আগামী নির্বাচন আরও কঠিন হবে, এখানে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, কেউ যদি মনে করেন, আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমরা যাদের ভাবতাম, তারা মাঠে নেই বা মাঠে দুর্বল, আল্লাহর ওয়াস্তে একথা মন থেকে সরিয়ে দিন। আগামী নির্বাচন অনেক কঠিন হবে।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অধিবেশনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, আপনারা জনগণকে সঙ্গে রাখুন, জনগণের সঙ্গী হোন। আপনাদের আচরণ, চলাফেরা, কথাবার্তা পরিবর্তন করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি না নিশিরাতের নির্বাচনে, ব্যালট চুরির নির্বাচনে। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের ম্যান্ডেটে। আমরা সেই নির্বাচনে বিশ্বাস করি, যেখানে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে, স্বচ্ছভাবে, সুন্দরভাবে, নিরাপদে, নিরাপত্তার সঙ্গে ভোট দেবে। সেটা অর্জন করতে হলে আপনাদের অনেককিছুর পরিবর্তন করতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ৫ আগস্টের পর কিছু কিছু সহকর্মীর মনে অদ্ভুত একটি অনুভব এসেছে যে, আমরা বোধ হয় সরকার গঠন করে ফেলেছি। আমি বলতে চাই, আমরা সরকার গঠন করিনি, সরকারি দলে নেই, এখনো বিরোধী দলেই আছি। যে সকল সহকর্মী এরকম ভুল উপলব্ধি করছেন, তাদের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন আচরণের জন্য দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, দলের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, যদি আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মাঠে থাকত বা থাকতে পারত, সেক্ষেত্রে নির্বাচন যতটা কঠিন হতো, তার চেয়েও আগামী নির্বাচন আরও কঠিন হবে। এখানে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে, অনেক অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। আপনি যেহেতু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিনিধি, আপনার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে, একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন। আপনি ছাত্রদল, যুবদল, মহিলাদল কিংবা স্বেচ্ছাসেবক দল, যাই হোন না কেন, আল্লাহর ওয়াস্তে এটা একটু চিন্তা করুন যে, বহু ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্রকে যদি উপড়ে ফেলতে হয় তাহলে আমাদের ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। আমাদের ধৈর্যশীল হতে হবে, আচরণ সেরকম হতে হবে।
নেতাকর্মীদের কিছু কিছু ঘটনায় দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা প্রত্যেকে বিএনপির প্রতিনিধি। মানুষ আপনাদের চেনে বিএনপির একজন নেতা কিংবা কর্মী হিসেবে। আপনি যুবদল, ছাত্রদল কিংবা তাঁতীদল যাই হোন না কেন, সবাই আপনাদের চেনে বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে। কেন আপনি এমন কিছু করবেন, যার জন্য আপনার আচরণের জন্য কিংবা আপনার দ্বারা দল কিংবা দলের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেন আপনি এটা করবেন? আপনার এলাকার মানুষ তো আপনারই আপনজন, আপনারই স্বজন। দুদিন পর ভোট করতে তো ধানের শীষ নিয়ে আপনি তাদের কাছেই যাবেন, আপনি কোন মুখে তাদের কাছে ভোট চাইবেন? আজ বিতর্কিত কাজ করলে, তার কাছে ভোট চাইতে গেলে আপনাকে সেটার জবাব শুনতে হবে।
বিজ্ঞাপন
তারেক রহমান বলেন, আমরা কেউ ক্ষমতায় যাব না, আপনারা কেউ কিন্তু ক্ষমতায় যাবেন না, আপনারা মানুষের সমর্থন পেলে দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবেন। মানুষ আপনাদের ক্ষমতা দেবে না, মানুষ আপনাদের দেশ পরিচালনার সুযোগ দেবে। পার্থক্যটা বুঝতে হবে। ক্ষমতায় ছিল পলাতক স্বৈরাচার। ওরা জনসমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়নি। ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতায় ছিল। আমরা দেশ পরিচালনার সুযোগ পেতে চাই জনগণের সমর্থন নিয়ে।
বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই ৩১ দফা প্রথমে ছিল ২৭ দফা। পরে সেটা ৩১ দফা হয়েছে, কারণ বাংলাদেশে পলাতক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত যতগুলো দল ছিল, সকল দলের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। তাহলে আমরা বলতে পারি, এটি বাংলাদেশের কমবেশি প্রায় সকল ডেমোক্রেটিক দলের সম্মিলিত প্রস্তাবনা, যার মধ্যে আগামী দিনের দেশ নিয়ে পরিকল্পনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সবকিছুই কমবেশি আছে। এটি কোনও ধর্মীয় গ্রন্থ নয় যে এখানে চেঞ্জ করা যাবে না। অবশ্যই চেঞ্জ করা যাবে। কারও যদি কোনও প্রস্তাব থাকে, আমাদের পাঠালে সেখানে যদি ভালো কিছু থাকে, তাহলে আমরা গ্রহণ করব।
তারেক রহমান বলেন, ৩১ দফা আমরা যদি শুধুমাত্র এখানে উপস্থিত ৮৫৯ জনের মধ্যে রেখে দিই, তাহলে কিন্তু আমাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সাধন হবে না। আমরা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করতে চাই, এটা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এই ৩১ দফার মাধ্যমে আপনার নেতাকর্মীদের জন্য কিছু লক্ষ্য উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছি।
বিএনপির পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অতীতে আমরা শুনেছিলাম, একটি দলের একজন নেতা ভারত থেকে এসে বলেছিলেন, তারা তাদের (ভারতকে) রিকুয়েস্ট করে এসেছে, যেকোনো মূল্যে তাদের ক্ষমতায় রাখতে হবে। আমরা বিএনপি, আমরা এসব বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের ক্ষমতার উৎস হচ্ছে জনগণ। সেই জনগণের সমর্থন নিয়েই আমরা দেশ পরিচালনা করতে চাই। আমরা জনগণের কাছে যেতে চাই, জনগণের দুয়ারে যেতে চাই, জনগণকে বলতে চাই- দয়া করে আমাদের দেশ পরিচালনার সুযোগ দিন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের পাচার করা টাকা ফেরত আনার বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক কিছু ফোরাম আছে, জাতিসংঘ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ আরও কিছু ফোরাম আছে। অবশ্যই তাদের সহায়তা আমরা নেব। বাইরের যেসব আরও সংস্থা আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলব। আমার দেশের সম্পদ, দেশের মানুষের সম্পদ যে বা যারাই এনে দিতে পারবে, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলব।
বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, ড. মওদুদ আলমগীর পাবেল এবং দলটির যুগ্ম-মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচটি