শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

আওয়ামী লীগের ভাবনায় শুধুই নির্বাচন

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০২৩, ১০:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

আওয়ামী লীগের ভাবনায় শুধুই নির্বাচন

আগামী জানুয়ারির শুরুর দিকেই দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসেবে বাকি আছে মাত্র চার মাস। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে। যদিও নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে সেটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ রয়েছে। সবচেয়ে বড় বিরোধী দল বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড়। এক দফা দাবিতে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা অব্যাহতভাবে কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। তবে বিরোধী দলগুলোর এই কঠোর অবস্থান নিয়ে খুব একটা ভাবছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাদের ভাবনায় এখন শুধুই নির্বাচন। ভোটের বৈতরণী কীভাবে পার পাওয়া যাবে সেই অংকই কষছে আওয়ামী লীগ। 

শোকের মাস আগস্টজুড়ে নানা কর্মসূচি পালন করছে আওয়ামী লীগ।  শোক দিবসকেন্দ্রিক মাসব্যাপী ৭০টির বেশি কর্মসূচি রয়েছে দলটির। এর বাইরে সাংগঠনিক তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর থেকে সাংগঠনিক গতি আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় নামবে ক্ষমতাসীন দল। কেন্দ্রের সঙ্গে যোগ দেবে সহযোগী ভাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো।  


বিজ্ঞাপন


আগামী নির্বাচনে বিএনপির আসা বা না আসা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছে না আওয়ামী লীগ। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের চাপে কিছুটা অস্বস্তিতে আছে দলটি। তবে তারা বিশ্বাস করে, শেষ পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে এবং বিএনপি সেই নির্বাচনে আসবে।

জানা গেছে, সেপ্টেম্বর থেকে সরকারের বিগত সময়ের উন্নয়নকে সামনে রেখে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়ে চলবে ভোটের আগ পর্যন্ত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হবে- এমন প্রতিশ্রুতি নিয়েই জনগণের দোরগোড়ায় যাবে কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল আওয়ামী লীগ।


 


বিজ্ঞাপন


দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে- মানুষ তাদের উন্নয়নকে গ্রহণ করেছে৷ রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে আগামী নির্বাচনে ভোটাররা নৌকার পক্ষে থাকবে বলেই প্রত্যাশা ক্ষমতাসীনদের।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারাও এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। বেশির ভাগ নেতাই এখন সময় দিচ্ছেন রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলায়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগে বেশি সময় দিচ্ছেন। তারা তৃণমূলকে শক্তিশালী করে যেকোনো বিরূপ পরিস্থিতিতেও নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছেন।

আগামী নির্বাচনে বিএনপির আসা বা না আসা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছে না আওয়ামী লীগ। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের চাপে কিছুটা অস্বস্তিতে আছে দলটি। তবে তারা বিশ্বাস করে, শেষ পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে এবং বিএনপি সেই নির্বাচনে আসবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির যে আন্দোলন অবস্থান, তা নিয়েও আওয়ামী লীগ বিচলিত নয়। কেননা সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ঘুরে যাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা মার্কিন প্রতিনিধি কেউই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে কোনো কথা বলেননি বলে দাবি করে আসছে দলটি। গত বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, 'প্রতিদিনই এক কথা, এক বুলি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আমি বিএনপি নেতাদের বলি, পৃথিবীতে এখন একটা দেশ আছে, সেই দেশে তত্ত্বাবধায়ক আছে, আমি ফখরুল সাহেবকে বলি, দলবল নিয়ে পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে তত্ত্বাবধায়ক পাবেন। আর দুনিয়ার কোথাও তত্ত্বাবধায়কের হদিস নাই। এই ভূত মাথা থেকে নামান, নির্বাচনে আসুন। নইলে আমও যাবে, ছালাও যাবে।'

সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিদেশি চাপ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমরা চাপ অনুভব করব কেন? ফ্রি, ফেয়ার ইলেকশন করা আমাদের কমিটমেন্ট। এখানে চাপ অনুভব করব কেন? যদি বলেন, চাপ, তাহলে বিবেকের চাপ।'

দলের সাধারণ সম্পাদকের সুরে সুর মিলিয়ে আওয়ামী লীগের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাষ্যও- বাংলাদেশের সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচন হবে। বিরোধী দলের সঙ্গে অন্য বিষয়ে আলোচনা হতে পারে, কিন্তু শেখ হাসিনার পদত্যাগ প্রশ্নে তারা কোনো ছাড় দেবেন না। এজন্য তারা যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে দলকে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আনতে মরিয়া। সম্প্রতি গণভবনে দলের বিশেষ বর্ধিত সভায় সেই বার্তাই দেওয়া হয়েছে তৃণমূলকে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বিষয়ে ঢাকা মেইলকে বলেন, 'সেপ্টেম্বর থেকে আমরা মাঠে নামব বিষয়টি এমন নয়। আমরা তো মাঠেই আছি। আমরা সারা বছরই ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে মাঠেই আছি। তবে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা মানুষের কাছে যাচ্ছেন। উন্নয়নের কথা বলছেন।'

নির্বাচনে বিএনপি গণতান্ত্রিকভাবে এলে আসবে। না হলে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার সাধ্য কারও নেই। নির্বাচনের ট্রেন এগিয়ে যাবেই।

 বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, 'আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে প্রতিবার ক্ষমতায় এসেছে। এবারও জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হবে।'


দলটির আরেকজন সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, 'বিএনপি নির্বাচন চায় না। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, জনগণের আস্থা-বিশ্বাস নিয়েই সরকার পরিচালনা করছে৷ আমাদের নেত্রী বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। নির্বাচনে বিএনপি গণতান্ত্রিকভাবে এলে আসবে। না হলে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার সাধ্য কারও নেই। নির্বাচনের ট্রেন এগিয়ে যাবেই।'

কারই/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর