বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ঢাকাসহ সারাদেশে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করব যাতে সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সেই সময়ের জন্য আপনারা সবাই প্রস্তুতি নিন।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) অবৈধ সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্তি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় অবস্থিত বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা জেলা বিএনপি।
বিজ্ঞাপন
আব্বাস বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন, এই দেশে দ্রব্যমূল্যের কী দুরবস্থা। চাল, ডাল, চিনি যাই বলেন, এমনকি ডিম, আলু পেঁয়াজ সব কিছুরই দাম বৃদ্ধি। যেখানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন- একটা সিন্ডিকেটের জন্য এটা হচ্ছে। যখন জনগণ বলল সিন্ডিকেট ভেঙে দেন, তখন তিনি বললেন সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না। এই একই অবস্থা স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও হয়েছিল। তখন সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করা হয়েছিল, যা আজকেও করা হচ্ছে। আজকে আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা বলেন- সিন্ডিকেট না থাকলে এই দেশের অর্থনীতির রাজনীতি চলবে না। জনগণের প্রতি আহ্বান এ দেশকে মুক্ত করতে হলে এদের (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া যাবে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আমার যুবক ভাইয়েরা, বোনেরা এবং আমার মায়েরা যারা আন্দোলন সম্পর্কে শুনছেন, তারা কেউ ঘরে বসে থাকবেন না। যদি মনে করেন বিএনপির নেতারা আন্দোলন করে সরকার নামাবে তাহলে কিছুই হবে না। আপনারা অংশগ্রহণ না করলে এই সরকারকে কখনোই ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না। তাদের হাতে পুলিশ আছে, র্যাব আছে, বিডিআর (বিজিবি) আছে; এমনকি তাদের হাতে কোর্টও আছে। সুতরাং আমরা সবকিছুকে ছাপিয়ে এ দেশকে মুক্ত করব এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব ইনশাল্লাহ।’
১৯৯৬ সালের সংবিধান অনুযায়ী দেশে নির্বাচন হবে এমন মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সরকার বলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। আমরাও বলি দেশে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কিন্তু কথা আছে, কোন সংবিধান? যে সংবিধান জাস্টিস খায়রুল হকের মিথ্যা রায় আপনারা সংশোধন করেছেন, সেই সংবিধান নয়। তবে আমি বলতে চাই, ৯৬ সালে সংসদে যে সংবিধান পাস হয়েছে সেই সংবিধানের আদলে নির্বাচন করতে হবে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কীভাবে করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে। তবে এখন সেভাবে নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের ভয় কেন? কারণ ভয় হলো তত্ত্বাবধায়কের মাধ্যমে নির্বাচন করলে উনারা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। আওয়ামী লীগ ভয় পাচ্ছে, আমি বলব কিসের ভয়? আমরা কি আপনাদের ভয় দেখিয়েছি নাকি? আপনাদের আমরা কোনো অত্যাচার করতে চাই না। শুধু আপনাদের ক্ষমতা থেকে সরাতে চাই।’
প্রশাসন বলছে বিএনপির হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া যায় না, তারা বলার কে? এমন প্রশ্ন তুলে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘একজন বিচারক বলেছেন বিএনপির হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া যায় না। আমি বলব, আরে ভাই তোমরা কে এগুলো বলার। জনগণ নির্ধারণ করবে কে ক্ষমতায় যাবে, আর আমরা সেটাই চাই। আপনারা বলছেন সংবিধানের আইন নষ্ট করে নির্বাচন করা যাবে না। তার মানে আপনারা আগের মতো একইভাবে নির্বাচন করবেন এবং ক্ষমতায় আসবেন, তাই তো! কিন্তু দেশের জনগণ সেভাবে হতে দেবে না।’
বিজ্ঞাপন
আজকে কোর্টে চোর-ডাকাতের বিচার নাই, বিচার হচ্ছে বিএনপির নেতাদের এমন মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমান (আমানুল্লাহ আমান) গ্রেফতার হলো, তাকে জেল দিল। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে রাস্তায় ফেলে পেটানো হলো। আমাদের নেতৃবৃন্দকে বিভিন্নভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। শুধু বিএনপি নেতাকর্মীদের বিচারই কেন হবে? স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কথা বলা কি অপরাধ? গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলা কি অপরাধ? যারা দেশকে ভালোবাসে সেটা কি অপরাধ? আজকে হাসিনার এই সরকার বলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলতে কিছু নেই। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। অর্থাৎ তাদের কথায় বোঝা যাচ্ছে, তোরা যে যাই বলিস ভাই আমার সোনার হরিণ চাই!’
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. আব্দুস সালাম।
বিইউ/জেবি