দেশে লুটতন্ত্র ও মাফিয়া চক্র কায়েম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘লুটের চক্র, মাফিয়া চক্র কায়েম করেছে এই সরকার। আলী বাবা ৪০ চোরের গল্পকেও তাদের কাছে হার মানায়। অর্থনীতি বলে কোনো নীতি নেই, এই সরকারের আছে শুধু দুর্নীতি। এই সরকার জনগণের মঙ্গল দূরে থাক, দেশকে রক্ষা করতে পারবে না। জনগণের হাতে ভিক্ষার থালা ধরিয়ে দেবে।’
বুধবার (৩ জুলাই) বিকেলে যশোরে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে যশোরের ঐতিহাসিক টাউন হল মাঠে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞাপন
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম। সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘বাংলাদেশের মাফিয়ারা আজ পার্লামেন্টে, সেখানে কোনো রাজনীতিবিদ নেই। আছে চোর, ডাকাত মাফিয়া চক্র। এই মাফিয়া কীভাবে সৃষ্টি হলো? কারা মাফিয়াদের সৃষ্টি করল? এই মাফিয়া শুধু সাধারণ জায়গা না, প্রশাসনের মধ্যে মাফিয়া আছে। পত্র-পত্রিকায় বেনজীরের (সাবেক আইজিপি) সম্পদ দেখছেন না! কত বড় মাফিয়া হলে চাকরি জীবনে শত শত না হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছে?’ দেশে বেনজীর, আজিজ, মতিউর ঘরে ঘরে হাজার হাজার তৈরি হচ্ছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষ বাঁচকে কীভাবে? যারা কর্ম করে খায়, তাদের কর্মসংস্থান কোথায়? তাদের আয় বাড়ছে? তারা তো সরকারি চাকরি করে না। সরকারি চাকরিজীবীদের আয় বাড়ছে। সরকারের চাকরিজীবীরা জনগণের সেবক। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তাদের বেতন ভাতা হয়। কিন্তু আজ চাকরিজীবী দেশের মালিক, আর জনগণ সবচেয়ে অসহায়।’
বিএনপি নেতাকর্মীরা মামলা হামলায় কখনো কাবু হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেই দলকে দাবিয়ে রাখতে পারবেন না। কারণ বিএনপি জনগণের দল, এই দল দেশ ও জনগণের কথা বলে। এই স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন, মানবাধিকারের কথা বলে। সেই দল নাম নিশানা মুছে ফেলা সম্ভব না।’
বিজ্ঞাপন
গয়েশ্বর বলেন, ‘পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এই দেশকে আরেকটি দেশ (ভারত) তাদের স্বার্থে ব্যবহার করবে, আমরা বসে আঙ্গুল চুষব না, এত সহজ না।’
খালেদা জিয়ার অপর নাম গণতন্ত্র দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘তাই খালেদা জিয়ার মুক্তি হলে, গণতন্ত্র ও জনগণের মুক্তি হবে। খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে ভারতের সাথে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছিন্ন হবে।’
সীমান্তে হত্যা প্রসঙ্গে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে অস্ত্র কেনা হয়। সেই অস্ত্র দিয়ে যদি নিজের দেশকে রক্ষা করতে না পারি, তাহলে টাকা দিয়ে অস্ত্র কেনবো কেন? কী কারণে আজ মিয়ানমার লাফালাফি করছে? কই শহীদ জিয়াউর রহমান কিংবা খালেদা জিয়ার সময়তো লাফালাফি করতে পারেনি।’
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাবিরা নাজমুল মুন্নী, আবুল হোসেন আজাদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মো. ইসহক, আবদুস সালাম আজাদ, মিজানুর রহমান খান, বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাই মনা, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, অভয়নগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফারাজি মতিয়ার রহমান, মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন, ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোর্তজা এলাহি টিপু, শার্শা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান জহির, জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, জেলা মহিলা দলের সভাপতি রাশিদা রহমান, জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন টেনিয়া, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রবিউল ইসলাম, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর প্রমুখ।
প্রতিনিধি/জেবি