বেগম মতিয়া চৌধুরীর রাজনীতির শুরুটা বাম ধারা দিয়ে। ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের তুখোড় নেত্রী। সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। সরব ছিলেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমালোচনাও করতেন। পরবর্তী সময়ে সেই মতিয়া চৌধুরী হয়ে উঠেন আওয়ামী লীগের তুখোড় নেত্রী। দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন দীর্ঘদিন। দাপিয়ে বেড়িয়েছেন রাজপথ থেকে সংসদ সবখানে। নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ছয়বার।
টানা চার মেয়াদ ক্ষমতায় থাকার পর গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের আড়াই মাসের মধ্যেই চলে গেলেন দলটির সাহসী নেত্রী মতিয়া চৌধুরী। এর আগে আওয়ামী লীগ যতবার বিরোধী দলে ছিল, প্রতি বারই রাজপথে সরব ছিলেন মতিয়া। ‘অগ্নিকন্যা’ খেতাব পাওয়া এই নেত্রী দলের হয়ে লড়েছেন সবখানে। তবে বয়সের ভারে বিধ্বস্ত এই নেত্রী দলের সবচেয়ে বড় দুর্দিনে কোনোই ভূমিকা রাখতে পারেননি। সেই আক্ষেপ নিয়েই তাকে চলে যেতে হলো পরপারে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
জাতীয় সংসদের সাবেক উপনেতা, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বুধবার (১৬ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন।

মতিয়া চৌধুরীর জন্ম ১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুরে। তার বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা নুরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। ব্যক্তিজীবনে ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন খ্যাতিমান সাংবাদিক ও দৈনিক সংবাদের সাবেক সম্পাদক বজলুর রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
বিজ্ঞাপন
ইডেন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন মতিয়া। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে ‘অগ্নিকন্যা’ নামে পরিচিত মতিয়া পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং এর কার্যকরী কমিটির সদস্য হন। ১৯৭০ ও ১৯৭১ এর মাঝামাঝি সময়ে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, প্রচারণা, তদবির এবং আহতদের শুশ্রুষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন।
১৯৭৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক হন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়কালে তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হন।

১৯৯৬ ও ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সবশেষ তিনি আওয়ামী লীগের ১নং প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুর পর ১২ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন। পরে তিনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হলে পুনরায় সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পান।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে যারা নানা কারণে ব্যাপক আলোচিত ছিলেন তাদের একজন মতিয়া চৌধুরী। বিভিন্ন সময় তিনি জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে আলোচিত-সমালোচিত হন। দলের সুদিন-দুর্দিনে সবসময় সক্রিয় ছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে অপেক্ষাকৃত সৎ ছিলেন। তার চলাফেরা ছিল সাদাসিধে। এজন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন প্রিয়। দলের দুর্দিনে তার এই চলে যাওয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে আওয়ামী লীগ শিবিরে।
জেবি

