রাত পোহালেই ২৮ অক্টোবর। সরকার পতন ও খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে এক দফার দাবিতে মাঠে নামছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করবে তারা। সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে নামছে জামায়াতে ইসলামী। তারা অনুমতি ছাড়াই রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করবে। অপরদিকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর তিন দলের সমাবেশের ভেন্যু সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় কোথাও নেতাকর্মীরা এসেছেন। কোথায় মঞ্চ বানানো হচ্ছে, আবার কোথায় ফাঁকা।
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সারাদেশ থেকে আসা নেতাকর্মীরা বিকেল থেকেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হচ্ছেন। মিছিল করছেন। সরকার বিরোধী বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দিচ্ছেন। সরকার পতনের পাশাপাশি তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করছেন।
অন্যদিকে রাজধানীর বায়তুল মোকররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ উপলক্ষে উল্লেখযোগ্য কোনো নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি। বিকেলের দিকে তারা মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। পরে সেটি স্থগিত করা হয়। তবে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ১৫/২০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একটি মিছিল দেখা গেছে।
অপরদিকে রাজধানীর শাপলা চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতাকর্মী নেই। পোস্টার ফেস্টুন ব্যানার বা সরকার পতনের দাবিতে দলটির কোনো কিছুই দেখা যায়নি।
বিজ্ঞাপন
এদিকে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় দেখা যায় রিকশাচালকদের মিছিল। তারা সরকারের পদত্যাগ চেয়ে মিছিল করেছেন। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ক্ষোভ জানাচ্ছেন। তাদের দাবি, হু হু করে বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনেসের দাম। একশ টাকার নিচে কোনো সবজি কেনা যায় না। গরুর মাংস খেতে পারেন না অনেকদিন ধরে।
রিকশাচালকরা জানান, সারাদিনে রিকশা চালিয়ে আয় করেন ৭ থেকে ৮শ টাকা। রিকশার জমা ও তিনবেলা খাওয়ার পর বাঁচে ৩ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা। এই সামান্য অর্থ দিয়ে সংসারের ব্যয়ভার মেটানো অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে।
কথা হয় রিকশাচালক সকবের আলীর সঙ্গে, তার গ্রামের বাড়ি ভৈরবে। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আরে ভাই অনেক কষ্টে আছি। দিন চলছে না। সারাদিন হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে যা পাই তাতে ঘাম ছুটে যায় সংসার চালাতে। আর পারছি না। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
কুষ্টিয়ার মোসলেম উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার পরিবারের লোকেরা থাকে বাড়িতে। আমার দুইজন ছেলে-মেয়ে আছে। মা ও বউ আছে। সাতদিন তো আর টানা রিকশা চালানো যায় না। সপ্তাহে ৫ দিন গাড়ি চালাই। দুই দিন রেস্ট নেই। প্রতিদিন প্রায় ৭ থেকে ৮শ টাকা আয় হয়। কিন্তু সাতদিন তো কাজ করতে পারি না। জিনিসপত্রের যে দাম, চলব কিভাবে?
ঠাকুরগাঁওয়ের করিম বলেন, শেখ হাসিনা বলে সারাদিন নাকি রিকশা চালিয়ে ১ হাজার টাকা কামানো যায়। উনি কি রিকশা চালান। নাকি আমরা চালাই। রিকশা চালানো যে কত কষ্ট আমরা বুঝি। আপনারা তো বুঝেন না। এখন ঢাকা শহরে রিকশা চালক বেশি। গ্রামে বন্যা, কৃষি কাজ কমে গেছে। সবাই ঢাকায় চলে আসে। এজন্য রিকশাচালকদের আয় ইনকাম কম। চলতে পারি না। মাছ-মাংস তো দূরের কথা সামান্য ডাল-ভাত জোটানোই অনেক কষ্টের।
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার সরকার পতন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
এআইএম/এএস