সরকারকে স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেছেন, বুকের বল দিয়ে সরকারের সব অস্ত্র-গুলি পরাভূত করবে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে দলটি। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান।
বিজ্ঞাপন
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মঈন খান বলেন, ‘আমাদের বুকে বল আছে। সেই বল দিয়ে স্বৈরাচার সরকারের সকল অস্ত্র, গুলিকে আন্দোলনের মাধ্যমে পরাভূত করব।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যে গণতন্ত্র দিয়েছিলেন সেটি আজ মৃত। তিনি যে গণতন্ত্র দিয়েছিলেন সেটি আমরা এ দেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করব ইনশাআল্লাহ।’
মঈন খান বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে যখন বাংলাদেশের ৭ কোটি মানুষের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তখন জিয়াউর রহমান এই হানাদার বাহিনীর হামলার প্রতিরোধ করেছিলেন। সেদিনতো বর্তমান সরকারের কোন ব্যক্তি প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করেনি। তারাতো পালিয়ে গিয়েছিল পার্শ্ববর্তী দেশে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনাদের প্রত্যেককে জিয়াউর রহমানের আদর্শ বুকে লালন করতে হবে, তবেই আমরা মানুষের সব অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারব। পৃথিবীতে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সহজ নয়। এজন্য আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। একজন স্বৈরাচার সরকারের সকল অস্ত্র, গুলিকে আন্দোলন করে পরাভূত করব, আমাদের বুকে বল আছে।’
৭ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘এ দেশের মানুষ ৭ জানুয়ারি তাদের ভোট না দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের মুখে কলঙ্ক লেপে দিয়েছে। বিশ্ববাসী এ সরকারের নির্বাচনকে নাটক ও প্রহসন বলেছে।’
‘আমরা মানুষের সেবা করার জন্য রাজনীতিতে নেমেছি। এ দেশের মানুষকে আমরা বলেছি ক্ষমতার জন্য আমরা রাজনীতি করতে আসিনি। মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য রাজনীতি করি। বিএনপি লগি-বৈঠার রাজনীতি করে না। বিএনপি ভদ্র মানুষের দল। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা নিরস্ত্র মানুষদের নিয়ে এ দেশের সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব ইনশাআল্লাহ।-বলেন মঈন খান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, জিয়ার আদর্শ ও স্মৃতি কখনো নষ্ট হয়ে যাবে না। কারণ এ দেশের মানুষের মাঝে তিনি আছেন। গণতন্ত্র হত্যার করে বর্তমান সরকার বাকশাল কায়েম করেছিল, সেটাকে কবর দিয়ে জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্র করেছিলেন। আবার যখন স্বৈরাচার এরশাদ গণতন্ত্র হত্যা করে ঠিক তখনি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া তার পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
‘এখন সরকারের যারা আছেন তারা জিয়াউর রহমানের কথা শুনতেই পারে না। কারণ যেখানে তারা ব্যর্থ হয়েছে সেখানেই জিয়াউর রহমান সফল হয়েছিলেন। দুর্ভিক্ষের পরও তার সময় খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছিল। চিনি, শিল্প সব খাতে রফতানি করেছিলেন। জিয়ার আমলেই শ্রমিক পাঠিয়ে লাখ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসা শুরু হয়।’-বলেন নজরুল ইসলাম।
খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দেওয়ায় সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা যারা পাচার করেছে তারা আজ জামিন পায়, বিদেশে চিকিৎসা পায়। অথচ যিনি এ দেশের জন্য এতো কিছু করলেন সেই বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় রায় দিয়ে মুক্তি দিচ্ছে না। তার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে দিচ্ছে না। এই দেশের জন্য কী আমরা যুদ্ধ করেছিলাম? একজনের মা মারা গেলে তাকে ডান্ডাবেরি পরিয়ে আনা হয়। আমরা একটি বাকশাল বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যাচ্ছি, আমরা যদি আন্দোলনের মাঠে না থাকতাম তবে আন্দোলন চলত না। এই আন্দোলনের ময়দান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের লড়াইয়ের ময়দান। এই ময়দানে জয় অবশ্যম্ভাবী। জয় আমাদের আসবেই ইনশাআল্লাহ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, শত অত্যাচারের মধ্যে যারা এখনো আছেন তারাই জিয়ার আদর্শের সৈনিক। তাদেরকে কেউ থামাতে পারেনি। এই সরকার জিয়া পরিবারকে ভয় পায়, বিএনপিকে ভয় পায়। কোনভাবেই আমাদেরকে ভাঙতে পারেনি। পারবে না। এই সরকার ভুয়া। এ পার্লামেন্টে সাড়ে ৬ শ এর বেশি সংসদ সদস্য। তাহলে ভাবেন, কোথায় আমাদের স্বাধীনতা, কোথায় আমাদের মুক্তি?
অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, জিয়াউর রহমান দেশকে বিভাজন থেকে টিকিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। আমাদের হতাশ হওয়ায় কিছু নেই। এত কিছু করার পরও আমাদেরকে ভাঙতে পারেনি সরকার। এই জালিম সরকারকে পরাজিত করে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করা হবে ইনশাআল্লাহ। অচিরেই এই সরকারের পতন হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের মানুষকে আশার আলো দেখিয়েছিলেন একজন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। যদি দেশ স্বাধীনতা না পেত তবে তার ফাঁসি হতো। স্বাধীনতার পরও কোন জাতীয়তা ছিল না। কেউ আমাদেরকে নানা জাতি ভাবতো। আর তিনি তখন জাতিসত্তার জন্য জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত দল আজ দেশের কথা বলে, স্বাধীনতার কথা বলে।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, জয়নুল আবেদীন ফারুক, তাইফুল ইসলাম টিপু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, মৎস্যজীবী দলের নেতা আব্দুর রহিম, আবুল কালাম আজাদ, ভিপি সেলিম, নাজমুল হাসান, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
বিইউ/এমআর

