিকুলামকে আমাদের ঠিক করতে হবে।
এদিন বিকেল সোয়া চারটার পর আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এই অনুষ্ঠান ঘিরে দুপুর থেকে ছোট ছোট মিছিলে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠনটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন। জুমার পর বাড়তে থাকে মিছিলের স্রোত। এক পর্যায়ে তা জনসমুদ্রে রূপ নেয়।
নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, কূটনীতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
ইএ