শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ঢাকা

অসহযোগের ডাকে সাড়া নেই, কী করবে বিএনপি?

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

অসহযোগের ডাকে সাড়া নেই, কী করবে বিএনপি?
  • অসহযোগের মধ্যেও সবকিছু স্বাভাবিক
  • আন্দোলনের ফল নিয়ে মাঠপর্যায়ে সংশয়
  • ভোটের চেয়ে ভোটার ঠেকানোতে জোর
  • ভোটের আগের সপ্তাহে শক্তি দেখানোর ভাবনা

সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনের তফসিল বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি কোনো কর্মসূচিতেই যেন গতি আনতে পারছে না। গত অক্টোবরের পর থেকে একের পর এক হরতাল-অবরোধের ডাক দেওয়া দলটির নেতাকর্মীদেরও মাঠে দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে। তাই কর্মসূচির ধরনও পাল্টাতে শুরু করেছে বিএনপি। ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের। বহুকাল পর অসহযোগের মতো কর্মসূচির ডাক দেওয়া হলেও নেই দৃশ্যমান কোনো প্রভাব। সবকিছুই স্বাভাবিক, চলছে আগের মতো।


বিজ্ঞাপন


তাই নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা দেওয়া বিএনপির আন্দোলনের ফল কী হবে তা নিয়ে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।

যদিও বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচন ঠেকানোর টার্গেট থেকে এখনো সরে আসেননি তারা। তবে ভোটারদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টায় জোর দেওয়া হচ্ছে। সেজন্য নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামতে চান। আর শেষ সময়ে নেতারা যেন সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকেন সেই নির্দেশনা দিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কথা বলছেন, দিচ্ছেন নতুন নতুন নির্দেশনা।

অবশ্য ভোট ঠেকানোর ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ইতিমধ্যে লিফলেট বিতরণকারীদের ধারপাকড় শুরু হয়েছে। মানিকগঞ্জে লিফলেট গ্রহণ করায় ব্যবসায়ীকে ধরে নেওয়ার পর মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাই প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের মধ্যে বিএনপি কতটা এগিয়ে যেতে পারবে তা নিয়েও নানা আলোচনা আছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

 


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

এবার অসহযোগ আন্দোলনের ডাক বিএনপির
অসহযোগ আন্দোলনে কতটা সফল হবে বিএনপি?
অসহযোগ আন্দোলনে বিএনপিতে বিস্ময়, নিশ্চুপ নেতাকর্মীরা

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কর্মসূচি-কেন্দ্রিক নতুন নির্দেশনা আসার আগে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে দেশজুড়ে দলের বার্তা পৌঁছাতে চান বিএনপি নেতারা। যে কারণে রোববারের অবরোধ শেষে আবারও তিনদিনের গণসংযোগের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৬০ লাখেরও বেশি প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানিয়েছেন, সারা দেশের গ্রামেগঞ্জে, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিএনপির লিফলেট পৌঁছে গেছে। অন্তত ৬০ লাখ লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। নেতাকর্মীরা যার যার এলাকায় এখনো ভোট বর্জনের লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করছেন।

এদিকে গত রোববার বিকেলে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি জানান, ২৬, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর (মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার) দেশব্যাপী গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করা হবে। নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে সারা দেশে গণসংযোগ ও লিফলেট-প্রচারপত্র বিলি করা হবে।

Non-Cooperation_Movement_BNP--2

জানা গেছে, গত সপ্তাহ থেকে দেশের সাংগঠনিক বিভাগের জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কেন্দ্রীয় নেতা ও ভবিষ্যতে বিএনপির সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে আন্দোলন সফলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিচ্ছেন।

একাধিক বিভাগের কয়েকটি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জানান, তারেক রহমান তাদের সঙ্গে কথা বলে আন্দোলন আরও জোরদার করার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন। নানা নির্দেশনাও দিচ্ছেন। এ বিষয়ে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

তবে কি নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে কেউ মুখ খুলছেন না।

বিএনপির মধ্যম সারির একজন কেন্দ্রীয় নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করলেও সেটা কতটা সম্ভব তা হয়তো সময় বলে দেবে। কিন্তু এখন ভোট দিতে মানুষকে নিরুৎসাহিত করা জরুরি। সেটায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে ভোটের সময় আরও ঘনিয়ে আসলে আন্দোলনের ধরন বদলাবে— এটুকু বলতে পারি।’

বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যেও ভোটারদের নিরুৎসাহিত করার বিষয়টি উঠে এসেছে। রিজভী আহমেদের পাশাপাশি বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতা, যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলের নেতারাও লিফলেট বিতরণ করে ভোট বর্জনে উদ্বুদ্ধ করছেন।

নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘ভয়ভীতি-কেরামতি যাই করেন, কেন্দ্রে কোনো ভোটার পাবেন না। এই ফলাফল ঘোষণার নির্বাচনের বিরুদ্ধে সারা দেশ আজ ঐক্যবদ্ধ।’

ভোটের সময় ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি কোন ধরনের কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে— এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি চলমান আছে। সময়ের সঙ্গে এর গতি-প্রকৃতিও পাল্টাবে নিশ্চয়ই। সামনে কি কর্মসূচি দেওয়া হবে তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। চূড়ান্ত হলে জানতে পারবেন।’

 

আরও পড়ুন

অসহযোগ আন্দোলনে সরকারের পতন দেখছেন রিজভী
বিএনপির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
অসহযোগেও অবরোধ, নেতাকর্মীশূন্য রাস্তায় বেড়েছে গাড়ির চাপ 
ভ্যাট-ট্যাক্সসহ সব বিল পরিশোধ বন্ধের আহবান বিএনপি নেতার

কর্মসূচি ঘিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বাড়ছে

এদিকে বিএনপি কর্মসূচি যত কঠোর করার ইঙ্গিত দিচ্ছে ততই যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা বাড়ছে। যদিও দলটির নেতারা এজন্য সরকারকে দায়ী করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এসব করাচ্ছে বলেও দাবি করছেন বিএনপি নেতারা।

সর্বশেষ গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ৪টি ও কুমিল্লায় ১টি বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সোমবার সকালেও বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবর থেকে ২৪ ডিসেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৮৯টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে ২৮৫টি যানবাহন ও ১৫টি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অগ্নিসংযোগকৃত যানবাহনের মধ্যে বাস ১৮১টি, ট্রাক ৪৫টি, কাভার্ডভ্যান ২৩টি, মোটরসাইকেল ৮টি ও অন্যান্য গাড়ি ২৯টি রয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

বিইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর