বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

প্রায় ৪ বছর পর হরতালের রাজনীতিতে ফিরল বিএনপি

ঢাকা মেইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:৫৭ এএম

শেয়ার করুন:

প্রায় ৪ বছর পর হরতালের রাজনীতিতে ফিরল বিএনপি
হরতালের আগের দিন বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নিজেদের মহাসমাবেশে হামলার অভিযোগ করে দেশজুড়ে আজ রোববার (২৯ অক্টোবর সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। এর মাধ্যমে তিন বছর আট মাস পর আবার হরতাল কর্মসূচিতে ফিরে গেল দলটি।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার বিকেল সোয়া তিনটার দিকে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের মঞ্চ থেকে রোববার হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর পরপরই কার্যত সমাবেশের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি সমাবেশে তারা প্রধান অতিথির ভাষণ দেওয়ার কথা থাকলেও তাও দিতে পারেননি।


বিজ্ঞাপন


ওদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপির এই হরতাল কর্মসূচির তীব্র সমালোচনা করে একে প্রতিহত করতে রোববার মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে আজ রোববার দেশজুড়ে শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, শনিবারের মহাসমাবেশ পণ্ড হলেও বিএনপিকে তার এই হরতাল কর্মসূচি নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়তে হবে। কারণ রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে এটি অনেক আগেই গুরুত্ব হারিয়েছে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একসময় তাদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিয়মিত হরতাল করলেও গত দুই দশকে এই হরতাল কার্যত গুরুত্বহীন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে জনভোগান্তির কারণে।

কতদিন পর হরতালে ফেরা


বিজ্ঞাপন


বিরোধী দল বিএনপি সর্বশেষ হরতাল করেছিল ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। তখন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ওই হরতাল ডেকেছিল বিএনপি। সেই হরতাল নিয়েও অনেক আলোচনা হয়েছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। কারণ দলটি সেবারও দীর্ঘ সময় পর হরতাল কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল।

তখন তিন বছর ১০ মাস ১১ দিন পর ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছিল দলটি। তার আগে ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সর্বশেষ হরতাল দিয়েছিল বিএনপি।

BNP2

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর ২০১৫ সালে ওই নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে টানা তিন মাস হরতাল-অবরোধ পালন করে দলটি৷ ওই হরতাল-অবরোধ ও আন্দোলন এক পর্যায়ে সহিংস রূপ নেয়। একের পর বাসে আগুন ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের মতো ঘটনায় বহু মানুষ হতাহত হলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

সরকার এসব ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটকে দায়ী করলেও তারা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে উল্টো সরকারকেই এর জন্য দায়ী করে আসছে।

তখন হরতাল অবরোধ চলতে চলতে পরিস্থিতি নিজ থেকেই এক পর্যায়ে স্বাভাবিক হয়ে এলে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নিজেরাই সেই কর্মসূচি স্থগিত করে। ২০১৫ সালের এপ্রিলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির অবসান ঘটান।

সেদিনের পর থেকে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের হরতাল কর্মসূচিতে বিএনপি সরাসরি সমর্থন দিলেও তারা নিজেরা প্রায় চার বছর কোনো হরতালের ডাক দেয়নি।

'হরতাল আবেদনহীন'

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়াকে কেন্দ্র করে কিংবা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ করলেও দলের পক্ষ থেকে কোনো হরতাল ডাকা হয়নি। এর আগে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর ২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই বছরের ২৭ জুন বিভিন্ন দাবিতে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছিলেন তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া।

এরপর ২০১০ সালের নভেম্বরে মিসেস জিয়াকে ঢাকা সেনানিবাসের মইনুল রোডের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার প্রতিবাদে বিএনপি দ্বিতীয় হরতাল পালন করে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, বিএনপি একদিকে সমাবেশ করতে পারেনি আবার অন্যদিকে প্রতিবাদে যে কর্মসূচি দিয়েছে তার কোনো আবেদনই জনগণের কাছে নেই অনেক কাল ধরেই।

‘আমার ধারণা আওয়ামী লীগ এ সুযোগও নেবে। কারণ মানুষ হরতাল পছন্দ করে না বহুকাল ধরেই। আগে সহিংসতা করে হরতাল সফল করা হতো। কিন্তু এখন তেমনটাও সম্ভব হবে না। এসব জেনেও বিএনপি এই কর্মসূচিই দিয়েছে,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মহিউদ্দিন আহমেদ।

জামায়াতসহ আরও কয়েকটি দলও হরতাল করছে

বিএনপির সাথে হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী এবং সমমনা আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল। জামায়াতে ইসলামী হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে পুলিশের বাধাদান ও মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি দেয়া হয়েছে।’

বিএনপির সমমনা দলের প্ল্যাটফর্ম গণতন্ত্র মঞ্চ, সেখান থেকে হরতালের ঘোষণা দেওয়া হয় শনিবার বিকেলে। এই প্ল্যাটফর্ম রবিবার পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দেবে বলে জানিয়েছে।

BNP3

এক সময় হরতাল আহ্বানকারী রাজনৈতিক দলগুলো হরতাল সফল করতে হরতালের দিন ভোর থেকেই পিকেটিং করতো, অর্থাৎ যানবাহন চলাচলে বাধা দিতো। এমনকি হরতাল সফল করতে গিয়ে অফিসগামী সরকারি কর্মকর্তাকে দিগম্বর করার ঘটনাও ঘটেছে, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত একটি ঘটনা।

এখনকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এক সময় বিএনপি সরকারের এক মেয়াদেই ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল বলে আলোচনা আছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে পর্যন্ত হরতাল মোটামুটি কার্যকর করা সম্ভব হতো আহ্বানকারী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে। কিন্তু এরপর আওয়ামী লীগ বিএনপি সরকারের সময়ে হরতাল আহ্বান করলেও সেগুলো সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও আশেপাশের এলাকায়।

আবার ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি যেসব হরতাল ডেকেছে সেগুলো নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মিছিল মিটিংয়েই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে বিএনপির দীর্ঘকালীন হরতাল অবরোধের এক পর্যায়ে দুটোই অকার্যকর হয়ে পুরোমাত্রায় গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিল।

ওই সময় হরতালের মধ্যেই ঢাকার রাস্তায় নামলে যানজটের মধ্যে পড়া আর অফিস আদালত, দোকানপাট সবই খোলা থাকতে দেখা গেছে।

শুধু বড় শহরগুলোতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছিল আর পাবলিক পরীক্ষায় পিছিয়ে দেওয়ার মধ্যেই তখন সীমিত হয়ে পড়েছিল হরতাল। -বিবিসি বাংলা

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর