নির্বাচনী প্রচারের ধারাবাহিকতায় এবার ফরিদপুরে জনসভা করলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় জেলা ও কেন্দ্রের অনেক নেতা উপস্থিত থাকলেও যার থাকা অনেকটা অনিবার্য ছিল সেই কাজী জাফর উল্যাহ ছিলেন না। তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এবং ফরিদপুর-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী।
দলীয় প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট এই নেতাকে প্রকাশ্যেই খোঁজেন দলীয় ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। গুরুত্বপূর্ণ এই জনসভায় কাজী জাফর উল্যাহর অনুপস্থিতি নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
বিজ্ঞাপন
জনসভা মঞ্চে সরকারের বিগত দিনের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্য শেষে একে একে পরিচয় করিয়ে দেন ফরিদপুরের চারটি আসনের প্রার্থীদের। ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, ফরিদপুর-২ আসনে সাজেদা চৌধুরীর ছেলে শাহদাব আকবার লাবু, ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে শামীম হককে পরিচয় করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। পরে তিনি ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন) আসনে নৌকার প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহর নাম ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি তাকে খোঁজেন। পাশের নেতাদের জিজ্ঞেস করেন, জাফর উল্যাহ আসেনি!
পরে প্রধানমন্ত্রী অন্য প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। এর মধ্যে বিশেষভাবে মাগুরা-১ আসনে নৌকার প্রার্থী তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে পরিচয় করান। এছাড়া এদিন রাজবাড়ী ১ ও ২ আসনের নৌকার প্রার্থী কেরামত কাজী ও জিল্লুল হাকিমকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে সবাইকে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
বিজ্ঞাপন
কাজী জাফর উল্যাহ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তবে গত দুটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের কাছে পরাজিত হন। এবারের নির্বাচনে যুবলীগ নেতা নিক্সন চৌধুরীও নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। গুঞ্জন ছিল, এবার আলোচিত এই আসনে নৌকা প্রতীক পেতে পারেন নিক্সন চৌধুরী। আর জাফর উল্যাহকে ঢাকার কোনো আসনে আনা হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত জাফর উল্যাহর হাতেই উঠে নৌকা। এমনকি এবার কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানও করা হয় তাকে, যার সভাপতি শেখ হাসিনা।
ফরিদপুর-৪ আসনের দুইবারের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য। তার দাদি ও নানি বঙ্গবন্ধুর আপন দুই বোন। সে হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ফুফু। নিক্সন চৌধুরীর বড় ভাই জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটন মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনের দীর্ঘদিনের সংসদ সদস্য। তার বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীও সাবেক সংসদ সদস্য এবং বঙ্গবন্ধুর ভাগিনা ছিলেন।
নির্বাচনী মাঠে কাজী জাফর উল্যাহ ও নিক্সন চৌধুরীর মধ্যে বাগযুদ্ধ চলছে গত কয়েক দিন ধরে। নিক্সন চৌধুরীর দাবি, জাফর উল্যাহকে নৌকা প্রতীক দিলেও নৌকার বৈঠাটি প্রধানমন্ত্রী তাকে দিয়েছেন। অপরদিকে জাফর উল্যাহও নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে অনবরত বক্তব্য দিচ্ছেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়েছে। এছাড়া তিনি সম্প্রতি ফরিদপুরের পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধেও বক্তব্য দেন।
এদিকে মঙ্গলবারের গুরুত্বপূর্ণ জনসভায় কাজী জাফর উল্যাহর অনুপস্থিতি নজর কেড়েছে অনেকের। কেউ কেউ বলছেন, অনেকটা অভিমান করে জাফর উল্যাহ জনসভা মঞ্চে আসেননি। আবার কেউ কেউ বলছেন, তিনি অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি। এ ব্যাপারে জনসভার আয়োজকদের কেউই স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না।
বিষয়টি জানতে জাফর উল্যাহর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের জন্য বারবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
কারই/জেবি