জনরোষে পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট ওপারে বসে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছে। কোনো ষড়যন্ত্রে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অর্জন যেন ব্যর্থ না হয় সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেইটের খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) মিলনায়তনে ঢাকাস্থ ঠাকুরগাঁও ছাত্র কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এক ছাত্র কনভেনশনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তোমাদের প্রতি (ছাত্রদের) একটাই অনুরোধ, আমরা যেটা অর্জন করেছি সেটা যেন বৃথা না যায়। সীমান্তের ওপারে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বসে আছে, ওখান থেকে নতুন নতুন চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে তারা একেকটা ঘটনা ঘটিয়ে সেখানে ফলাও করে বিশ্বে দেখাতে চায় যে, বাংলাদেশ নাকি মৌলবাদীর দেশ হয়ে গেছে, বাংলাদেশে এখানে নাকি সংখ্যালঘু ভাইকে নির্যাতন করা হচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ভারতের পত্র-পত্রিকাগুলোতে, আমাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে এমনভাবে লেখা হচ্ছে যেন বাংলাদেশে এখন এই ধরনের সমস্ত নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটছে। আসলে তা না। এই আনন্দে আমাদের থাকার অবকাশ নাই যে, আমরা জিতে গেছি সব হয়ে গেছে। আমাদের মাথার ওপরে সেই খড়ক এখনো আছে এবং চতুর্দিকে তারা চেষ্টা করছে আবার অন্ধকারে নিয়ে যাওয়ার। এজন্য খুব সজাগ থাকতে হবে, সর্তক থাকতে হবে। কোনো রকম হঠাকারিতা, কোনো রকম বিশৃঙ্খলা যাতে কেউ করতে না পারে সেটাকে রুখে দিতে হবে এটা হচ্ছে একটা বড় কাজ।’
ছাত্র সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তোমাদের ভারাক্রান্ত করতে চাই না। কারণ নিঃসন্দেহে তোমরা নতুন স্বপ্ন দেখছো, নতুন পৃথিবী দেখছো। সবচেয়ে বড় বিষয়টা তোমরা চিন্তা করছো এর পরে কি? হ্যাঁ, এটাই তোমাদের চিন্তা করতে হবে। এখন এই বাংলাদেশকে তৈরি করা, এখন এই বাংলাদেশটাকে গড়ে তোলা।’
বিজ্ঞাপন
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ওরা (আওয়ামী লীগ) সব শেষ করে দিয়ে গেছে। কোথাও কোনো অবশিষ্ট রাখেনি, একেবারে লুটপাট করে গেছে। আমি সবসময়ে আমার বক্তৃতার মধ্যে বলতাম মেঠো ভাষায় ‘ফোকলা’ করে দিয়ে গেছে। অর্থনীতি নেই, ব্যাংক লুট, সব জায়গায় লুট, ঘুষ, দুর্নীতি সমাজটাকেই শেষ করে দিয়ে গেছে। এ বিষয়গুলোকে আমাদেরকেই বন্ধ করতে হবে, আমাদেরকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জনগণ যদি রুখে দাঁড়ায় কোনো শক্তি নেই অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে পারে। আমার অনুরোধ তোমরা ছাত্র, তোমরা আন্দোলনে অংশ নিয়েছো, তোমরা অংশীদার, তোমরা এই বিষয়গুলোর দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবে, কেউ যেন আমাদের অর্জিত সম্পদ কেড়ে না নিতে পারে সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’
হাসিনা পলাইছে এই কথাটা চালু করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার নাতনিও বলে, হাসিনা পলাইছে, জিজ্ঞাসা করলে বলে- হাসিনা পলাইছে, হাসিনা পালিয়েছে না, ‘হাসিনা পলাইছে’, এই পলাইছে কথা চালু করতে হবে। এটা এজন্য বলা দরকার এই ধরনের ফ্যাসিস্ট, নির্যাতনকারী, নিপীড়নকারী, খুনি, হত্যাকারী তারা পালিয়ে যায়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি ভীষণ কষ্ট পাই যখন দেখি যে, আমার ছেলেরা নিজেরা মারামারি করছে. যখন তুমি এতো বড় একটা বিজয় অর্জন করলে, একটা ফ্যাসিস্টকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিলে, একটা ইতিহাস সৃষ্টি করলে সেই সংঘাত আমাদেরকে দেখতে হবে যে, সোহরাওয়ার্দি কলেজ ও মোল্লা কলেজের ছাত্ররা মারামারি করে রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছে। এটা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
ফখরুল বলেন ‘এটার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, আমি আবারও খুব ভীত হই যখন দেখি ইসকনের নামে, ধর্মের নামে একজন আইনজীবী নিহত হয়ে পড়ে থাকে রাস্তায়। এই বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাইনি। আমরা তো একটা নতুন জায়গায় এসেছি, নতুন স্বপ্ন দেখছি, নতুন দিগন্ত দেখছি, সেখানে এই ধরনের ঘটনা আমরা দেখতে চাই না।
জেবি