বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

সমাজকর্মে গ্র্যাজুয়েটরা হতে পারে স্মার্ট বাংলাদেশের নিয়ামক

কামরুল হাসান অভি
প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০২৩, ০৬:০৫ পিএম

শেয়ার করুন:

সমাজকর্মে গ্র্যাজুয়েটরা হতে পারে স্মার্ট বাংলাদেশের নিয়ামক

প্রযুক্তির বদৌলতে সময় এখন প্রতিনিয়ত আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল থেকে স্মার্ট হওয়ার পথে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ আমাদের দেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনা এই শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে মনে করছেন দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা। স্মার্ট বাংলাদেশের এই রূপরেখাকে চার ভাগে ভাগ করে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার।

'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার এই চারটি ভিত্তির মধ্যে রয়েছে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনোমি, স্মার্ট গভমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। তবে এই চারটি ভাগ বা ভিত্তির মধ্যে স্মার্ট সোসাইটির ধারণাটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তবে স্মার্ট একটি সমাজ গঠন করতে হলে অবশ্যই সেই সমাজের প্রতিবন্ধকতা ও সামাজিক সমস্যাগুলো আগেই খুঁজে বের করতে হবে। হাল সময় আমাদের সমাজের প্রতিটি রন্দ্রে রন্ধ্রে পচন ধরেছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সমাজের নানাবিধ সমস্যাগুলো। এর মধ্যে রয়েছে মাদকের ছড়াছড়ি, খুন, গুম, চুরি, ডাকাতি, দুর্নীতি, ধর্ষণ, যৌতুক, বাল্য বিবাহ, যৌন নিপীড়ন, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, মানবাধিকার ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যার মতো হাজারো সমস্যা সময়ের সাথে সাথে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।


বিজ্ঞাপন


এসব সমস্যার জন্য আমাদের সমাজের ভিত্তিমূলে তৈরি হয়েছে ভীষণ রকম সামাজিক অবক্ষয়। সমাজের বিদ্যমান এসব সমস্যা সমাধান না করে কখনোই একটি স্মার্ট সোসাইটির স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তবে এসব বিশেষ চিহ্নিত সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন কার্যকর পেশাদার সমাজকর্মী। আর একজন দক্ষ সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করতে হলে প্রথমত প্রয়োজন বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান। সমাজকর্ম সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পাশাপাশি এটি আন্তর্জাতিক তথা উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে বেশ সমাদৃত একটি বিষয়। কেননা সমাজ ব্যবস্থাপনায় যে কাজের মাধ্যমে সমাজের ইতিবাচক ও গঠনগত পরিবর্তন করে সমাজের আমূল চিত্র বদলে ফেলা হয়, তা-ই হচ্ছে সমাজকর্ম।

বাংলাদেশে সমাজকর্মের আবির্ভাব পঞ্চাশের দশকের শুরুতে হলেও বৈশ্বিকভাবে ১৮৯৮ সালে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে এবং বিশ শতকের গোড়ার দিকে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পঠিত হয় সমাজকর্ম বা আধুনিক সমাজকল্যাণ। বিষয়বস্তু হিসেবে সমাজকর্ম যথেষ্ট বিজ্ঞানসম্মত ও বৈচিত্র্যময়। কারণ সমাজকর্ম বিষয়টি শুধু সামাজিক বিজ্ঞানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এ বিষয়ের সঙ্গে অর্থনীতি, নৃবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আইন, মনোবিজ্ঞান, দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়গুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একজন সমাজকর্মী যে ইস্যু নিয়ে কাজ করবেন, সে ইস্যু নিয়ে ভালো ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে তিনি তার বৈজ্ঞানিক গবেষণানির্ভর জ্ঞান প্রয়োগ করতে পারবেন সমস্যা সমাধানে। সমাজকর্মীর নীতিগত ও কর্মমুখী পেশাদারিত্ব, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা আরোপের মাধ্যমে একটি সমাজের ভিত্তিমূল তৈরি হয়।

আধুনিক বিশ্বে হাতেগোনা কয়েকটি বিষয় হচ্ছে পেশাকেন্দ্রিক বিষয়। তার মধ্যে সমাজকর্ম বিষয় অন্যতম। সমাজের ভিত্তি স্থাপন ও কাঠামোগত ভিত মজবুত করে সমাজকর্মীরা। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় সমাজের সঠিক পরিচর্যা ও ভিত্তি গঠিত হয় সমাজকর্মীর মাধ্যমে। সমাজের বিশেষ লক্ষ্য পূরণ ও চিহ্নিত সমস্যা সমাধান করে একটি আদর্শ সমাজ বা সম্প্রদায় গঠন করাই হচ্ছে সমাজকর্মের মুখ্য উদ্দেশ্য। যার ফলে উন্নত বিশ্বে এই কাজগুলো সম্পাদন করে একজন পেশাদার সমাজকর্মী। এ কারণে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সামাজিক সমস্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। বিশ্বে এমন অনেক দেশ আছে যে দেশগুলোর অপরাধ প্রতিনিয়ত কমছে। এতে ওই দেশগুলোর পুনর্বাসন কেন্দ্র, অপরাধ নির্মূল কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। ওই দেশগুলোর এই অবস্থানে নিয়ে আসার মূল কারিগর হচ্ছে পেশাদার সমাজকর্মীরা।

প্রতি বছর মার্চ মাসের তৃতীয় মঙ্গলবার সমাজকর্মের প্রচার, প্রসার ও মানব সম্পর্কের উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় বিশ্ব সমাজকর্ম দিবস। এ বছরের বিশ্ব সমাজকর্ম দিবস পালিত হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও প্রতি বছর সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালন করা হয় বিশ্ব সমাজকর্ম দিবস।


বিজ্ঞাপন


তবে আমাদের দেশে সমাজকর্ম বিষয় চালুর এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও সমাজকর্মের স্বীকৃতি অর্জন এখনো মেলেনি। তাই এ বছরের বিশ্ব সমাজকর্ম দিবসে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর ন্যায় আমাদের দেশেও সমাজকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার যাবতীয় প্রক্রিয়া গ্রহণ করা অতি জরুরি। সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদফতর, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় প্রভৃতি প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়গুলো সমাজকর্মের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সে জন্য এ মন্ত্রণালয়গুলোর নিয়োগ পরীক্ষায় স্নতক সমাজকর্মদের আধিকার প্রাধান্য দিতে হবে। ইউনিয়ন সমাজকর্মী, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার, জেলা সমাজসেবা অফিসার এই পদগুলোতে স্নাতকধারী সমাজকর্মদের জন্য সংরক্ষিত করতে হবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সমাজকর্মে স্নাতকদের জন্য উচ্চতর শিক্ষা অর্জনে বিভিন্ন স্কলারশিপ চালু করতে হবে।

এছাড়া প্রতিটি সমাজকর্মীকে সরকারিভাবে নিবন্ধিত হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে একজন সমাজকর্মী ব্যক্তিগত উদ্যোগে ডাক্তার প্রকৌশলী, শিক্ষকের ন্যায় সমাজের গঠনগত পরিবর্তন আনয়নে কাজ করতে পারে। বিশ্ব সমাজকর্ম দিবসে একজন সমাজকর্ম হিসেবে পড়ুয়া শিক্ষার্থী হিসেবে প্রত্যাশা ও আশাবাদ ব্যক্ত করি যে, অচিরেই সমাজকর্মের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে লাভবান হবে সমাজের প্রতিটি মানুষ। সমাজের মানুষ হয়ে উঠবে আরও সৃজনশীল আধুনিকমনস্ক স্বশিক্ষিত। এটাই হোক বিশ্ব সমাজকর্ম দিবসের প্রকৃত প্রতিপাদ্য ও স্লোগান।

লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজর্কম বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; সভাপতি রাবি প্রেসক্লাব।

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর