বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ঢাকার তাপমাত্রা কমাতে ‘চিফ হিট অফিসার’ যেমন ভূমিকা রাখতে পারেন

সামিয়া চাঁদ, মো. শাহিন রেজা
প্রকাশিত: ২৯ মে ২০২৩, ০১:১৭ পিএম

শেয়ার করুন:

ঢাকার তাপমাত্রা কমাতে ‘চিফ হিট অফিসার’ যেমন ভূমিকা রাখতে পারেন

আমাদের কাছে হিট অফিসার একদমই নতুন শব্দ। মে মাসের প্রথম দিকে যখন আমাদের দেশে এশিয়ার প্রথম ‘চিফ হিট অফিসার’ হিসেবে বুশরা আফরিনকে নিয়োগ দেওয়া হয় তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা হয়েছিল। অনেকে নতুন এই শব্দ সম্পর্কে না জেনে নানা নেতিবাচক মন্তব্য করতেও ভোলেননি। 

পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে ২০২১ সালের ফ্লোরিডার মিয়ামির ডেইড কাউন্টিতে বিশ্বের প্রথম চিফ হিট অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে বিশ্বের বেশ কয়েকটি শহরে চিফ হিট অফিসার রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস, মিয়ামি, গ্রিসের এথেন্স, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহর ইত্যাদি।


বিজ্ঞাপন


গত মাসের মাঝামাঝি সময় দেশে রেকর্ড পরিমাণে তাপমাত্রা বেড়েছিল। ঢাকার তাপমাত্রা কখনো কখনো ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ছিল। ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড ছাড়াচ্ছে দিনে দিনে। 

কেন তাপমাত্রা বাড়ছে? এমন উত্তর খুঁজতে গেলে প্রথমেই বেশ কয়েকটি কারণ ধরা পড়বে। এর মধ্যে ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত বৃক্ষের অভাব, অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়ন ও নগরায়ন, যানবাহন ব্যবস্থা, ঢকার অদূরে পরিকল্পনাহীনভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিল্প কারখানা যা পরিবেশের ক্ষতি করছে এবং তাপ বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। 

বিশ্বব্যাংকের ২০২১ সালের একটি প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশ প্রায় প্রতিবছরই তাপপ্রবাহের কবলে পড়তে যাচ্ছে। এখন, চিফ হিট অফিসারকে যে উদ্দেশ্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার মূলে রয়েছে তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে পদক্ষেপ নেওয়া। অর্পিত কাজ বাস্তবায়নে যেসব ভূমিকা রাখতে পারেন একজন চিফ হিট অফিসার -

১- ঢাকা শহরে বৃক্ষরোধন লোপ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাতে একটি জরিপ চালিয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক গাছ লাগাতে পারে। এছাড়া দখল হওয়া নদী-নালা, পুকুর ও জলাশয় উদ্ধার করা এবং সংরক্ষণ করা।


বিজ্ঞাপন


২- শহরের জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে পথনাটক, সভা, ডকুমেন্টারি তৈরি। পাশাপাশি মিডিয়াতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কুফল, তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধের উপায়, বৃক্ষ রোপণের গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয়ে প্রচার করা।

৩- ছাদ বাগান ও কৃষিতে নাগরিকদের উৎসাহ দেওয়া। এটি পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণেও সহায়তা করবে। 

৪- নগর-পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের নিয়ে একটি টিম গঠন করা যারা পরামর্শক হিসেবে কাজ করবে।

৫- তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে এবং পরিবেষের ক্ষতি করে এমন কাজ পরিহার নিশ্চিত করা। 

৬- পরিবেশ বান্ধব অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ ও যানবাহন ব্যবস্থা এবং শিল্প কারখানা তৈরি করা।

৭- বিশ্বের যেসব দেশ তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে দায়ী তাদের কাছ থেকে ক্লাইমেট ফান্ডে অর্থ সংগ্রহ করা এবং দেশের কল্যাণে কাজে লাগানো।

৮- দেশের বড় বড় শহরে চিফ হিট অফিসার নিয়োগ দেওয়া। সরকার, রাজনৈতিক দল ও সুধীজনদের সহায়তা নেওয়া। 

৯- পাঠ্যসূচিতে জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা।

১০- পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে বেশি সহায়তা করা।

তাপমাত্রা বৃদ্ধি আমাদের জনজীবন বিপর্যস্ত করার সাথে সাথে অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত ধুঁকির মুখে ফেলছে। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব অনুধাবন করে অতিদ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। 

লেখক: সামিয়া চাঁদ, শিক্ষক, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা এবং মো. শাহিন রেজা, সাবেক শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর