শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ইফতার সামগ্রী হোক কেমিক্যাল মুক্ত

আহসান হাবিব
প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৫:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

ইফতার সামগ্রী হোক কেমিক্যাল মুক্ত

নিরাপদ খাদ্যের দাবি আজ বিশ্বজুড়ে। অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য-পানীয়ের ভাবনায় আজ বিশ্ব সোচ্চার। তার মধ্যেও অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য বিশ্ববাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। পর্যাপ্ত খাদ্য এবং পুষ্টির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন না হলে মানবিক সংকট ভয়াবহ রূপ নেবে।

এ কারণে কেমিক্যাল মুক্ত খাবারের দাবিতে যখন সোচ্চার বিশ্ব তখন আমরা দেখছি মুসলিম উম্মার নেক আমলের রমজান মাসে কেমিক্যাল যুক্ত খাবারে সয়লাব বাংলাদেশের বাজার। রমজান মাসে বাহারি ইফতারির পসরা সাজিয়ে রাস্তার পাশে বসে থাকেন ব্যবসায়ীরা। ইফতারির জন্য তরমুজ, বেগুনি, আলুর চপ, খেজুর, আম, কলা, কোরমা-কালিয়া, পোলাও, বিরিয়ানি ইত্যাদি খাবারের পরিমাণ বেড়ে যায়। যার যার সাধ্যমতো চেষ্টা করে রমজান মাসে ভালো কিছু খাওয়ার জন্য।


বিজ্ঞাপন


কিন্তু পথের ধারের অধিকাংশ খাবার নিরাপদ নয়- একথা বারবার প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে। তারপরও পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ফুটপাতে মুখরোচক বাহারি ইফতারি বিক্রি করা হচ্ছে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে অপ্রচলিত খাবারের আয়োজনও আছে ইফতারির তালিকায়। বছরের অন্য সময় যেসব খাবার খুব কম খাওয়া হয়, সেসব খাবারের চাহিদা বেড়ে গেছে। চাহিদা বিবেচনায় রমজান মাসজুড়ে রাস্তার পাশে ফুটপাতে ইফতারির অস্থায়ী দোকান বসিয়েছেন বিক্রেতারা। এসব দোকানে ইফতারি কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন ক্রেতারা। রমজান মাসে এ চিত্র যেন সারা দেশের। মৌসুমি ইফতারি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি জেলা শহরের অভিজাত রেস্তোরাঁগুলোর বাইরে ফুটপাতে ইফতারির পসরা সাজানো হয়েছে। রাস্তার ধুলাবালু উপেক্ষা করেই বিক্রি করা হচ্ছে তেলে ভাজা বিভিন্ন মুখরোচক খাবার। তবে এসব খাবার কতটা স্বাস্থ্যসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ক্রেতাদের। স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি উপেক্ষা করেই ক্রেতার এসব কিনছেন।

চিকিৎসকদের মতে, ফুটপাতের খাবারে অনেক সময় ক্ষতিকর মসলা ও রং ব্যবহার করা হয়। ফলে এসব খাবার দেখতে আকর্ষণীয় ও মুখরোচক হয়। দিনভর রোজা পালন শেষে কোনো অবস্থাতেই তেলে ভাজা এসব খাবার স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অন্যদিকে খোলা জায়গায় প্রদর্শন করা এসব খাবারে ধুলা থেকে জীবাণু ছাড়াতে পারে। যা থেকে পেটের পীড়া ও বদহজম হতে পারে। এমনকি দীর্ঘমেয়াদি কিডনি, লিভারের ক্ষতিসহ বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থাকে। খোলা পরিবেশে রাস্তায় খাদ্যসামগ্রী বিক্রি কোনো অবস্থাতেই স্বাস্থ্যসম্মত হতে পারে না।

অন্যদিকে অভিজাত রেস্তোরাঁগুলোর ফুটপাতে ইফতারি বিক্রির বিষয়টিও ঠিক মনে হচ্ছে না। নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান যদি রাস্তায় নেমে আসে, তাহলে তো ভরসার কোনো জায়গা থাকে না। রাস্তায় খাবার পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলেও ঢাকার বাতাসে যে পরিমাণ ধুলা ও বিষাক্ত সব কণা তাতে এসব খাবার মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। তারপরও অবলীলায় কিনছে সবাই এসব ইফতারি। এর খাদ্যমান বিচারেও কারো যেন কোনো দায় নেই। এই দায়মুক্ত করা একান্ত জরুরি।

বিশ্বের অনেক দেশই বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে, যাতে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী খাবারের সঙ্গে কেমিক্যাল জাতীয় কোনো পদার্থ ব্যবহার করতে না পারে। অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা অকল্পনীয় হারে বেড়েছে। খাদ্যপণ্যে ভেজালের কারণেই দেশের মানুষের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যেমন- ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, উচ্চরক্তচাপ, কিডনি রোগ, কিডনি ফেইলিউর, লিভার সিরোসিস, হৃদযন্ত্রের অসুখ, চর্ম রোগ, হাঁপানিসহ আরো জটিল রোগ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।


বিজ্ঞাপন


আমাদের দেশে বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাবার না পাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে ফসলে কীটনাশকের ব্যাপক অপপ্রয়োগ এবং মাত্রাতিরিক্ত সার ব্যবহার। একই সঙ্গে মজুতদার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা খাদ্যে বিভিন্ন রাসায়নিক তথা ফরমালিন, ক্যালসিয়াম, কার্বাইড, ইথোফেন, কীটনাশক, কাপড়ের রঙ, পোড়া তেল ও মবিলমিশ্রিত তেলসহ নানা ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপকরণ, হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিক খাদ্যে মেশানো অন্যতম কারণ। এছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাদ্যেও নানা ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে। এমন কোনো খাদ্যপণ্য নেই যেখানে ভেজাল নেই।

রমজান মাসে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিষ ও ভেজালমুক্ত ইফতারির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, নিরাপদ খাদ্য সংস্থাসহ অন্যান্য সংগঠনের সহযোগিতা ও পদক্ষেপ গ্রহণ একান্ত জরুরি। ইফতারিসহ অন্যান্য খাদ্যে ভেজাল ও বিষাক্ত কেমিক্যাল প্রয়োগকারী খাদ্য সন্ত্রাসীদের শাস্তির সঙ্গে ভেজাল রোধে জনসচেতনতা তৈরি একান্ত প্রয়োজন। একশ্রেণির ব্যবসায়ী এ সময় এলেই সংযমের শিক্ষার কথা ভুলে মুনাফার লোভে খাদ্যে কেমিক্যাল মেশায়। এই সুযোগসন্ধানীরা ক্রমশই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ বাস্তবতায় রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বাজার মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন। রমজানে ব্যবসায়ীরা নৈতিক জায়গাটিকে স্বচ্ছ রাখলে সংকট হয় না। রমজান মাসে যেখানে সারা বিশ্বের মুসলমানরা ত্যাগ কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করে সেখানে আমাদের দেশে মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা যেন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। এটা রমজানের শিক্ষা নয়।

সরকার এ সময় কমমূল্যে পণ্য বিক্রির জন্য টিসিবিকে দায়িত্ব দিয়েছে। কতগুলো পণ্যের মূল্য বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। সরকারের এত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সত্ত্বেও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা অপ্রতিরোধ্য। তাদের কোনোমতেই থামানো যাচ্ছে না। রমজান মাসের স্বস্তিতে জনগণের যেন সোনার হরিণ হয়ে যাচ্ছে। সরকারকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। জনগণকেও রমজানের শিক্ষায় শিক্ষিত ও সচেতন না করলে রমজানের মহিমা কোনোমতেই সম্ভব নয়।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর