বিএনপি সরকারকে ১৩ দিনের যে আলটিমেটাম দিয়েছে তাকে ‘হাস্যকর’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপি নেতারা রোর্ড মার্চের নামে জনগণের কাছে মিথ্যা অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপি নেতারা তথাকথিত রোর্ড মার্চের নামে জনগণের কাছে মিথ্যা অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। সারা বাংলাদেশের আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থার মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়কের নতুন নতুন ব্রিজ, ফ্লাইওভার এবং গড়ে ওঠা নতুন শিল্পাঞ্চল ও বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেখে তাদের চোখ, অন্তর, বিবেক ও মস্তিষ্ক দিশেহারা হয়ে পড়েছে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তাই একের পর এক ব্যর্থ আলটিমেটামের রেশ না কাটতেই তথাকথিত এক দফার জন্য তারা পুনরায় হাস্যকর আলটিমেটাম দিয়েছে। জনগণ ভুলে যায়নি, তাদের এক দফা, দশ দফা, একত্রিশ দফা চরম ব্যর্থতায় বিলীন হয়ে গেছে। তাদের ঈদের পর, পূজার পর, পরীক্ষার পর কঠোর আন্দোলনের হুমকি আজ জনগণের কাছে উপহাসের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির সব তর্জন গর্জন, হুংকার আষাঢ়ে গল্পের মতোই হাস্যকর। বিএনপি যতবার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, জনগণ ততবারই তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কারণ বাংলাদেশের জনগণ জানে, বিএনপির এই আন্দোলন দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ও তার কুপুত্র তারেক রহমানকে হত্যা-ক্যু- ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মসনদে বসানোর আন্দোলন।’
ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, জন্মগতভাবেই বিএনপি একটি ব্যর্থ রাজনৈতিক দল, সংবিধান ও গণতন্ত্র হত্যাকারী দল, ভোটাধিকার হরণকারী দল। বন্দুকের নলের মুখে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, কারফিউ বহাল রেখে সংবিধান স্থগিত করে হ্যাঁ/না ভোটের প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করা, হওয়া ভবন-খোয়াব ভবন খুলে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ, বিদেশে অর্থপাচার, বাংলাদেশকে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত করার মধ্য দিয়ে গণবিরোধী অবস্থান ব্যতীত দেশ ও জনগণের কল্যাণে বিএনপির ন্যূনতম কোনো অবদান নেই।’
বিজ্ঞাপন
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কেবল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মিথ্যা সমালোচনা, সরকার ও দেশবিরোধী অপপ্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দিয়ে স্বাধীনতা ও দেশবিরোধী অপশক্তিকে একত্রিত করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকা ছাড়া একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির জনকল্যাণে কোনো আদর্শ নেই।’
বিএনপি নেতারা শুধু আওয়ামী লীগ নয়, দেশের বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে বিষোদগার করছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘উস্কানির মাধ্যমে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের শান্তিকামী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির যেকোনো ধরনের অপচেষ্টা প্রতিহত করতে সংকল্পবদ্ধ।’
শেখ হাসিনা কখনো বিদেশ থেকে খালি হাতে ফেরেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তিনি বাংলাদেশের জন্য সবসময় মর্যাদা, সমৃদ্ধি ও স্বীকৃতি নিয়ে আসেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের অর্জন ছিল দুর্নীতিতে টানা পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, সারাবিশ্বে বাংলাদেশ ছিল ক্ষুধা-দারিদ্র্য, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অপর নাম। বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে, বিশ্বসভায় উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।’
কাদের বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবিত শান্তি, ন্যায়বিচার ও উন্নয়নের জন্য জনগণের ক্ষমতায়ন মডেল জাতিসংঘ অধিবেশনে রেজুলেশন আকারে গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য তার অসাধারণ উদ্ভাবনী কমিউনিটি ক্লিনিক সার্ভিস জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের কাছে দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ' হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি পেয়েছে।’
তাই জাতিসংঘে শেখ হাসিনার ১৯তম গৌরবোজ্জ্বল উপস্থিতি বিএনপির গাত্রদাহের কারণ বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাঙালি বিশ্বসভায় আজ আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অসংখ্য স্বীকৃতি, পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। বাংলাদেশের জন্য তিনি বারবার গৌরব নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের জনগণ বিএনপি-জামায়াত অপশক্তির সেই অন্ধকার যুগে আর কখনো ফিরে যাবে না। জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাঙালি জাতির এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।’
কারই/জেবি