শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

‘আইনমন্ত্রী আইনের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা করছেন’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

‘আইনমন্ত্রী আইনের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা করছেন’

খালেদা জিয়ার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আইনের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

বুধবার (০৪ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।


বিজ্ঞাপন


ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, রাজনৈতিক ব্যাখ্যা এ কারণেই বলব, ফৌজদারি কার্যবিধির  ৪০১(১) ধারায় স্পষ্টভাবে দেওয়া আছে সরকার চাইলে একজন সাজাপ্রাপ্ত বন্দির সাজা মওকুফ করতে পারে। সাজা কমাতে পারে, সাময়িকভাবে সাজা স্থগিত করতে পারে। শর্তযুক্ত বা শর্তমুক্তভাবে। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে ওনারা শর্তযুক্ত করে দিয়েছেন। শর্ত তুলে নিলেই খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, ৪০১(৬) ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, সরকার চাইলে সাধারণ বা বিশেষ নির্বাহী আদেশে যেকোনো বন্দির ক্ষেত্রে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির আইন বিষয়ক বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো হলে তিনি চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসবেন। কারণ অন্য একজন নেত্রী দেশ ছেড়ে গেলেও খালেদা জিয়া কখনো দেশ ছেড়ে যাননি।

এর আগে, আজ দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার একটি উপায় আছে। আর সেটা হলো রাষ্ট্রপতির কাছে সাজা মওকুফ চেয়ে আবেদন। তবে এক্ষেত্রে খালেদা জিয়াকে দোষ স্বীকার করতে হবে বলেও জানান মন্ত্রী।


বিজ্ঞাপন


আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়ার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ নেই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যে কেউ রাষ্ট্রপতির কাছে সাজা মওকুফ চেয়ে আবেদন করতে পারে। এই সুযোগ খালেদা জিয়ারও আছে। এক্ষেত্রে তাকে দোষ স্বীকার করতে হবে।

>> আরও পড়ুন: খালেদার চিকিৎসা নিয়ে বিএনপি মিথ্যাচার করছে: আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী বলেন, সাজাপ্রাপ্ত যেকোনো আসামি তার দণ্ড মওকুফের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারেন। ইতোমধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ রাষ্ট্রপতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে তিনি বিদেশে গেছেন।

নির্বাহী আদেশের বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী আদেশে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী শর্ত যুক্তভাবে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন, সেটি দ্বিতীয়বার আর করার কোনো সুযোগ নেই।

>> আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদনে আইন মন্ত্রণালয়ের ‘না’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করানোর ব্যাপারে তার পরিবারের আবেদন নিষ্পত্তির পেছনে কোনো রাজনীতি নেই বলে দাবি করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, এই ইস্যুতে বিএনপি মিথ্যাচার করছে। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি।

গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে প্রায় দেড় মাস ধরে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার আবেদন করা হয়।

তবে আইন মন্ত্রণালয় এই আবেদন নাকচ করে দিয়ে জানিয়েছে, দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার সাজা নির্বাহী আদেশে মওকুফ আছে। এই অবস্থায় তার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসার সুযোগ নেই। তাকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে হলে আবার কারাগারে গিয়ে আদালতে আবেদন করতে হবে।

বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন, খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছিল। তিনি শর্ত মেনে বিদেশে চিকিৎসা নেবেন না।

>> আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ‘উন্নতি’ দেখছেন না চিকিৎসকরা

ফখরুলের সেই অভিযোগের জবাব দিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আইনমন্ত্রী। তিনি জানান, আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়ার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ নেই। তাকে কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। এই ইস্যুতে বিএনপি মিথ্যাচার করছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিবের অভিযোগের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, গতকাল মির্জা ফখরুল বলেছেন, আইনমন্ত্রী একসময় বলেছিলেন যে, দণ্ড স্থগিত করে বাসায় থাকতে দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই, এটা পারে শুধু আদালত। অথচ তার কিছুদিন পরেই সরকারের নির্বাহী আদেশে দেশনেত্রী বাসায় এসেছিলেন। ফখরুল ইসলাম সাহেবের এই বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কারণ আমি এমন কথা বলিনি। আমার বক্তব্য সবসময় রেকর্ড করা থাকে। ২০১৬ থেকে আজ পর্যন্ত কী বক্তব্য দিয়েছি সেগুলো চেক করেছি। এমন কথা কোথাও নাই। আমি একজন আইনজীবী। আমি বাংলাদেশের সংবিধান এবং ফৌজদারি আইন-কানুন জানি। তাই আমার পক্ষে এ কথা বলা সম্ভব নয়।

এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয় দাবি করে আনিসুল হক বলেন, বেগম জিয়ার পরিবার দরখাস্ত করেছিলেন, সেই দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আইনে কোথাও তাকে বিদেশে নেওয়ার কথা বলা নেই। 

এআইএম/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর