ছাত্র-জনতার দ্রোহের আগুনে পুড়ে আঙ্গার ফ্যাসিবাদের দোসর তকমা পাওয়া জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতা ব্যানারে একটি মিছিলে হামলাকে কেন্দ্রে করে ভাংচুর ও আগুনের ঘটনায় কংক্রিটের কংকালে পরিণত হয়েছে হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত দলটির অফিস। এদিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া জাপার অফিসে লুটপাটের মহোৎসব চালাচ্ছে স্থানীয় মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে ব্যক্তিরা।
শুক্রবার (০১ নভেম্বর) সরেজমিনে রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা যায়, নিচ তলার প্রায় প্রতি কক্ষ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সামনের দিকে থাকা কক্ষগুলোতে থাকা সকল আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুন ও ধোঁয়ায় কালো হয়ে গেছে কক্ষগুলোর ছাদ ও দেয়াল।
কার্যালয়ের সামনে থাকা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক স্বৈরশাসক হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের প্রতিকৃতি ও দলীয় মনোগ্রামও ভাংচুর করেছে বিক্ষোভকারীরা। তারা সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের মুখবয়ব নষ্ট করে দিয়েছে। পাশাপাশি ভবনের সামনে ও বিভিন্ন দেয়ালে ‘জাতীয় টয়লেট’, ‘টয়লেট’, ‘এখানে ময়লা ফেলুন’ ইত্যাদি স্লোগান লিখে দেওয়া হয়েছে।
হামলার পর থেকে কার্যালয়টির সকল মেইন গেটে তালা দেওয়া থাকায় ভেতরে প্রবেশ করা যায়নি। তবে কাঠের মই লাগিয়ে কিছু লোকজনকে ভবনের ভেতর চুরি করতে দেখা গেছে। তাদের জানালার গ্লাস্ট, এলুমিনিয়ামের পাত থেকে শুরুর টয়লেট পরিস্কারের ব্রাশ পর্যন্ত নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এদের বেশিরভাগই স্থানীয় মাদকসেবী ও ভবঘুরে বলে জানিয়েছে স্থানীয়।
বিজ্ঞাপন
এদিকে সকাল থেকেই নানা শ্রেণি পেশার মানুষ ও স্থানীয়দের কার্যালয়টির সামনে ভিড় করতে দেখা যায়। উৎসুক জনতাকে কার্যালয়ের বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষের সাথে ছবি তুলতেও দেখা যায়। তাদের অনেকেই জাতীয় পার্টিকে প্রতিবেশী দেশের ‘দালাল’ ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করেন। শেখ হাসিনার দীর্ঘ কর্তৃত্ববাদী শাসন ও সর্বশেষ ছাত্র-জনতার ওপর চালানো গণহত্যার জন্যেও দলটিকে দায়ী করেন অনেকে।
তবে সাধারণ জনতার বাইরে দলটির কোনো নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কার্যালয় এলাকায় অবস্থান করতে দেখা যায়নি।
অপপ্রচারের শিকার দাবি দলীয় প্রধানের
এদিকে ৩১ অক্টোবর দলীয় কার্যালয়ে হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছে দলটির প্রধান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। এতে তিনি তার দল অপপ্রচার ও অপবাদের শিকার বলে অভিযোগ করেন।
জিএম কাদের বলেন, একটি গোষ্ঠি অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে, আমরা আওয়ামী লীগের দোসর। কিন্তু এসবের অপবাদের সত্যতা নেই। এর পেছনে ষড়যন্ত্র চলছে, এসবের সঙ্গে কিছু বুদ্ধিজীবীও জড়িত।
তৎকালীন সরকার যেমন নির্বাচনে যেতে চাপের পাশাপাশি অন্যদিক থেকেও জোর করা হয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন থেকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সবাই আওয়ামী লীগকে বৈধতা দিয়েছিল। ২০১৪ ও ’২৪-এর নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে জোর করে নির্বাচন করতে বাধ্য করেছিল।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে এটি করা কেন অপরাধ হবে তাও জানতে চান জিএম কাদের।
এমএইচ/এএস