গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকে তা সহিংসতায় পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর থেকে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে মাঠে রয়েছে বিএনপি। গত সপ্তাহে একদিন হরতাল এবং তিন দিন অবরোধের পর বিরতি দিয়ে আবার টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে দলটি। এই কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর মাঝে এক দিনের বিরতি দিয়ে চলতি সপ্তাহের শেষ দুই দিন আবার অবরোধ বা হরতালের কর্মসূচি দিতে পারে বিএনপি।
টানা প্রায় ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির সামনে এখন আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। সরকারের ‘দমন-পীড়নে’ দলের নেতাকর্মীরা বিপর্যস্ত হলেও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চায় বিএনপি। নির্বাচন পর্যন্ত এমনকি আবারও একতরফা নির্বাচন করলে সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনের পরেও আন্দোলন অব্যাহত রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। তবে দলটি হরতাল-অবরোধের বাইরেও কঠোর আর কী কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে সেটা নিয়ে ভাবছে। এ ব্যাপারে দলের শীর্ষ নেতা যারা কারাগারের বাইরে আছেন তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই বিএনপি ভিন্ন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা দিতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন দলটির নেতারা।
কর্মসূচি নিয়ে কী ভাবছে বিএনপি
আগামী দিনের কর্মসূচি সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বিবিসিকে বলেন, বিএনপির আন্দোলন দারুণভাবে চলছে এবং আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি সহিংস না হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে। সামনের পরিবেশ পরিস্থিতিই বলে দেবে আমরা কোন দিকে যাবো।
আরও পড়ুন: সারাদেশে চলছে ভয়ংকর গ্রেফতার ঝড়: রিজভী
বিজ্ঞাপন
দলের আরেক নেতা কায়সার কামাল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমটিকে বলেন, যে কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে বলে মনে হবে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী যে ধরনের কর্মসূচির প্রয়োজন অনুভূত হবে, সামনে সে ধরনের কর্মসূচিই আসবে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন সামনে আন্দোলনের কর্মসূচি কী হতে পারে, সেজন্য দলীয় হাইকমান্ড থেকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের চিন্তা করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ হরতাল-অবরোধ ছাড়াও আর কী কর্মসূচি দেওয়া যায় সেটি নিয়ে দলের বিভিন্ন স্তরে আলোচনা চলছে এখন।
আরও পড়ুন: শাহজাহান ওমর ও প্রিন্স রিমান্ডে, কারাগারে আলতাফ
নেতাদের ঘনিষ্ঠ কিছু সূত্র জানিয়েছে, হরতাল-অবরোধ চললেও সামনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর, এমনকি নির্বাচনের পরেও আন্দোলন অব্যাহত রাখার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে-এমন বিবেচনা থেকেই আরও নতুন কর্মসূচির খোঁজ করছে বিএনপি।
আগে নির্বাচন কমিশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সচিবালয় ঘেরাও পালন করে হরতাল-অবরোধে যাওয়ার চিন্তা থাকলেও ২৮ অক্টোবরের সহিংসতার পরদিন হরতাল এবং এরপর একদিন বিরতি দিয়ে তিন দিনের অবরোধ পালন করেছে বিএনপি। চলতি সপ্তাহে রোববার সকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত অবরোধের পর বুধ ও বৃহস্পতিবার হরতালের মতো কর্মসূচি ঘোষণার চিন্তা আছে দলের ভেতরে। বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হতে পারে পরবর্তী সপ্তাহের প্রথম দুই দিনের কর্মসূচি। এরপর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিনকে কেন্দ্র করে ধারাবাহিক কর্মসূচি আসার সম্ভাবনা থাকলেও সেগুলো কী ধরনের কর্মসূচি হতে পারে তা নিয়েই এখন বিশ্লেষণ করছেন দলের নেতারা।
তবে এত দিন ধরে আন্দোলন আর দেশজুড়ে এত নেতার গ্রেফতারের পর কর্মসূচি ঘোষণার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া মোকাবেলার মতো সাংগঠনিক সক্ষমতা দলটির থাকবে কি-না তাও চিন্তায় আছে অনেকের। তবে সেলিমা রহমান বলছেন, সরকার গ্রেফতার মামলা ও হামলা করে যে অবস্থা তৈরি করেছে তাতে এমন চিন্তা বা আলোচনা ওঠা স্বাভাবিক। কিন্তু তার দাবি এখন আন্দোলন শুধু বিএনপির বিষয় নয়। তিনি বলেন, দেখুন আমাদের প্রত্যেকটি কর্মসূচি সফল হচ্ছে। কারণ সুযোগ পেলেই মানুষ আসছে। আমরা তো জনগণকেই সম্পৃক্ত করতে চেয়েছিলাম। তাই এটি ঠিক যে কঠিন অবস্থা চলছে, কিন্তু আন্দোলনও চলছে। যখন যা দরকার হবে বা জনগণ চাইবে দল তাই ঘোষণা করবে।
নেতাদের ঘনিষ্ঠ কিছু সূত্র জানিয়েছে, হরতাল-অবরোধ চললেও সামনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর, এমনকি নির্বাচনের পরেও আন্দোলন অব্যাহত রাখার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে-এমন বিবেচনা থেকেই আরও নতুন কর্মসূচির খোঁজ করছে বিএনপি।
তবে দলের একটি অংশ চাইছে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করুক দল। কিন্তু এ নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যে বিরোধ আছে। কারণ অনেকে আবার মনে করেন অসহযোগ আন্দোলনের মতো কর্মসূচি দেওয়ার সময় এখনো আসেনি।
আরও পড়ুন: বিএনপির গ্রহণযোগ্য ১০০ নেতাকে নির্বাচনে চান নাসিম
দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলছেন, দলের কর্মসূচিগুলো ভেতরে-বাইরে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত করা হয় এবং লিয়াজোঁ কমিটি আবার এসব কর্মসূচি নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্য দলগুলোর সাথে আলোচনা করে। এরপর দল একটি কর্মসূচি ঘোষণা করে। তিনি বলেন, এটি আমাদের সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। এখন চলমান আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণেও একই পদ্ধতিতে সবার মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে হাইকমান্ড। তবে সময়ের প্রেক্ষাপটে যে কর্মসূচির দরকার হবে এবং জনগণ যে কর্মসূচিতে অংশ নেবে সেটিই দেওয়া হবে।
জেবি