বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

কারা থাকছেন জাফরুল্লাহ-নুরের ‘নতুন জোটে’

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২২, ১২:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

কারা থাকছেন জাফরুল্লাহ-নুরের ‘নতুন জোটে’

বেশ কিছুদিন ধরেই রাজনীতির মাঠে একটি নতুন জোটের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ভাসানী অনুসারী পরিষদ, নুরুল হক নুর ও ড. রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি দল মিলে এ জোট হতে পারে বলে জানা গেছে। প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সভা সেমিনারে নেতাকর্মীদের বক্তব্যে তা অনেকটাই ফুঁটে উঠেছে। এরই মধ্যে এ উপলক্ষ্যে একধিক বৈঠকও হয়েছে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ গত ১০ মে এ বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে সাতটি দলের শীর্ষ নেতারা অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া দলগুলো হচ্ছে— গণ অধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।


বিজ্ঞাপন


এই জোটে শুধুমাত্র সাতটি দল নাকি আরও কোনো দল শরিক হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। তবে এই সাত দলের সবাই এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়া এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করার বিষয়ে বৈঠকে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। এ অবস্থা বজায় রেখে সমমনা সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।

জানা গেছে, বৈঠকে অংশগ্রহণকারী নেতারা নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সরকার, কর্মসূচিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তবে এই প্রক্রিয়াকে তারা রাজনৈতিক জোট হিসেবে বিবেচনা না করে রাজনৈতিক মঞ্চ বা যৌথ আন্দোলন হিসেবে দেখছেন। 

এ বিষয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর ঢাকা মেইলকে বলেন, এটি মূলত নির্বচন কেন্দ্রিক কোনো জোট না। এটি হচ্ছে একটি যৌথ আন্দোলন। আমরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেব না। যারা এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত এবং যারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চান তারাই তাদের জোটে যোগ দিতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি এধরনের বেশ কয়েকটি দল মিলে একটা জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। প্রাথমিক আমাদের কিছু কাজ হয়েছে এবং সেখানে সবাই একমত যে, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেব না। এখন কথা হচ্ছে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়া এবং একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য যারা একমত তাদের নিয়ে আমরা বৃহত্তর মঞ্চ গঠনের জন্য কাজ করবো। সেখানে শুধু এই কয়েকটি দল না, সবার জন্যই দরজা খোলা থাকবে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে, গণতান্ত্রিক রীতি-নীতিতে বিশ্বাস করে এবং আগামীতে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে চায়, তাদের সাথেই আমাদের ঐক্য হবে।’


বিজ্ঞাপন


নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য সংগঠিত হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়া। এ বিষয়ে আমরা সবাই একমত। এখন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করা হবে। এই জোট কতদূর যাবে তা সময় হলে দেখা যাবে। 

এদিকে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে দুই বছরের জন্য ‘জাতীয় সরকারের ফর্মুলা’ উপস্থাপন করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি প্রস্তাব করেন, গণভোটে নির্বাচিত হবে জাতীয় সরকার। দুই বছর মেয়াদের জন্য গঠিত হওয়া এই সরকার হবে সর্বদলীয় এবং সর্বজন স্বীকৃত জাতীয় সরকার। এর সদস্য এবং বিভিন্ন কমিশনের চেয়ারম্যানেরা ২০২৮ সাল পর্যন্ত কোনও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তাদের সকল আর্থিক তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে।

গত রোববার রাতে ‘জাতির সংকট নিরসনে জাতীয় সরকার’ শীর্ষক এক দীর্ঘ লেখায় ডা. জাফরুল্লাহ কিছু নাম প্রস্তাব করেন।  ‘জাতীয় সরকারের ফর্মুলা’ রাষ্ট্রপতি হিসেবে অধ্যাপক রেহমান সোবহান কিংবা ড. কামাল হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নাম প্রস্তাব করেছেন তিনি।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জনসংযোগ, স্বরাষ্ট্র ও জন প্রশাসন দায়িত্বে প্রস্তাবিত প্রধানমন্ত্রী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস; দুর্নীতি দমনে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও শহীদদের তালিকা প্রণয়ণে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, জবাবদিহিতামূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভুইয়া প্রতিরক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি উল্লেখ করেন, আইন, সংসদ ও সংবিধান সংস্কারে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, মানবাধিকার ও আইন কমিশনে অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অর্থ ও দরিদ্রতা নিরসনে অর্থনীতিবিদ ড. বিনায়ক সেন, ব্যাংক ও মানি লন্ডারিং নিয়ন্ত্রণে ড. সালেহ উদ্দিন আহমদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে এস এম আকরাম, সংখ্যালঘুর দায়িত্বে অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত দায়িত্বে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য থাকবেন।

একদিকে ‘জাতীয় সরকারের ফর্মুলা’ অপরদিকে নতুন জোট বা যৌথ আন্দোলন প্রক্রিয়া, এই দুই বিষয়ের প্রধান ভূমিকায় রয়েছেন  ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। শেষপর্যন্ত তাদের রাজনীতি কোন দিকে গড়ায় সেটাই এখন দেখার বিষয়। 

টিএই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর