বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সত্য একবার বলতে হয়

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
প্রকাশিত: ১০ মে ২০২৩, ০১:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

সত্য একবার বলতে হয়

জন লিভগেট বলেছিলেন, যে নদীর গভীরতা বেশি, তার বয়ে যাওয়ার শব্দ কম। বাংলাদেশের শাসক দল হয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যত অর্জন গেল প্রায় পনের বছরের মধ্যে আছে, তা নিয়ে সারাদেশের নেতাকর্মীরা লিখতে পারলে, বলতে পারলে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারত, দেশ এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছে।

ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ তাই একটি সুগভীর নদীর মত, কিন্তু শব্দ কম। আওয়াজ করে জানান দেয় না, এই হচ্ছে, সেই হচ্ছে। অন্যদিকে খালি কলস বাজে বেশি…এমন চিরন্তন প্রবাদের মত করে অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো বলে বেশি, কিন্তু দায়িত্ব পেয়েও তারা কাজ করেনি, করতে চায়ও না।


বিজ্ঞাপন


গেল শুক্রবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক আমাদের শেখ হাসিনাকে একজন সফল অর্থনৈতিক নেতা হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, ‘আপনি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।’ আমার মনে হয়, নিন্দুকেরা যথাযথ জবাব পেয়ে যায়। যখন ঋষি সুনাক শেখ হাসিনাকে সামনাসামনি পেয়ে বলেন, ‘আমি আপনাকে অনেক বছর ধরে অনুসরণ করছি।’

পর্তুগিজ একটি বিখ্যাত উক্তি ছিল। তা হলো, ‘শুধু কথা দিয়ে চুলায় রুটি ওঠানো যায় না’। আমার মনে হয়, কথা দিয়ে তাই মির্জা ফখরুলেরা আর পারবেন না। তাদেরকে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য প্রদান করে বাংলাদেশের জন্য কী কী করতে চান, তা প্রমাণকরতঃ রাজনীতি করতে হবে। অন্যথায়, বিএনপি নখদন্তহীন বামধারার রাজনৈতিক দলের মত করে পরিণতি বরণ করবে।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হিসেবে তো পরিচিতই। তবে অগ্রসর জীবনের প্রতীকী উদাহরণ হিসেবে একটি নদীর মতো করে যেন বহমান। যে নদী মিশতে চায় সাগরে। ওই সেই শেখ হাসিনার শাখা-প্রশাখা হয়ে আমরা সাধারণ কর্মী হয়ে লড়তে পারলেই, ব্যাস। হ্যাঁ, রাজনৈতিক পর্যায়ে ঘাত-প্রতিঘাত থাকবে, থাকবে সামাজিক জীবনে টানাপোড়েন। টমাস মুর ভাল বলেছিলেন, ‘নদীতে স্রোত আছে, তাই নদী বেগবান। জীবনে দন্দ্ব আছে তাই জীবন বৈচিত্রময়।’

যেকোনো দেশের ভাগ্য পরিবর্তনে কার্যত স্বপ্ন দেখতে হয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম বলেছিলেন, ‘স্বপ্ন সেটা নয় যেটা মানুষ, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে; স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরণের প্রত্যাশা, মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।’


বিজ্ঞাপন


সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য যে স্বপ্ন বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন, তা ধারণ করে তার আত্মজা যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তা নিয়ে আমাদের গবেষণা বাড়াতে হবে। স্বপ্ন দেখার কাজটি অনিশেষ বাস্তবতায় ভর করুক। যেমনটি দার্শনিক ঈশ্বরমিত্র বলেও থাকেন, ‘স্বপ্ন বাঁচে ছুঁয়ে যেয়ে অতৃপ্ত প্রেমে, মগজে সফেন হয়ে ফেরে আত্মার বিশ্রামে।’

বাংলাদেশের সচেতন জনশ্রেণিকে অবশ্য সত্যি সত্যিই কিছু বিষয়ের ওপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রাজনৈতিক আবহে জোর করে টিকে থাকা সকল অপশক্তির কথিত নীতিকথার জবাবে তাদের যেতে হবে। যারা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে না, মানুষের স্বার্থ উদ্ধারে স্বপ্ন দেখতে পারে না। তাদেরকে চিহ্নিত করার কাজটি দেশের বিদগ্ধ শ্রেণিরই। এই দায়িত্ব না নিতে পারলে ভবিষ্যৎ সুখের হবে না। অর্থাৎ গুণীজন কর্তৃক সবিশেষ উদ্যোগে খারাপ বা মন্দদের দমনে যেতেই হবে। এটি শুধুমাত্র শাসকদলের কাজ নয়। বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলই কেন তা মোকাবিলা করবে? সম্মিলিত উদ্যোগে তা করতে হবে।

সর্বকালের অন্যতম সেরা এক বিদগ্ধজন আইনস্টাইন বলেছিলেন যে, ‘এই পৃথিবী কখনো খারাপ মানুষের খারাপ কর্মের জন্য ধ্বংস হবে না। যারা খারাপ মানুষের খারাপ কর্ম দেখেও কিছু করে না তাদের জন্যই পৃথিবী ধ্বংস হবে।’---ঠিক এভাবেই দেখতে হবে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্টে যারা ওঁৎ পেতে বসে আছে, তাদের রুখতে হবে। কাজেই যারা আমরা মন্দ শক্তির খারাপ কিছুকে প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত রাখি না নিজেদেরকে, সর্বনাশ একসময় দেশের হবে, বাংলার মানুষগুলোর হবে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় কথিত জাতীয়তাবাদী শক্তি মিথ্যাকে যেভাবে উপস্থাপন করে, তখন প্রয়াত হুমায়ুন আজাদের একটি বিশেষ উক্তি মনে পড়ে। তিনি বলেছিলেন, ‘সত্য একবার বলতে হয়; সত্য বারবার বললে মিথ্যার মতো শোনায়। মিথ্যা বারবার বলতে হয়; মিথ্যা বারবার বললে সত্য বলে মনে হয়।’

খুব সম্ভবত ওই রাজনৈতিক শক্তিটি মিথ্যা কথা প্রতিটি দিনে বারবার করে বলে হুমায়ূনের দ্বিতীয় ফর্মুলা ধারণকরত অনুসারী হয়েছে। তারা দেশের অর্থনীতি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়, তারা দুর্নীতির গন্ধ বের করতে চায়। মোদ্দকথা, তারা গুজব ছড়ায়। বিশ্বাস করি, সময় হয়েছে এসবের জবাব দেওয়ার। যা রাজনৈতিক উদ্যোগে নিষ্পত্তি হলে মানুষ মনে করে, দ্যাখো কিভাবে দমনপীড়ন চলছে!

‘তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দেব।’ নেপোলিয়ন বোনাপার্টের এমন উক্তি অবশ্যই জাতিগত বিনির্মাণের জায়গা থেকে উৎকৃষ্ট পর্যায়ের মতবাদ। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে শিক্ষিত মা আছেন, তা বলা যাবে না। কিন্তু দেশ পরিচালনায় এমন একজন শিক্ষিত মা শেখ হাসিনা আছেন, যার অভিভাবকত্বে আমরা এগিয়ে যেতে পারছি।

গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস বলেছিলেন, সবচেয়ে বড় জ্ঞানের পরিচয় হলো, তুমি কিছুই জানো না–এটা জানা। ব্যক্তিগত জায়গা থেকে আমি নিজেকে এভাবেই দেখি। তবে ইতিহাস সংকলন করে সত্যটা বলতে আমার ভালো লাগে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পথচলায় আওয়ামী লীগ ব্যতিরকে অন্যদের গতিরোধকের মত করে লাগে! পথ মসৃণ হওয়ার জন্য লড়াই করতে চাওয়া অন্য বলয়ের পথিকদেরকেও সু-স্বাগত বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তাদেরকে দেখি না। জনস্বার্থ উদ্ধারে আওয়ামী লীগের বিকল্প তৈরি হয়নি।

লেখক: সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর