বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ইফতার রাজনীতিতে ফিরেছে বিএনপি

মো. ইলিয়াস
প্রকাশিত: ০৮ এপ্রিল ২০২২, ১১:১৫ এএম

শেয়ার করুন:

ইফতার রাজনীতিতে ফিরেছে বিএনপি

পবিত্র রমজান মাসজুড়েই চলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ইফতার রাজনীতি। গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে ইফতার আয়োজন বন্ধ থাকলেও এবছর পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। করোনা স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকায় নেই কোনো বিধি-নিষেধ। তাই এ বছর গুরুত্ব পাচ্ছে ইফতার রাজনীতি। 

প্রতি বছর রমজানে একাধিক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে থাকে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো। গত দুই বছর করোনার কারণে ইফতার আয়োজন বন্ধ থাকলেও চলতি বছর ইফতারের আড়ালে পরিকল্পনামাফিক বিএনপি তাদের রাজনীতি চালিয়ে নিচ্ছেন। 


বিজ্ঞাপন


বিএনপি’র একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে সরকার বিরোধী রাজনীতি দলকে নিয়ে ঐক্য গঠন করা। লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য কার্যকরী ঐক্য গড়তে চায় দলটি। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিভিন্ন দলের মধ্যে রয়েছে ভিন্নতা। তাই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে কাজ করে যাচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা। 

পবিত্র রমজানে মাঠের রাজনীতি না থাকলেও ঐক্য প্রক্রিয়ার কাজটি এগিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে ইফতার আয়োজনকে কাজে লাগাবে তারা। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা রমজানে চারটি ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান ঢাকা মেইলকে বলেন, প্রথম রমজানে এতিম আলেম-ওলামাদের সম্মানে ইফতার পার্টি করেছে লেডিস ক্লাবে। এছাড়া, ১২ এপ্রিল কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার হবে হোটেল ওয়েস্টিনে। রাজনীতিবিদদের সম্মানে ইফতার হবে ২০ এপ্রিল হোটেল লেকশোরে এবং ২৮ এপ্রিল পেশাজীবীদের সম্মানে লেডিস ক্লাবে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়া, ঢাকা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকেও একাধিক ইফতার পার্টির আয়োজন করা হবে। এসব ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন এবং ২০ দলীয় জোট শরিকদের বাইরেও ইফতারে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা অংশ নেবেন। এর মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে একটা সেতুবন্ধ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা বৃহত্তর ঐক্য গড়তে সহায়ক হবে।


বিজ্ঞাপন


বিএনপি ছাড়াও জোটের শরিকরা একাধিক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করবে বলেও জানা গেছে। এসকল ইফতারে বিএনপি মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। এইসব ইফতারে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হবে। 

জানা গেছে, ২০ এপ্রিলের ইফতারকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে। এদিন জোটের বাইরেও সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। বলা যায়, এদিন ইফতারকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী ঐক্যের সূচনা হবে। বৃহত্তর ঐক্য এখান থেকেই এগিয়ে নিতে চায় বিএনপি।

এছাড়া, রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি কূটনৈতিক এবং পেশাজীবীদের নিয়ে ইফতারেও গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। ইফতারে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। ইফতারকে কেন্দ্র করে কূটনীতিকদের সাথে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায় বিএনপি। 

এছাড়া দলীয় এবং জোটের বাইরের পেশাজীবী ছাড়াও সরকারবিরোধী যে সকল পেশাজীবী রয়েছে তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। উদ্দেশ্য তাদের সাথে সম্পর্ক গড়া। সরকারবিরোধী আন্দোলনে তারা যেন ভূমিকা রাখে সেই আহ্বানও জানানো হবে। 

ইফতার কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি’র প্রত্যাশা কি জানতে চাইলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা মেইলকে বলেন, এটা একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এটাকে ঘিরে নেতাকর্মীরা এক জায়গায় হয়। অতীতেও করেছি বর্তমানে কিছু কিছু করার চেষ্টা করছি। এক জায়গায় মিলিত হলে কিছু-না কিছু ভালো মন্দ আলোচনা তো হয়। প্রত্যাশা থেকে বর্তমানে মানুষের প্রাপ্তির দিকে বেশি দৃষ্টি দিচ্ছে। সেটা হচ্ছে মানুষ দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে ভয়ঙ্কর খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নাজেহাল অবস্থা। এই সংকট থেকে বেরিয়ে জাতি যেন একটু স্বস্তির দিকে যেতে পারে এটাই হচ্ছে আমাদের প্রত্যাশা।

তিনি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং কূটনৈতিকদের নিয়ে অতীতেও আমরা ইফতার করেছি এটা খুব সাধারণ একটি ঘটনা। আলোচনার সবসময়ই চলমান বরঞ্চ সরকারি এখন বেশি তৎপর নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য। শুধু দেশে নয়, তারা বিদেশে গিয়েও সাহায্য প্রত্যাশা করছেন। বিএনপি ঘরের মধ্যে আছে, কিন্তু তারা হাজার মাইল দূরে গিয়ে আলোচনা করছে। যে কি করে বিএনপিকে তথাকথিত নির্বাচনে আনা যায়। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে কিভাবে ভালো একটা পরিস্থিতির মধ্যে পৌঁছানো যায় তা নিয়ে ইফতার মাহফিলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং কূটনীতিকদের সাথে মতবিনিময় করবে বিএনপি। 

জানতে চাইলে বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, রমজান মাসে প্রতিবছরই আমরা ইফতার আয়োজন করে থাকি। এতে নেতাকর্মীরা একত্রিত হয় বিভিন্ন আলোচনা হয়। ইফতার ঘিরে যে রাজনৈতিক গতি তৈরি হয় আমাদের সেটাই হচ্ছে। গত দুই বছর করোনার কারণে যেটা বন্ধ ছিল। এবার আবার ইফতার আয়োজন করছি। এর মধ্যে যতটা পারতেছি কাজ করছি। স্বাভাবিকভাবেই রমজানে মাঠের রাজনীতি ততটা সক্রিয় থাকে না। কিন্তু রাজনীতি তো বন্ধ থাকবে না। আমাদের দল সংগঠিত হচ্ছে কোথাও কোথাও সম্মেলন হচ্ছে। 

এমই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর