শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

শিক্ষক দিবস, শিক্ষকদের অবস্থা ও শিক্ষা ভাবনা

শাহ জালাল মিশুক
প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০৩:০৯ পিএম

শেয়ার করুন:

শিক্ষক দিবস, শিক্ষকদের অবস্থা ও শিক্ষা ভাবনা

একজন মানুষের মধ্যে যেসব গুণ বিদ্যমান, সেগুলো পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করতে শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই শিক্ষা জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির ধারক ও বাহক। শিক্ষা কথাটি এলেই প্রথমে যে কথাটি আসে তা হলো শিক্ষক। শিক্ষক হলো শিক্ষার মূল উৎস কিংবা প্রাণ। কেননা, শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত উৎকর্ষ নির্ভর করে শিক্ষকের মানবিক দিক, পেশাগত দক্ষতা, নিষ্ঠা ও প্রচেষ্টার ওপর। মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষকরাই মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের সঙ্কট উত্তরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন।

শিক্ষক দিবস হলো শিক্ষকদের সম্মানে পালিত একটি বিশেষ দিবস। বিশ্ব শিক্ষক সংঘ তথা বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের ক্রমাগত প্রচেষ্টায় ১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর প্যারিসে অনুষ্ঠিত বিশেষ আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্মেলনে শিক্ষকের অধিকার, কর্তব্য ও মর্যাদা-বিষয়ক সনদ ইউনেস্কো-আইএলও সুপারিশ ১৯৬৬ প্রণীত হয়। ১৯৯৪ সালের ৫ অক্টোবর ইউনেস্কোর ২৬তম অধিবেশনে সংস্থার তৎকালীন মহাপরিচালক ফ্রেডারিক এম মেয়র এডুকেশন ইন্টারন্যাশনালের অনুরোধে ৫ অক্টোবরকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।


বিজ্ঞাপন


দেশে গত কয়েক বছরে শিক্ষা খাতে উন্নয়নের জন্য নেয়া হয়েছে নানাবিধ উদ্যোগ। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন, প্রাথমিক শিক্ষায় প্রায় শতভাগ ভর্তি, ২৬,১৯২টি বিদ্যালয়ের ১,০৪,০০০ জন শিক্ষককে জাতীয়করণ, নতুন প্রজন্মকে আইটি খাতের ‘দক্ষ জনশক্তি’ হিসেবে গড়ে তুলতে সারাদেশে ১৪ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, বিনামূল্যে বই বিতরণ, উপবৃত্তি প্রচলন, নতুন নতুন একাডেমিক ভবন তৈরি, এনটিআরসির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ, স্বল্পসময়ে ফলাফল ঘোষণা ইত্যদি।

সকল স্তরের শিক্ষকদের মতো আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রদেয় সুযোগ-সুবিধার চিত্রও একই। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে তুলনা করলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা বেতনের দিক থেকে বেশ পিছিয়ে। কয়েকটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন স্কেল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে একজন প্রভাষকের মূল বেতন ২২ হাজার টাকা, সহকারী অধ্যাপকের ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, সহযোগী অধ্যাপকের ৫০ হাজার টাকা এবং অধ্যাপকের ৬৪ হাজার ৬০০ টাকা। তবে ভারতসহ পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রভাষকের পদ নেই। সহকারী অধ্যাপকই শুরুর ধাপ। বেতন তুলনা ও ক্যারিয়ার সংস্থান বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘স্যালারি এক্সপ্লোরার’-এর তথ্য মতে, ভারতে একজন সহকারী অধ্যাপকের মূল বেতন ৪৭ হাজার ৩০৪ রুপি, সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপকের ৫৬ হাজার ৪৮০ রুপি, সহযোগী অধ্যাপকের এক লাখ সাত হাজার ৭৪৮ রুপি এবং অধ্যাপকদের এক লাখ ১৬ হাজার ৭০ রুপি। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন আরো বেশি।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি আবাসিকতার সঙ্কটও বেশ তীব্র। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের আবাসিক সুবিধা প্রদান করা হলেও বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে নামকাওয়াস্তে শিক্ষকদের এই সুবিধা প্রদান করা হয়। আবার শিক্ষকতা পেশাটিতে আসা মানুষগুলো দিনের পর দিন নানা সঙ্কট এবং অব্যাবস্থাপনার কারণে তাদের মেধার সর্বোচ্চটুকু উজাড় করে দেওয়ার আগ্রহ থাকলেও সেটি হয়ে উঠছে না।

মোদ্দাকথা হলো, শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষিত ও উন্নত জাতি গঠনের অবিরাম প্রচেষ্টাটি অব্যাহত রাখতে হলে সব বৈষম্য রোধে সচেতনতার বিকল্প নাই। সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য রোধে নিয়ম পরিবর্তন করে সেটি বাস্তবায়নে কঠোর হতে হবে। এছাড়াও শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কমিশন গঠনপূর্বক উপযুক্ত সম্মানীর ব্যবস্থা করা, নানা সুবিধাদি বৃদ্ধি ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ করা দরকার। তবেই সুনিশ্চিত হবে আমাদের আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যৎ।


বিজ্ঞাপন


লেখক: শাহ জালাল মিশুক, সহকারী অধ্যাপক, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর