আওয়ামী ফ্যাসিবাদের টানা ১৭ বছরের শাসনামলে, যে ক’জন বেপরোয়া এমপি-মন্ত্রী ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তিনি হাসিনা সরকারের খাদ্যমন্ত্রী এবং আইন ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, মামলা-হামলা, বিরোধীদল-মত দমন, সংবাদপত্রের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ, সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ, বিচারের নামে রাজনৈতিক হত্যা, অর্থ পাচার-আত্মসাৎ, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, গণহত্যা ও প্রোপাগান্ডা— সবকিছুর পেছনে ‘মাস্টার মাইন্ড’ ছিলেন এই কামরুলই।
অভিযোগ রয়েছে— আইন প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে নিম্ন আদালতে অধিকাংশ কর্মচারীর নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে’ কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিতেন তিনি। তার নিজের নামে রাজধানীতে রয়েছে বাড়ি, ফ্ল্যাট ও বেশ কয়েক কাঠা জমি। তিনি নিজ নামে ও সন্তানদের নামে দেশে-বিদেশে গড়েছেন ‘অঢেল সম্পদের’ পাহাড়। এছাড়া খাদ্যমন্ত্রী থাকাকালে ব্রাজিল থেকে ‘নিম্নমানের গম’ কিনে আত্মসাৎ করেছেন সরকারের কোটি কোটি টাকা।
বিজ্ঞাপন
কামরুল ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। এরপর আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঢাকা-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনীত হন। সে সময় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। তখন থেকে বিরোধীদল-মত দমনের ‘মহাস্ত্র’ হিসেবে কাজ করেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে— আইন ও বিচার বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, বিচার বিভাগ ও উচ্চ আদালতের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
আইন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর, অর্থাৎ ২০০৯ সালের ১৬ আগস্ট (রোববার) এক বক্তব্যে অ্যাডভোকেট কামরুল বলেন, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। পরদিন কামরুলের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, "নতুন নতুন অর্বাচীনরা আমাকে আদব শেখাতে চায়। তাদের বক্তব্যের জবাব আমি দিতে চাই না।"
পরদিন মঙ্গলবার সকালে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বক্তব্যের জবাবে তাকে ‘কুলাঙ্গার’ বলে কটাক্ষ করেন কামরুল ইসলাম। সেদিন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, "এসব কুলাঙ্গার রাজনীতিকে নোংরা করার জন্য যথেষ্ট। বর্তমানে সুষ্ঠু রাজনীতির যে সুবাতাস বইছে, তা ধরে রাখতে সাকা চৌধুরীর মতো লোকদের রাজনীতি থেকে বের করে দেওয়া উচিত।"
বিজ্ঞাপন
২০১৭ সালের ১৯ আগস্ট খাদ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কামরুল ইসলামের এক মন্তব্য দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। সে সময় তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছিল রাজনৈতিক বিবেচনায়।
উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে— ঢাকায় শান্তি কমিটি গঠনের অন্যতম সদস্য হাকিম হাফেজ আজিজুল ইসলাম তার বড় ভাই। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কামরুল তার ভাইয়ের মালিকানাধীন প্রিন্টিং প্রেসে ‘ম্যানেজার’ হিসেবে কাজ করতেন। সে সময় মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ‘ইবলিশের দিনলিপি’ নামে সপ্তাহিক বিশেষ সম্পাদকীয় প্রকাশ করতেন তিনি।
এইউ

