রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘নিরপেক্ষ সরকারের’ দাবি। এই দাবি নিয়ে সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তার মতে— ফখরুলের বক্তব্য আসলে ১/১১ পরিস্থিতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত দেয়, যা গণতন্ত্র এবং জাতীয় স্বার্থের বিরোধী হবে এবং ছাত্র-জনতা তা মেনে নেবে না।
মঙ্গলবার, বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘যদি অন্তর্বর্তী সরকার পুরোপুরি নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করে, তাহলে তারা নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে। তবে যদি নিরপেক্ষতা না থাকে, তাহলে আমাদের একটি নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে।’
বিজ্ঞাপন
ফখরুলের এই বক্তব্যের বিষয়ে নাহিদ ইসলাম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন। সেই পোস্টে তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য আসলে আরেকটি ১/১১ সরকারের প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা। ১/১১ পরিস্থিতি থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটেছিল।’
নাহিদ ইসলাম আরও মন্তব্য করেন, ‘বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে আমরা আরেকটি ১/১১ সরকারের আভাস পাচ্ছি, যেখানে সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা, পররাষ্ট্রনীতির নতজানু অবস্থান, গুম-খুন, হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া ইত্যাদি বিষয় রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যখন ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা রাজপথে ছিল, তখন কিছু জাতীয় নেতা ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে নতুন সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছিলেন। আমরা তখনই বলেছিলাম, আমরা সেনা শাসন বা জরুরি অবস্থা মেনে নেবো না।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্ট থেকে ছাত্র-জনতা যে অবস্থানে ছিল, সেটি সরকারের জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ৩ আগস্ট থেকে বারবার বলছিলাম, সেনা শাসন বা জরুরি অবস্থার মতো কোনো ব্যবস্থা মেনে নেবো না। এরপর বঙ্গভবনে আলোচনা ও মীমাংসার মাধ্যমে ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
বিজ্ঞাপন
নাহিদ বলেন, ‘আমরা চাইছিলাম একটি জাতীয় সরকার গঠন হোক, যেখানে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এবং নাগরিক সমাজ একত্রিত হয়ে সরকার গঠন করবে। কিন্তু বিএনপি জাতীয় সরকার গঠনে রাজি হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার জাতীয় সরকার না হলেও, আন্দোলনের সব পক্ষেরই অংশীদারিত্ব রয়েছে এবং তারা নানা সুবিধা ভোগ করছে।’
নিরপেক্ষ সরকারের প্রস্তাব নিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার গঠনের আগেই কিছু পদে বিএনপি সমর্থিত লোক নিয়োগ পেয়েছে। এমনকি নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।’ তিনি বলেন, ‘এটা সত্যি যে, ছাত্ররা তাদের আন্দোলন থেকে সরে এসেছে এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তারা অনেক কিছুই ছাড় দিয়েছে। তবে, গণতন্ত্রবিরোধী কোনো ষড়যন্ত্রে ছাত্র-জনতা কখনোই ছাড় দেবে না।’
ফখরুলের বক্তব্য: দ্রুত নির্বাচন দরকার
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশে দ্রুত নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন, কারণ জনগণ তাদের প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করার অধিকার থেকে ১৫ বছর ধরে বঞ্চিত।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যদি বিতর্কিত করা হয়, তাহলে জনগণ আবারও তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।’
ফখরুল আরো বলেন, ‘অন্য শক্তিগুলো যখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করে, তখন জনগণ তাদের অধিকার থেকে আরও বেশি বঞ্চিত হয়।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নির্বাচনের অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাই আমরা বারবার বলছি, নির্বাচন খুব দ্রুত হওয়া উচিৎ।’
ফখরুল তার বক্তব্যে বলেন, ‘তবে, নির্বাচন থেকে যতটা সম্ভব বিলম্ব হবে, ততটাই জনগণের অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হবে।’
হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্য: বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে মন্তব্য
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ সম্প্রতি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিএনপি’র এক সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন, আওয়ামী লীগ দেশে ফ্যাসিজম কায়েম করেছে, গুম, খুন, গণহত্যা করেছে এবং দেশকে অরাজকতার শীর্ষে পৌঁছেছে।’
হাসনাত আরও বলেন, ‘এটাই সেই আওয়ামী লীগ, যাদের বিরুদ্ধে বিএনপি বহুবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবার যখন ছাত্র-জনতা দেশে কাঠামোগত পরিবর্তন আনার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল, তখন বিএনপি তাদের সেই সুযোগকে অবমূল্যায়ন করেছে এবং ১/১১ সরকারের ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি যদি এখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেবে, তবে তাদের দেশ পুনর্গঠন এবং গণতন্ত্রের জন্য একত্রিত হওয়ার সুযোগ হারাতে হবে।’
এইউ