বিতর্কিত ও আলোচিত এস আলম গ্রুপের একটি গাড়িতে চড়ে সংবর্ধনা নেওয়ার ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি এটাকে ‘অসাবধনতা ও অনিচ্ছাকৃত’ উল্লেখ করে দেশবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) গুলশানে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে পুরো ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেন বিএনপির এই নেতা।
বিজ্ঞাপন
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘গাড়িসংক্রান্ত যে সংবাদটা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে জনমনে কিছু বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। তারপরেও একটি পুরাতন গাড়ি, সে আমার ছোট ভাই, নিয়ে গেছে, সে খুব আনন্দিত যে, আমি তার গাড়িতে আমি উঠেছি। এটা আমার পক্ষ থেকে যদি জানতাম যে, ওই কোম্পানির গাড়ি তাহলে হয়ত আমি সাবধনতা অবলম্বন করতাম।'
বিএনপি নেতা বলেন, ‘তারপরেও আমার এই অসাবধানতা এবং এই ইচ্ছাকৃত ভুলের জন্য যদি আমি দেশবাসীর মনে কষ্ট দিয়ে থাকি এবং অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে থাকি, সেজন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।'
ঘটনার পূর্বাপর তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘গতকালকে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে, আমি দীর্ঘ ১০ বছর পর আমার নিজ জেলা কক্সবাজারে অবতরণ করলে, সেখানে আমার দলের পক্ষ থেকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে আমি একটি গাড়ি ব্যবহার করেছি, যে গাড়ি একটি কোম্পানির, যা সংবাদে লেখা হয়েছে এস আলম কোম্পানির। আমি কোন গাড়িতে উঠেছি সেটা আমি নিজেও জানতাম না। এটা সেই দিন কক্সবাজার বিমানবন্দরে নামার পরে কিছু গাড়ি দেখেছি ভেতরে। তা আমাদের নেতাকর্মীরা বলল যে, এটাতে উঠেন। এই গাড়িতে আমি উঠেছি। তা এখন সেই গাড়িটি কার সেই মুহূর্তে আমি চিন্তা-ভাবনার মধ্যে ছিলাম না। আমি তখন অনেকটা আবেগাপ্লুত ছিলাম, আমার দেশবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছিলাম এবং মনের মধ্যে মা-বাবার কবর জিয়ারতের বাসনায় মগ্ন ছিলাম। তখন আমার মনের অবস্থা ছিল না যে, আমি কোন গাড়িতে, কার গাড়িতে উঠছি।’
সালাহউদ্দিন বলেন, 'সংবাদটি (গণমাধ্যম) প্রকাশ হওয়ার পরে আমি খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলাম। আমি জানতে পারলাম এই গাড়িটি আমার এলাকার এক ছোট ভাইয়ের, যে উক্ত কোম্পানিতে বিভিন্ন জমি-জমা দেখাশোনার কাজ করে এবং কোম্পানি থেকে তাকে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহারের জন্য এই গাড়িটি দেওয়া হয়। সেও অন্য সকলের মতো আমাকে বরণের জন্য এয়ারপোর্টে গেছে। তার গাড়িতে করেই গেছে। সেও জানতো না যে, আমি তার গাড়িতে উঠব। আমিও জানতাম না যে, আমি কার গাড়িতে উঠব। এটা জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ ঠিক করেছেন।'
চট্টগ্রামের এস আলমের মালিকানাধীন গাড়িতে চড়ে গত ২৮ আগস্ট নিজ এলাকায় গিয়ে সংবর্ধনা নিতে যান সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর দলের নেতা-কর্মীদের গাড়িবহরের সঙ্গে পেকুয়ায় পৌঁছান তিনি।

কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদের গাড়িবহর পেকুয়ায় পৌঁছানোর বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ রকম একটি ভিডিওতে দেখা যায়, যে গাড়িতে (জিপ) চড়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজার থেকে পেকুয়ায় আসেন, সেটির নম্বর চট্ট মেট্রো ঘ-১১-১৫৩৩। এটি মিতসুবিশির স্টেশন ওয়াগন ব্র্যান্ডের জিপ, যা এস আলম গ্রুপের। তিনি সামনে সিটে বসে হাত নেড়ে আশপাশের লোকজনকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
এস আলমের গাড়ির এই ঘটনায় কোনো ষড়যন্ত্র দেখছেন কি না প্রশ্ন করা হলে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টা আমি অন্যভাবে ব্যাখ্যা করতে চাই। আমাদের সবার উচিত পতিত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত সংবাদ প্রকাশ করা। যারা দীর্ঘ ১৫/১৭ বছরে দেশটাকে বিভিন্নভাবে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে, সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দেশের বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, শাসন বিভাগসহ এমনকি ফোর্থ স্টেট মিডিয়াসহ সর্বত্র যে বিভিন্ন পর্যায়ে পচন ধরেছে, ফ্যাসিবাদের যে স্বাক্ষর তারা এখানে রেখেছে, তাদের ফ্যাসিবাদী শাসন দীর্ঘায়িত করার জন্য সেই বিষয়ে আমাদের সোচ্চার হওয়া উচিত। আমাদের এখন অগ্রাধিকার সেটা।'
সালাউদ্দিন বলেন, 'আমরা যেন মনোযোগ দেই যেমন গুম, খুন, অপহরণের সাথে জড়িত ছিল, যারা আয়নাঘরের সাথে জড়িত ছিল, যারা ফ্যাসিবাদের শাসনব্যবস্থাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য বিভিন্ন স্তর থেকে সহযোগিতা করেছে, তাদের মুখোশ উন্মাচন করি। তাদের কেউ কেউ হয়ত গ্রেফতার হয়েছে, কিন্তু আমি যতটুকু জানি, তাদের যথাযথভাবে ইন্টারোগেশন করা হচ্ছে না। আজ পর্যন্ত কোনো গুমের রহস্য উন্মোচন করা যাচ্ছে না। দেশবাসীর আকাঙ্কা ছিল, আমরা যে গুম-খুনের আস্তানা খুঁজে বের করি, গুম-খুনের সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করি… তাদের মুখোশ উন্মোচন করি। বর্তমান যে অন্তর্বতীকালীন সরকার আছে তাদেরকে সহযোগিতা করি, তারা যেন জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার করতে পারে, সেজন্য তাদের সহযোগিতা করি।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘ব্যক্তিগত পর্যায়ে যা কিছু এগুলো পরিহার করলে আমরা মনে হয় ভালো হয়। তারপরও আমার অসাবধানতার জন্য আমি আবারও দুঃখ প্রকাশ করছি।'
বিইউ/জেবি

