গত প্রায় ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ায় তাদের স্মরণে দিনটি পালন করে আওয়ামী লীগ। তবে এবার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় সেভাবে আর দিনটি পালনের সুযোগ থাকছে না। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এদিনের সরকারি ছুটি বাতিল করেছে। এছাড়া দলের নেতাকর্মীরা প্রায় সবাই গা ঢাকা দিয়ে আছেন। এই অবস্থায় দলটির পক্ষে আগের মতো মহাসমারোহে দিবসটি পালনের সুযোগ নেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ এই দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে। তবে বিএনপি সরকার এসে ছুটি বাতিল করে দেয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে৷
বিজ্ঞাপন
গত টানা ১৫ বছর দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবেই পালিত হয়েছে। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আয়োজন থাকত। জনসমাগম হতো ধানমন্ডির ৩২ নম্বরেও। এছাড়া সারাদেশে সাংগঠনিকভাবে মহাসমারোহে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
প্রতি বছর ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনা নিজে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনে উপস্থিত হতেন। ভবনের সামনে আয়োজন করা হতো চিত্র প্রদর্শনী৷ যেখানে মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ছবি স্থান পেতো৷ আয়োজন করা হতো শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, রক্তদান কর্মসূচি৷ এবার এর কিছুই করা হয়নি।
প্রতি বছর আগস্টে বিশাল শোক র্যালিরও আয়োজন করা হতো। তবে এবার সেই র্যালি হয়নি। ইউনিয়ন/ইউনিট, ওয়ার্ড থেকে শুরু করে থানা ও জেলা পর্যায়েও গরিব মানুষের জন্য খাবারের আয়োজন থাকত প্রতি বছর। চলতি বছর এ ধরনের কোনো কর্মসূচি নেই।
বিজ্ঞাপন
প্রতি বছর ১৪ আগস্ট সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে মাইক বাজতে শুরু করত। এ সময় বাজানো হতো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা নানা গান। তবে এবার ১৫ আগস্টের আগের রাতে কোথাও মাইকের আওয়াজ শোনা যায়নি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গা ঢাকা দেন আওয়ামী লীগের নেতারা। অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অনেক নেতা দেশে থাকলেও তারা জনরোষ এবং গ্রেফতার আতঙ্কে প্রকাশ্যে আসছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫ আগস্ট ঘিরে তেমন কোনো কর্মসূচি নেই আওয়ামী লীগের। যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে, ১৫ আগস্ট দিনব্যাপী কর্মসূচি রয়েছে দলটির।
ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ১৫ আগস্ট সকাল ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি শ্রদ্ধা জানাবে আওয়ামী লীগ। সাড়ে আটটায় মিলাদ। সকাল ৯টায় শোক র্যালি হবে ধানমন্ডি ৩২ থেকে কলাবাগান পর্যন্ত। একই দিনে টুঙ্গিপাড়ায় শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন রাখা হয়েছে৷
এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়েও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজনের কথা বলা হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
তবে সাধারণত আওয়ামী লীগের দফতর থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ই-মেইলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি ই-মেইল যোগে পাঠানো হয়নি। এছাড়া আওয়ামী লীগের দফতর থেকেও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। ফলে বিজ্ঞপ্তিটি আওয়ামী লীগ পাঠিয়েছে, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়নি। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রায় সবার ফোন বন্ধ রয়েছে। ফলে তাদের কারও সঙ্গে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না।
এদিকে ১৫ আগস্ট কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। এদিন সকাল সাতটায় ধানমন্ডি ৩২-এ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে সংগঠনটি। সকাল সাড়ে সাতটায় ধানমন্ডি ৩২ থেকে কলাবাগান মাঠ পর্যন্ত শোক র্যালি করার কথা যুবলীগের। এরপর সকাল আটটায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদে স্মরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন যুবলীগের নেতাকর্মীরা৷
কেন্দ্রীয় বা আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কিছু না জানালেও যুবলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে এ বিষয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। গত সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় যুবলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে একটি শোকের পোস্টার প্রচার করা হয়৷ বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত পোস্টারটি ‘চল চল চল, ধানমন্ডি ৩২ এ চল’ লেখার মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে৷
ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্ট থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বর্তমান নেতাদের হদিস নেই। ফলে ১৫ আগস্ট তাদের দেখা যাবে, তা নিশ্চিত নয়। তবে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের অনেকেই ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আসতে পারেন বলে জানা গেছে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী শারমিন সুলতানা লিলি বর্তমানে যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। ১৫ আগস্ট তিনি তার কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সমবেত হবেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে।
আরও পড়ুন
মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি এবং সাধারণ সম্পাদক শবনব জাহান শিলা ৫ আগস্ট থেকে আত্মগোপনে। ১৫ তারিখ তাদের দেখা যাবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। তবে সংগঠনটির সাবেক ও বর্তমান অনেক নেত্রী এদিন বঙ্গবন্ধু ভবনে আসবেন বলে জানিয়েছেন বর্তমান একাধিক নেত্রী।
গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের কোনো কেন্দ্রীয় নেতাকেই রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। গত সোমবার কেবল বিবিসি বাংলাকে একটি সাক্ষাৎকার দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি বলেছেন, সংশ্লিষ্ট এলাকার নিরাপত্তার জন্য দলের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করি সেই অনুমতি দেওয়া হবে।
এর আগে রোববার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক ভিডিও বার্তায় শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে দলীয় নেতাকর্মীদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর অনুরোধ জানান।
কারই/জেবি

