বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে আওয়ামী লীগ সমাবেশ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা আর হচ্ছে না হলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নির্বাচন কমিশন অনুমতি না দেওয়ায় ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সমাবেশ হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৬০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর এ কথা জানান ওবায়দুল কাদের।
বিজ্ঞাপন
২০২২ সালে ১০ ডিসেম্বর ঘিরে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে। ১০ ডিসেম্বরের পর ‘শেখ হাসিনার কথায় আর দেশ চলবে না, দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়’ বলে মন্তব্য করেছিলেন বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান। তার ওই বক্তব্যর পর থেকে বিষয়টি নিয়ে চলে নানা আলোচনা। বিএনপি নেতারাও আমানের ওই বক্তব্যের সূত্র ধরে কথা বলেন। পাল্টা জবাব দেন আওয়ামী লীগ নেতারাও। দিনটি ঘিরে নানা শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।
এরপর থেকে বিএনপি রাজপথে নানা কর্মসূচি পালন করতে থাকে। পাল্টা কর্মসূচি দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও। এর মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে বড় কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আলোচিত দিন ২৮ অক্টোবর। আওয়ামী-বিএনপি-জামায়াত ছাড়াও বেশ কয়েকটি দলের কর্মসূচি ঘিরে সেদিন সারাদেশে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ শুরুর কিছু সময় পরই ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকা।
২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর বিএনপি দফায় দফায় হরতাল অবরোধ ডাকলেও সভা-সমাবেশের মতো আর কোনো কর্মসূচি দেয়নি। এর মধ্যে আগামী ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ করার ঘোষণা আসে দুই দলের পক্ষ থেকে। সমাবেশ করতে নির্বাচন কমিশন বরাবর আবেদন করে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে গতকাল বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ নয়, সেদিন দলটি মানববন্ধন করবে।
বিজ্ঞাপন
একদিন পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, নির্বাচন কমিশনের অনুমতি না পাওয়ায় তাদের ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ হচ্ছে না। মানবাধিকার দিবসের আনুষ্ঠানিকতা ভেতরেই পালন করবে তারা।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে বড় সমাবেশ করার কর্মসূচি ছিল আমাদের। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছিলাম। সে আবেদন তারা গ্রহণ করেননি। বাইরে সমাবেশের নামে শোডাউন হবে তারা সে আশঙ্কা করছে। যে কারণে ১০ তারিখে আমাদের মানবাধিকার দিবসের আনুষ্ঠানিকতা ভেতরেই পালন করব। বাইরে যে সমাবেশ করার কথা সেটি করছি না। নির্বাচনী বিধির বাইরে আমরা যেতে চাই না।
সোহরাওয়ার্দীকে স্মরণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গণতন্ত্রের রাজপথের এক অকুতোভয় বীর। গণতন্ত্রই ছিল তার সারা জীবনের ব্রত। গণতন্ত্রের জন্য তিনি আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। বারবার নির্যাতিত হয়েছেন, জেলে গেছেন। নিগৃহীত হয়েছেন।
‘আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গণতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করে স্বাধিকার সংগ্রাম করেছি। স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা পর্যন্ত সেটাও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী যে পথ দেখিয়ে গেছেন সেটাকে অনুসরণ করেই হয়েছে। বঙ্গবন্ধু নিজেও সোহরাওয়ার্দীর শিষ্য বলে দাবি করতেন।– যোগ করেন সেতুমন্ত্রী।
গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্ত করতে আওয়ামী লীগ কাজ করছে মন্তব্য করে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এ দেশে গণতন্ত্রের পথ মসৃণ নয়, জটিল পথ। সাম্প্রদায়িক, জঙ্গিবাদ অপশক্তি- এরা গণতন্ত্রকে সমর্থন করে না। কিন্তু গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে শেখ হাসিনার সংগ্রাম বৃথা যাবে না।’
যারা নির্বাচন বয়কট করছে, অবরোধ, হরতাল ডাকছে তারা গণতন্ত্রের শক্তি নয় বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কারই/এমআর