সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় বিতর্কিতরা

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় বিতর্কিতরা
তিনশ আসনে ৩৩৬২ জন প্রার্থী নৌকার মনোনয়ন চান। ছবি: সংগৃহীত

দুদকের মামলার আসামি হাজী মো. সেলিম। ঢাকা-৭ আসনে টানা দুইবারের এই সংসদ সদস্য নিজ আসনের বাইরে জাতীয়ভাবে আলোচনায় এসেছিলেন ছেলের কর্মকাণ্ডের কারণেও। পুরান ঢাকায় নিজের বলয় তৈরি করা, নদীর জায়গা দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতার বিরুদ্ধে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হাজী সেলিম। ফরম কিনেছেন, বেশ জমকালো শোডাউনের মাধ্যমে জমাও দিয়েছেন। তবে তিনি যে এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন, সে শঙ্কা দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে যেমন আছে, একই সঙ্গে শঙ্কা আছে হাজী সেলিমের মাঝেও। এজন্য ঢাকা-৭ আসন থেকে নিজে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার পাশাপাশি দুই ছেলেকে দিয়েও একই আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করিয়েছেন তিনি।

হাজী সেলিমের মতো বিতর্কিত আরও অনেক সংসদ সদস্য রয়েছেন, যারা এখন মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার তীব্র দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তাদের একজন ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খান। পাঁচ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তবে এই সময়ে ঢাকা-১৩ আসনে তার হাত ধরে তেমন কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: প্রতি আসনে নৌকা চান গড়ে ১১ জন

দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এই সংসদ সদস্য নিষ্ক্রিয় থাকায় সে সুযোগ নিয়েছে বিরোধী দলগুলো। রাজধানীতে যেসব এলাকায় বিএনপির সক্রিয়তা বেশি, তার মধ্যে ঢাকা-১৩ আসন অন্যতম বলে মনে করেন তারা। ফলে সাদেক খান এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন, সেটি এখন ওই এলাকার মানুষের মুখে মুখে৷ তবে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা।

সাদেক খানের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়ন পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় এই সংসদ সদস্য।

League2


বিজ্ঞাপন


একই চিত্র ঢাকা-১৪ আসনে। উপনির্বাচনে মিরপুরের এই আসনটির সংসদ সদস্য হন আগা খান মিন্টু। তবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তেমন কোনো সরব ভূমিকায় দেখা যায়নি তাকে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের দাবি, ঢাকা-১৪ আসনেও বিএনপি সক্রিয় হয়েছে। যার কারণ সংসদ সদস্যের নিষ্ক্রিয়তা।

দলীয় কর্মীদের একজন পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, 'এমপি সাহেব এখন যিনি আছেন, ভালো মানুষ। তবে তার বয়স হয়েছে। মিরপুর একটা বড় জায়গা। এখানে এমপি সাহেবরা সক্রিয় না থাকতে পারলে বিএনপি সুযোগ নেবে। তাই এমন কাউকে এমপি করা দরকার যিনি মাঠে নিয়মিত সক্রিয় থাকবেন।'

আরও পড়ুন: তারাও নৌকার মনোনয়ন চান

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আগা খান মিন্টু ঢাকা মেইলকে বলেন, 'আমি আওয়ামী লীগ করি। দল যাকে মনোনয়ন দেয় তার পক্ষে কাজ করব। এমপি হওয়ার জন্য দল করি না। দলের আদর্শে বিশ্বাসী।'

এই নেতা বলেন, 'এর আগে ৩০ জন মনোনয়ন চাইছে। নেত্রী আমাকে যোগ্য মনে করছে, দিছে। এখন যদি অন্য কাউকে যোগ্য মনে করে, তাকে দিবে। আমার কিছু বলার নাই।'

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়ন হারানোর দুশ্চিন্তায় আছেন মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীরেন শিকদার। কারণ, জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো না। সংসদ সদস্যের নাম ব্যবহার করে তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে টিআর কাবিখা, টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে৷ এছাড়া নামে-বেনামে ভারতে সম্পদ গড়ার অভিযোগও রয়েছে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। ফলে মাগুরা-২ আসনের এই সংসদ সদস্য এবার ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পাবেন কি না, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।

আরও পড়ুন: প্রার্থী চূড়ান্তে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা ডেকেছে আ.লীগ

সারাদেশে এমন অর্ধশত সংসদ সদস্য মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও উত্তরাঞ্চলের সংসদ সদস্যরা অন্য যেকোনো এলাকার চেয়ে মনোনয়ন হারানোর বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।

আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থীদের দুটি তালিকা তৈরি করবে আওয়ামী লীগ। বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে না সেটা ধরে প্রণয়ন করা হবে একটি তালিকা। আরেকটি তালিকা হবে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে সেটা ধরে। দুই তালিকার হিসাব-নিকাশ ভিন্ন হবে।

League3

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, নির্বাচনে কে মনোনয়ন পাবে, কে বঞ্চিত হবে সেটা পুরোটাই নির্ভর করছে দলীয় প্রধানের ওপর। তিনি গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে মাঠে জরিপ করিয়েছেন। সেই অনুযায়ীই মনোনয়ন দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে অনেক কেন্দ্রীয় নেতাও বাদ পড়তে পারেন।

আরও পড়ুন: সাকিব আল হাসানের মনোনয়ন বিতর্ক

আওয়ামী লীগের এই নেতা ইঙ্গিত দেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলে দল কিছু আসন ছেড়ে দিতে পারে। যারা সরকারের কথামতো নির্বাচনে আসছে তাদের সুযোগ দেওয়া হতে পারে এসব আসনে। এছাড়া জাতীয় পার্টিও কিছু কিছু আসনে ছাড় পেতে পারে বলে আভাস দেন এই নেতা। আওয়ামী লীগের অনেক প্রবীণ নেতাও মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন। সেসব আসনে নতুনদের বেছে নিতে পারে দল।

টানা তিন মেয়াদ ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সামনে এখন চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় যাওয়ার হাতছানি। এত বছর দল ক্ষমতায় থাকায় স্বাভাবিকভাবেই নেতৃত্বের প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। তিনশ আসনে তিন হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে ক্ষমতাসীন দল। এতে প্রতি আসনে গড়ে প্রায় ১১ জন নেতা নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দলীয় প্রার্থী বাছাই করতে বসছে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড। সেখানে সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে আগ্রহী প্রার্থীদের। পরে চূড়ান্ত করা হবে দলীয় মনোনয়ন।

কারই/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর