বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

সোনালি ধানে কৃষকের হাসি

ফয়েজুর রহমান সৌখিন
প্রকাশিত: ০৮ মে ২০২৩, ০৫:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

সোনালি ধানে কৃষকের হাসি

মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন ফাল্গুন মাসে, এখনো বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়নি। জমির পাকা ধান ঘরে তুলে জামাই বাড়ির আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করে খাওয়াবেন রুহুল মোল্লা। ফলন বেশ ভালো হয়েছে, তাই তার চোখ মুখ যেন উচ্ছ্বলতার প্রতিচ্ছবি। জমির আইলে বসে বসে ভাবেন- তার মেয়ের কথা আর ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা। রাশেদ ঘরের বড় ছেলে। তাকে নিয়ে বাবার অনেক স্বপ্ন। এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। বাবা তার পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের সময় ধার করে টাকা এনে রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন। কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি কম হওয়ায় এবার ফসলি জমিতে ধানের ফলন ও ভালো তাই ধান বিক্রি করে সেই টাকা পরিশোধ করবেন। এরকম হাজারো গল্প আমেদের গ্রামের কৃষকদের।

গ্রামের প্রতিটি বাড়ির এখন ব্যস্ত পাকা ধান ঘরে তোলার জন্য সকাল থেকেই কৃষক তার জমির দিকে ছুটছে। বাড়িতে গৃহিনীরা ব্যস্ত উঠান পরিষ্কার করে ধান রাখার উপযুক্ত করতে। এ যেন এক উৎসব, চারাপশে শুধু পাকা ধানের ঘ্রাণ। কেউ কেউ আবার উঠানের পাশে আম গাছের ছা্ওয়ায় বসে ধান তোলার কাজে ব্যবহৃত পুরোনো ধামা, পইয়া, তাফাল, গোলা ঠিক করছে। আবার কারও বাড়ি ছেলে বুড়ো সবাই মিলে ভোর হতে তাফালে ধান সিদ্ধ করতে ব্যস্ত। কারও বাড়ির উঠান টইটুম্বুর হয়ে গেছে সোনালি ধানে।


বিজ্ঞাপন


কৃষকের ধান রোপন থেকে শুরু করে ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রযুক্তির ছোঁয়াও লেগেছে বেশ ভালোভাবে। কম্বাইন্ড হারভেস্টার যন্ত্রের মাধ্যমে ধান কেটে সঙ্গে সঙ্গে মাড়াই করে একেবারে খড়কুটো পরিষ্কার করছে। এতে কৃষকদের কম সময়ে ধান তোলার সঙ্গে সঙ্গে আর্থিকভাবেও সাশ্রয় হচ্ছে। তবে প্রযুক্তির কল্যাণে হারিয়ে গিয়েছে লাঙলের ব্যবহার। কাঁচি দিয়ে ধান কাটা গরুর গাড়িতে ধান বাড়িতে এনে মলনের মাধ্যমে ধান মাড়াই করার এসব প্রথা। এ প্রসঙ্গে কথা হয় কৃষক দুলহাস শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন- ‘যুগ বদলাইছে এহন। ধান কাটতি ‍কিষান পাওয়া যায় না। আর পাইলেও অনেক টাকা কিষানের দাম। তাই আমাদেরও মেশিন ব্যাবহার করতি হয়। ভালোই হইছে। ধন্যবাদ সরকারকে আমাদের এসব মেশিন ব্যবহারের সুবিধা দেওয়ার জন্য।’

একটা সময় আমাদের দেশে আউশ আমন ইরি বোরো এই ধানই বেশি চাষ হতো। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন ধানের ফলনও বৃদ্ধি পেয়েছে। ধান নিয়ে গবেষণার ফলে উদ্ভাবন হয়েছে বিভিন্ন রকম ধানের জাত। যার ফলে অল্প জমিতে ফলনও বৃদ্ধি পেয়েছে আগের তুলনায় অনেক।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, সিনিয়র লিয়াজোঁ অফিসার, মো. আব্দুল মোমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ এবং আমাদের অর্থনীতিতে বড় একটা ভূমিকা রাখে আমাদের উৎপাদিত ধান। তাই ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আমাদের প্রচেষ্টা সব সময় বিদ্যমান। আগে আমাদের দেশের ৩৩ শতাংশের বিঘায় যেখানে ১৮ থেকে ২০ মণ ধান পাওয়া যেত এখন সেখানে আমাদের উদ্ভাবিত ধান (ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২, ব্রি-১০২ এবং বঙ্গবন্ধু ১০০) চাষ করে বিঘায় ৩৩ মণেরও বেশি ধান উৎপাদন সম্ভব। যার ফলে আমাদের কৃষকেরা খুশি। একটা সময় কায়িক পরিশ্রম বেশি হওয়ায় অনেকের অনীহা থাকত। কিন্তু এখন ফলন ভালো হওয়ায় এবং প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের কৃষি ভাইদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।’

এই বোরো মৌসুমে সরকার প্রায় চার লাখ টন ধান এবং পায় ১২ লাখ ৫০ হাজার টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করবে সরকার। মে মাসের শুরু থেকে ওই অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের কাজ শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। তাই আশা করা যাচ্ছে আমাদের কৃষকরা ভালো দাম পাবে ধানের। তবে কৃষকরা আশা করছে, এর সঠিক মনিটরিং যাতে হয় এবং কোথাও যাতে কোনো সিন্ডিকেট তৈরি না হয়।


বিজ্ঞাপন


লেখক: ম্যানেজার, পি আর হাভাস মিডিয়া বাংলাদেশ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর