শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

কুমিল্লায় নৌকার মাঝি কে এই রিফাত?

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২২, ০৮:৩১ পিএম

শেয়ার করুন:

কুমিল্লায় নৌকার মাঝি কে এই রিফাত?
ইরফানুল হক রিফাত। ছবি: ঢাকা মেইল

আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির হয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইরফানুল হক রিফাত। দলের পক্ষ থেকে ১৪ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও দল তাঁকেই বেছে নিয়েছে। অবশ্য তৃণমূল আওয়ামী লীগ থেকেও তাঁর নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল।

শুক্রবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় রিফাতের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


বিজ্ঞাপন


এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন ১৪ জন। এর মধ্যে রয়েছেন গতবার নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হওয়া আন্জুম সুলতানা সীমাও। তবে তিনি বর্তমানে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৩ এপ্রিল কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় আরফানুল হক রিফাতকে দলের একক প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রে প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ এবং আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে আরফানুল হক রিফাতের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

সূত্রে জানা গেছে, দলের জন্য ত্যাগের কারণেই মূলত রিফাতকে বাছাই করা হয়েছে। তিনি ভিক্টোরিয়া কলেজে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে কুমিল্লার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। রাজনীতি করতে গিয়ে বারবার মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর কুমিল্লা টাউনহল মাঠে বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাকের জনসভা পণ্ড করার অপরাধে সামরিক আইনে তিন বছরের সাজা হয়েছিল তাঁর। ভিক্টোরিয়া কলেজে ছাত্রলীগ করার সময় জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা তার হাত-পায়ের রগ কেটে গুরুতর আহত করে। পরে তিনি সিঙ্গাপুরে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন।

রিফাত কুমিল্লা জেলা যুবলীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য। কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি ক্রীড়াবিদও। কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি ও জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।


বিজ্ঞাপন


league2

২০১১ সালে সিটি করপোরেশন হওয়ার পর কুমিল্লায় প্রথম ভোট হয় ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি। সেই নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনে দলটির নেতা কাজী মনিরুল হক সাক্কু আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আফজল খানকে ৩৫ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। পাঁচ বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় নির্বাচনে ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে সাক্কুর কাছে পরাজিত হন আফজলের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা।

কুমিল্লা মহানগরীর রাজনীতিতে দুটি ধারা স্পষ্ট। একটির নেতৃত্বে ছিলেন আফজল খান এবং অপরটির নেতৃত্বে আ ক ম বাহাউদ্দিন। গত দুটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পেছনে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে দলীয় এই বিরোধ। তবে প্রবীণ নেতা আফজল খান ইতোমধ্যে ইন্তেকাল করেছেন। তার মেয়ে সীমা এখন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য। আর আ ক ম বাহাউদ্দিন কুমিল্লা সদরের সংসদ সদস্য। সে হিসেবে বাহাউদ্দিন গ্রুপ সক্রিয় থাকলেও প্রভাব কমেছে আফজল গ্রুপের। নৌকার টিকিট পাওয়া রিফাত বাহাউদ্দিন গ্রুপের লোক হিসেবে পরিচিত।  

এদিকে প্রায় ১৮ বছর ধরে কুমিল্লার নগরপিতা হিসেবে রয়েছেন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। ২০০৫ সালে তিনি পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর থেকে তিনিই নগর পিতা। যদিও এবার বিএনপি দলীয়ভাবে এই নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া সাক্কুও ইতোমধ্যে বিএনপি থেকে অনেকটা ছিটকে পড়েছেন। দায়িত্বে অবহেলার কারণে হারিয়েছেন দলীয় পদ। সাক্কুসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্রভাবে ভোটের মাঠে রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত কে হচ্ছেন কুমিল্লার নগরপিতা সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১৫ জুন পর্যন্ত।

প্রতিনিধি/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর