টানা চার মেয়াদ ধরে ক্ষমতা ধরে রাখা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রতিশোধের রাজনীতি না করার বিষয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের যে নির্দেশনা দিয়েছেন তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
বিএনপির সঙ্গে অতীত যাবতীয় দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলতে আগ্রহ প্রকাশ করে জয় বলেছেন, ‘আসুন আমরা প্রতিশোধের রাজনীতিকে প্রশ্রয় না দেই। আমরা মিলেমিশে থাকতে চাই।’
বিজ্ঞাপন
রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনার ছেলে জয়।
জুলাইয়ের শুরুতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকলেও মাসটির মাঝামাঝি এসে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগের ব্যাপক সংঘর্ষ হলে বহু মানুষ প্রাণ হারায়। আহত হন কয়েক হাজার। এমন আন্দোলনের মধ্যে আগস্টের শুরুতে তা সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়।
বিজ্ঞাপন
গত ৫ আগস্ট আন্দোলকারীদের ঢাকামুখী লংমার্চের কর্মসূচি ছিল। ওই কর্মসূচিতে যোগ দেয় লাখ লাখ মানুষ। ছাত্র-জনতার কর্মসূচির মুখে এক পর্যায়ে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর আসার পরই সারাদেশে রাজপথে নেমে আসে মানুষ। সেদিন সারাদেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অফিস ও সরকারি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। ভাঙচুর-লুটপাটেরও ঘটনা ঘটে।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের দুইদিন পর ৭ আগস্ট ঢাকার নয়াপল্টনে সমাবেশ করে বিরোধীদল বিএনপি। সেই সমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
প্রতিশোধপরায়ণ না হয়ে সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে সেদিন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘ধ্বংস নয়, প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা নয়, ভালোবাসা শান্তি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলি।’
বিএনপি প্রধান আরও বলেছিলেন, ‘সকল ধর্ম গোত্রের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শান্তি প্রগতি সাম্যের ভিত্তিতে আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণ করি। ধ্বংস নয়, প্রতিশোধ নয়, প্রতিহিংসা নয়, ভালোবাসা, শান্তিভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলি।’
খালেদা জিয়ার নির্দেশনাকে সাধুবাদ জানিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক বক্তব্যে আমি খুবই খুশি। তিনি বলেছেন-যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। আমিও তা ই বলছি- আসুন, আমরা অতীতকে ভুলে সামনের দিকে অগ্রসর হই, প্রতিশোধের রাজনীতিকে প্রশ্রয় না দেই। আমরা মিলেমিশে থাকতে চাই।’
জয় আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে রাজনীতিতে আলাপ-আলোচনা খুবই জরুরি। আমরা তর্ক করতে পারি, কোনো ইস্যুতে আমরা একমত বা ভিন্নমত পোষণ করতে পারি এবং শেষ পর্যন্ত একটা সমঝোতায় যেতে পারি।’
শেখ হাসিনার ছেলে বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে চাই। আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্র এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারে।’
এমআর