রোববার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে যেসব চুক্তি হয়েছে তাতে দেশের স্বার্থ নেই’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১২:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে যেসব চুক্তি হয়েছে তাতে দেশের স্বার্থ নেই’

প্রধানমন্ত্রীর সম্প্রতি ভারত সফরে যেসব চুক্তি হয়েছে তাতে দেশের স্বার্থ নেই এমন দাবি করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, বর্তমান সরকারের সৃষ্ট নানাবিধ সংকটের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ ভারত সফর সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে। যে চুক্তিগুলো করা হয়েছে, তাতে কোনো আওয়ামী লীগারও বাংলাদেশের স্বার্থ দেখাতে পারছে না।

বুধবার (৩ জুলাই) ‘জাতীয় সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে লিখিত বক্তব্যে চরমোনাই পীর শুরুতেই ভারতের সঙ্গে হওয়া সমঝোতা স্মারক নিয়ে কথা বলেন।

চরমোনাই পীর বলেন, ভারতের সঙ্গে কানেক্টিভিটির নামে যা করা হয়েছে, তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায় পরিস্কার হয়েছে; ‘বাজার-টাজার করতে যাওয়া ও ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া’ এর মূল লক্ষ্য। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের স্বকীয়তাবোধ আছে এমন কারো পক্ষে ‘বাজার-টাজার করতে যাওয়া ও চিকিৎসা নিতে যাওয়া’র জন্য অন্য দেশের সাথে চুক্তি করা সম্ভব না। কারণ, এতে যে দেশের চিকিৎসা খাত, পর্যটন খাত, অভ্যন্তরীণ ব্যবসা খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা সহজেই অনুমেয়। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই কথার সাথে যখন প্রধানমন্ত্রী সীমানা বিহীন ইউরোপের দৃষ্টান্ত দেখান তখন সীমানা ও স্বাধীনতা নিয়ে আমরা শঙ্কিত না হয়ে পারি না। 

আরও পড়ুন

জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে ছাগলকাণ্ড: ফারুক

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎখাতের পরিকল্পনাহীনতা, স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও খামখেয়ালিপনা সর্বশেষ দেখা গেলো নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার চুক্তি থেকে। ভারতের গ্রিড ব্যবহার, ভারতকে দুই ধরণের মাসুল দিয়ে আনা এই বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ খাতকে অনিরাপদ ও ভারতনির্ভর করবে। কম দামের যুক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে, অথচ সবার আপত্তি উপেক্ষা করে দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিলো। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের নামে যে যুক্তিতে, যেভাবে ও যে পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয় তাকে মগের মুল্লুকি ছাড়া আর কিছু বলার নাই। 


বিজ্ঞাপন


চরমোনাই পীর বলেন, এ সময়ে এসে ট্রানজিট আদতে কোনো রাজনৈতিক ইস্যুই হওয়ার কথা না। কারণ সারাবিশ্বেই উইন-উইন সিচুয়েশনে এটা হচ্ছে। কিন্তু এই সরকার ভারতকে রেল ট্রানজিট দিয়েছে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার পেছনে ভারতের অবদানের প্রতিদান হিসেবে। সেজন্য ট্রানজিট দেওয়ার বিনিময়ে তিনি কোনো কিছু আদায় করতে পারেননি। বরং বলতে গেলে বিনা শর্তে এমনকি প্রায় বিনা মাসুলে ট্রানজিট দেন। এ ধরণের ও চরিত্রের ট্রানজিট প্রদান আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলে। নিজেদের সার্বভৌমত্বের ওপরে থাকা অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। 

ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর বলেন, নেপাল-ভুটানের সাথে আমাদের বহুল কাঙ্খিত ট্রানজিট না পাওয়া, তিস্তা, গঙ্গার পানি নিয়ে কোনো অগ্রগতি না হওয়া, সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধ না হওয়া, সেভেন সিস্টারে আমাদের বাণিজ্য সম্ভবনা নষ্ট করা এবং নিজেদের নিরাপত্তা ঝুঁকি, কৌশলগত ভূরাজনীতির নানা জটিলতা সত্যেও যেভাবে ট্রানজিট দেওয়া হয়েছে তাতে বাংলাদেশের স্বাধীন সত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, ভারত সরকার আন্তর্জাতিক চুক্তির ক্ষেত্রে পশ্চিমবাংলাকেও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি বিবেচনায় রাখে। বর্তমান সরকার স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবাংলার চেয়েও গুরুত্বহীন করে ফেলেছে।

আরও পড়ুন

‘ভোট চোর ও সম্পদ লুণ্ঠনকারীদের বাজেটের নৈতিক বৈধতা নেই’

অথচ দেশের প্রতি দরদ থাকলে প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে পানি, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্য ঘাটতি, রোহিঙ্গা ইস্যুর মতো রাজনীতি নিরপেক্ষ ইস্যুগুলো নিয়ে বার্গেইনিং করতে পারতেন।

তিনি আরও বলেন, পানি বন্টন নিয়ে যে যৌথ কমিটি করা হয়েছে তা নিছক সস্তা ও বহুল ব্যবহৃত একটি আইওয়াশ। গঙ্গা, তিস্তা, সিলেটের উজানের নদীসহ ভারত হয়ে প্রবেশ করা সবগুলো নদী থেকে ভারত আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি উপেক্ষা করে একতরফা পানি প্রত্যাহার করছে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে রূপ নিয়েছে। আর সিলেট অঞ্চল বন্যার নগরীতে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে কার্যকর কোনো কিছু না করে যৌথ কারিগরি কমিটি করা নিম্নস্তরের তামাশা ছাড়া আর কিছু না।

তিনি বলেন, তিস্তা প্রকল্প ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার পাঁয়তারা করা হয়েছে। যে ভারতের স্বৈরাচারী পানি নীতির কারণে আজকে তিস্তার এই অবস্থা সেই প্রকল্প ভারতের হাতে তুলে দেওয়া 'শিয়ালকে মুর্গির খামার ইজারা দেওয়া'র মতো। চতুর শিয়ালের মতো ভারতও তার অপকর্মের রাস্তা খোলা রেখেই তিস্তা প্রকল্প নির্মাণ করবে।

চরমোনাই পীর বলেন, বাংলাদেশ বরাবরই বিশ্ব মোড়লদের জিওপলিটিক্সের বাইরে নিরাপদ অবস্থান নিয়ে এসেছে। এখন ইন্দো-প্যাসিফিক ইনিশিয়েটিভে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ দেশকে বিপদজনক জিওপলিটিক্যাল রাজনীতিতে ফেলে দিতে পারে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ইউপিআই চালুর মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার পাঁয়তারা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

দেশকে পরনির্ভরশীল করে তুলতে সরকার চক্রান্ত করছে: মির্জা ফখরুল

তিনি বলেন, চোরের খনি নিয়ে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশে দুর্নীতি সর্বদাই ইঁদুর হয়ে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির ক্ষতি করেছে। কিন্তু এ সরকার দুর্নীতিকে যেভাবে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, রাজনীতিকীকরণ করেছে তা কল্পনাতীত। একটা জুলুমবাজ রেজিম তার রেজিম টিকিয়ে রাখার শর্তে পুলিশ প্রধান, সেনা প্রধানসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তাদেরকে দুর্নীতি করার দায়মুক্ত সুযোগ দিয়েছে। এমন ঘটনা কোনো সভ্য রাষ্ট্রের সভ্য মানুষের পক্ষে সম্ভব না। 

চরমোনাই পীর আরও বলেন, শিক্ষা সিলেবাস ও পাঠপুস্তক নিয়ে অনেক কথা আমরা বারংবার বলেছি। জাতিকে নির্লজ্জ, অদক্ষ ও ভুল ইতিহাসে দীক্ষিত করার যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, শিক্ষা সিলেবাস ও পাঠ্যপুস্তকে তা শিউরে ওঠার মতো।

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অথচ সবাই জানি, এর পেছনে প্রধান কারণ সরকার দলীয়দের সিন্ডিকেট। সরকার তার মাস্তান বাহিনী পোষার জন্য সিন্ডিকেট রক্ষা করে জনতার রক্ত চুষে নিচ্ছে। ব্যাংক খাত, আর্থিক খাত ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে যে ছলচাতুরী এই সরকার করে যাচ্ছে, তা বলার ভাষা আমাদের নাই। মিথ্যাকে এভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে বলা যায়, তা এই সরকারকে না দেখলে বিশ্বাস করা যেতো না। 

গত সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, বিগত ৩টি জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা কিভাবে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করেছে, আমরা সবাই তা জানি। তারা দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকেই শুধু ধ্বংস করেনি বরং দেশের নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিকেই ধ্বংস করে ফেলেছে। যে কারণে দেশের জাতীয় সংসদে পরপর ৩ মেয়াদে কোনো বিরোধী দল নেই। এই নির্মম ও কঠিন বাস্তবতাকে সামনে রেখে আমাদের চুপ থাকার সুযোগ নেই। আমরা সবাই পরিস্থিতি জানি। এই সরকার ফেরাউনি স্টাইলে যে নির্যাতন নিপীড়ন করে তার শিকার আমরা কম-বেশি সবাই। তারপরেও প্রিয় স্বদেশ যখন তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্নের মুখে, তখন রুখে দাড়ানো আমাদের সকলের সমান দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে কিভাবে কাজ করা যায়, কিভাবে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশদ্রোহী জালিম এই স্বৈরাচারকে উৎখাত করা যায়, তা নিয়ে পরামর্শ করার জন্যই আজকের এই আয়োজন।

আপনাদের উপস্থিতি আমাদেরকে আশান্বিত করেছে। আমাদেরকে উদ্দিপ্ত করেছে। মহান আল্লাহর বিধান এবং আমাদের ইতিহাস বলে, আমরা যখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোন জালিমের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছি, বিজয় আমাদেরই হয়েছে। 

বিইউ/এমএইচএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর