রাজনীতিতে মান অভিমান ও সংক্ষুব্ধ হয়ে দলত্যাগের ঘটনা বহুদিনের। হরহামেশাই দলছুটের এমন ঘটনা ঘটে। তবে দলত্যাগীদের মধ্যে যদি পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ থাকে তাহলে তাকে নিয়ে বেশি আলোচনা থাকে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এই যেমন প্রয়াত মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজ। বিএনপির সাবেক এই মন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। স্বাভাবিকভাবেই তার সক্রিয় হওয়ার কথা ছিল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর সেদিকে যাননি। থিতু হন বিএনপিতে। এই দল থেকেই পরপারে পাড়ি জমান স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী এই রাজনীতিক।
ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে রাজনীতি করলেও শেষ সময়ে বিএনপির রাজনীতিতে তরী ভেড়ানো এমন নেতা আরও আছেন। যদিও এদের কেউ কেউ এখনো নিজেদের বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে পরিচয় দেন। আঁকড়ে রেখেছেন মুজিবকোট।
বিজ্ঞাপন
তাদেরই একজন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। সবশেষ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ধানের শীষ নিয়ে ভোটে জিতলেও এখনো নিজেকে পরিচয় দেন বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে।
এছাড়াও ’৭৫ পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগের বিদ্রোহী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আইনজীবী ফজলুর রহমান। বর্তমানে যিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতি ও পেশাজীবী সংগঠনে সক্রিয়।
১৯৯৫ সালে জাসদ (সিরাজ) বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দেন শাহজাহান সিরাজ। তিনি বিএনপির মনোনয়নেও একবার একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর খালেদা জিয়ার সরকারে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
’৯০ সালের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে যোগ দেন বিএনপিতে। দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদে থাকা হাবিব ভোটের রাজনীতিতে ভালো করতে না পারলেও দলীয় সভা-সমাবেশ, টকশোতে বিএনপির হয়ে কথা বলে প্রতিপক্ষকে বেশ ভালোই ঘায়েল করতে সক্ষম হয়েছেন। আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে তরী ভেড়ানো ছাত্রলীগের সেসব নেতা সম্পর্কে আসুন জেনে নেই।
বিজ্ঞাপন
শাহজাহান সিরাজ
১৯৪৩ সালের ১ মার্চ জন্ম নেওয়া তুখোড় রাজনীতিবিদ শাহজাহান সিরাজ মারা গেছেন ২০২০ সালের ১৪ জুলাই। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক তিনি। সে সময় তিনি অন্যতম ছাত্রনেতাও ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের ‘চার খলিফা’ বলা হতো শাহজাহান সিরাজ ছিলেন তাদের অন্যতম। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক, আব্দুর রাজ্জাক, কাজী আরেফ আহমেদ, তোফায়েল আহমেদ, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রবদের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনে তার বেশ ভূমিকা ছিল।
১৯৭১ সালের ২ মার্চ পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধুর সামনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন শাহজাহান সিরাজ। সশস্ত্র যুদ্ধ চলাকালে ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স’ (বিএলএফ) বা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন প্রয়াত এই রাজনীতিবিদ।
একজন সক্রিয় ছাত্রনেতা হিসেবে শাহজাহান সিরাজ ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। এরপর ১৯৭০-৭২ মেয়াদে অবিভক্ত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠনে ভূমিকা পালন করেন তিনি। জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সহকারী সাধারণ সম্পাদক হন শাহজাহান সিরাজ। পরবর্তীতে জাসদের সভাপতি নির্বাচিত হন। জাসদের মনোনয়নে টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রয়াত এই রাজনীতিক।
১৯৯৫ সালে জাসদ (সিরাজ) বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দেন শাহজাহান সিরাজ। তিনি বিএনপির মনোনয়নেও একবার একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর খালেদা জিয়ার সরকারে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
শাহ মোয়াজ্জেম
বহু আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া প্রবীণ রাজনীতিক শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৫২ সালে নবম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে গুরুতর আহতাবস্থায় গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৫২ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তার ঠিকানা ছিল মূলত কারাগার। বন্ধু মহলে ‘কারাগারের পাখি’ বলে পরিচিত শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন জীবনে অন্তত ২০ বছর জেল খেটেছেন। ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন তখনকার পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও তিনবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
ছয় দফা ও ১১ দফার অন্যতম রূপকার শাহ মোয়াজ্জেম মহান মুক্তিযুদ্ধেরও অন্যতম সংগঠক। তিনি স্বাধীনতার স্বপক্ষে বিশ্বজনমত গঠনের জন্য ভারতীয় পার্লামেন্টে টানা আড়াই ঘণ্টা ভাষণ দেন। নিজ হাতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করা সে সময়ের জাতীয় নেতাদের মধ্যে অন্যতম শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রবীণ এই রাজনীতিক।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পার্লামেন্টে প্রথমবারের মতো চিফ হুইপ নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের পর দ্বিতীয়বারের মতো চিফ হুইপ নির্বাচিত হন তিনি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে আশির দশকে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব, এরশাদ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ উপনেতা ও উপ প্রধানমন্ত্রী হন। অবশ্য ১৯৯২ সালে জাতীয় পার্টি থেকে যোগ দেন বিএনপিতে। বর্তমানে তিনি দলটির ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। তবে বার্ধক্যজনিত সমস্যার কারণে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সেইভাবে তার সক্রিয়তা নেই।
কে এম ওবায়দুর রহমান
প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমান ছিলেন বিএনপির তৃতীয় মহাসচিব। ১৯৮৬-১৯৮৮ পর্যন্ত তিনি বিএনপির মহাসচিব ছিলেন। ওবায়দুর রহমান ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। ভাষা আন্দোলনেরও সক্রিয় কর্মী ওবায়দুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় একবার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও দুইবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬২-১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে তিনি আইয়ুব বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন, পরের বছর তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে গণঅভ্যুত্থানেও অংশ নেন। তিনি ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ১৯৬৬-১৯৭১ সালে সমাজকল্যাণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ফরিদপুর-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭৩-১৯৭৫ সালে ছিলেন ডাক ও তার প্রতিমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তিনি যোগ দেন খোন্দকার মোশতাক আহমেদের সরকারে। জেল হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন তিনি। অবশ্য ২০০৪ সালে জেল হত্যা মামলায় তিনি খালাস পান।
১৯৭৮ সালে তিনি বিএনপি যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি প্রথমে মৎস্য ও পশুপালন, পরে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। মাঝে এরশাদের দলে গেলেও ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর আবারও বিএনপিতে যোগ দেন।
১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে ফরিদপুর-২ আসনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আমৃত্যু বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তার মেয়ে শামা ওবায়েদ বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা এই নেত্রী দলের কূটনৈতিক সেক্টরেও কাজ করছেন।
সুলতান মনসুর
১৯৮৬ সালে ছাত্রলীগের নির্বাচিত সভাপতি হন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের ডাকসুতে নির্বাচিত হওয়া একমাত্র ভিপি। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনেও অগ্রণী ভূমিকা রাখেন তিনি।
১৯৯১ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসন থেকে তিনি নির্বাচন করে পরাজিত হন। পরে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের ভোটে ফের হেরে যান ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি।
২০০২ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় তাকে। কিন্তু ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিনের আমলে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ার মধ্যে পড়ে তিনি ছিটকে পড়েন মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দলটি থেকে।
পরে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েও পাননি। পরের বছর হারান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ। সেই থেকে রাজনীতির মাঠে সেইভাবে সক্রিয় নেই সুলতান মনসুর।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর বাহিনীর সদস্য ছিলেন। গত নির্বাচনে বিএনপি জোট থেকে মৌলভীবাজার-২ আসনে গণফোরামের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জয়ী হন এই নেতা।
অবশ্য ভোটে জিতে সংসদে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক বলেই সংসদে ঘোষণা দেন তিনি। মনেপ্রাণে আওয়ামী লীগকে ধারণ করা সুলতান মনসুর এখনো মুজিবকোট পরেই চলাফেরা করেন।
নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে এর আগে গণমাধ্যমকে সুলতান মনসুর বলেছেন, আওয়ামী লীগে পদ না থাকলেও আমি তো আওয়ামী লীগ ঘরানার লোকই। তবে আওয়ামী লীগে ফেরার বিষয়টি নির্ভর করছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ওপর।
অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান
অনলবর্ষী বক্তা হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের বেশ পরিচিতি আছে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সাবেক এই ছাত্রলীগ সভাপতি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দুঃসময়ে ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে চষে বেড়িয়েছেন সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তার হৃদয়গ্রাহী বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়ে অনেকে শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের পতাকাতলে ছুটে গেছেন।
পঁচাত্তরের পর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন ওবায়দুল কাদের ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বাহলুল মজনুন চুন্নু। এরপরে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসেন ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং খ ম জাহাঙ্গীর। তাদেরও দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান হয়নি। তবে ওই সময়ে ছাত্রলীগের একটি বিদ্রোহী কমিটি হয়। এ কমিটির সভাপতি ছিলেন ফজলুর রহমান।
'৮৬-এর নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে কিশোরগঞ্জ-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। '৯৬ সালের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বর্তমান রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেড় হাজার ভোটে হেরে যান। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগেরও সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন তিনি। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ের নামলেও জয়ের দেখা পাননি।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে যোগ দেন বিএনপিতে। নবম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে কিশোরগঞ্জ-৪ আসন থেকে ভোটে লড়াই করে হেরে যান।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন ফজলুর রহমান। বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব হিসেবে সক্রিয় আছেন তিনি।
হাবিবুর রহমান হাবিব
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের অন্যতম ছাত্রনেতা ছিলেন হাবিবুর রহমান হাবিব। কিন্তু এখন তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। রাগে ক্ষোভে '৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিতে তরী ভেড়ান। কিন্তু খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি তিনি।
হাবিব কাদের-চুন্নু কমিটি, ফজলু-চুন্নু কমিটিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। পরে মান্নান-নানক কমিটিতে তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সুলতান-রহমান কমিটিতে সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি হন।
'৯০-এ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর '৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে গিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। ওই বছর নৌকা প্রতীকে ভোট করলেও হেরে যান। পরে '৯৬ সালে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ওই বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছু দিন আগে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন।
২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-৪ আসন (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) থেকে ধানের শীষের মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন সাবেক এই ছাত্রনেতা। অবশ্য ২০০১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর চেয়ে বেশি ভোট পান তিনি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের থেকে মনোনয়ন পেলেও জিততে পারেননি তিনি। পরে ওই আসনে উপনির্বাচনেও তাকে প্রার্থী করেছিল বিএনপি।
মনিরুল হক চৌধুরী
১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্বে থাকা মনিরুল হক চৌধুরী অবশ্য জাতীয় পার্টি হয়ে যোগ দেন বিএনপিতে। বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠক। ১৯৮৮ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য হন। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। পরে ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে তিনি একই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে কুমিল্লা-১০ আসনের প্রার্থী হলেও জয়ী হতে পারেননি তিনি।
বিইউ/এমআর

