বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সাকরাইন উৎসবের নামে কী হচ্ছে পুরান ঢাকায়?

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:০২ পিএম

শেয়ার করুন:

সাকরাইন উৎসবের নামে কী হচ্ছে পুরান ঢাকায়?

সাকরাইন উৎসবের নামে যারা গতকাল (১৩ জানুয়ারি) সারারাত বিকট শব্দে গানের তালে ডিজে করেছে, এখনও যারা গোটা পুরান ঢাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে তাদের কী বাসায় বাবা-মা নেই? পুরো বাড়িতে বয়স্ক, শিশু, অসুস্থ মানুষ নেই? এলাকায়/মহল্লায় কেউ কিছুটা সীমিত আকারে গান-বাজনার জন্য বলবে তেমন লোক একজনও নেই? জনপ্রতিনিধি দাবি করা কাউন্সিলেরও কী একটু বারণ করার সাহস নেই? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষেও কি মানুষকে স্বস্তি দিতে এগিয়ে আসার সুযোগ নেই?

পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের মধ্যে যারা সাকরাইন পালন করবে তাদের আজকে পালন করার কথা। নানা কারণে ব্যস্ত থাকা মানুষ একদিন একটু ফূর্তি করে সময় কাটাক তাতে খুব খারাপ দেখছি না। কিন্তু তাই বলে একদিন আগে থেকে সন্ধ্যা হতে ভোর অবধি সাউন্ডবক্সে বিকট শব্দে গান ছেড়ে ডিজের তালে নাচানাচির মানে কী? 


বিজ্ঞাপন


অতীতের ইতিহাস বলে আজকে এই আয়োজনে থাকা ছেলে-মেয়েরা দিনভর গান বাজাবে, বিকালে ঘুড়ি উড়াবে, ঘুড়ি কেটে আনন্দ করবে, সন্ধ্যায় ফানুস ওড়াবে, মুখে করোসিন নিয়ে আগুন নিয়ে খেলবে, ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ছেলে-মেয়েরা আসবে। ছাদে বসে ডিজের তালে নাচবে। ফাঁকে ইভটিজিং করবে। এ নিয়ে দফায় দফায় ঝগড়া হবে। এক গ্রুপ নেশাপানি করে মাতলামি করবে। মাত্রা বেশি হলে রাস্তায় নেমে আসবে!

sakrain

আমার প্রশ্ন- তুমি চাইলে নীরবে-নিভৃতে বাসায় বসে করো তাতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তিনদিন পুরান ঢাকার সর্বস্তরের মানুষকে অতিষ্ট করার অধিকার কে দিয়েছে এই যুবকদের? 

অন্য প্রসঙ্গে আসি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেকটি বিষয় প্রায়ই দেখা যায়, তা হলো- রাতের ওয়াজ-মাহফিল নিয়ে আমরা অনেকেই সরব। কেউ বলি ধর্ম ব্যবসা। কেউ বলি হুজুরদের জ্ঞানবুদ্ধি নেই! বয়স্ক, শিশু, অসুস্থদের কথা চিন্তা না করে বিকট শব্দে মাইকে ওয়াজ করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। 


বিজ্ঞাপন


ওয়াজ-মাহফিলকে কেন্দ্র করে মধ্যরাত কখনো বা তার চেয়ে কম সময় পর্যন্ত মাইক বাজলে আমরা চটে যাই। অমানবিক বলে হুজুরদের ধুয়ে দেই। 

এমন সমালোচকদের বলব- আল্লাহর ওয়াস্তে একটু পুরান ঢাকায় ঘুরে যান। দেখে যান উৎসবের নামে এখানে কি করতেছে কতিপয় ‘উশৃংখল’ যুবক। অথচ সাকরাইন বা পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি উড়ালে কোনো শব্দ হওয়ার কথা না। কারণ ঘুড়ি উড়লে তো শব্দ হয় না।

sakrain

যদিও সাকরাইনের নামে এমন শব্দ দূষণ নিয়ে সেই অর্থে ফেসবুক গরমও কেউ করছি না। কারণ ওয়াজ মাহফিল নিয়ে সরব করা যতটা সহজ, এটা হয়তো ততটা সহজ না। কিন্তু বিবেক বলে ন্যায়সঙ্গত কথা নিজের গায়ে পড়লেও বলার সাহস থাকতে হবে। 

তথ্য অনুযায়ী, বাংলা পৌষ মাসের শেষে শীত মৌসুমের বার্ষিক উৎসবকে ‘সাকরাইন উৎসব’ নামে পালন করা হয়। উৎসবটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হলেও অনেক বছর ধরে পুরান ঢাকায় পালিত হচ্ছে সাকরাইন উৎসব। যাকে ‘পৌষ সংক্রান্তি’ বা ঘুড়ি উৎসবও বলা হয়ে থাকে।
 
তবে বাস্তবতা হলো- যারা একসময় পৌষ সংক্রান্তি বা সাকরাইন পালন করা সানতন ধর্মালম্বীদের চেয়ে মুসলমানদের সন্তানরাই কেন যেন বেশি সক্রিয়। 

আবারও ওয়াজ মাহফিল ঘিরে নাগরিকদের সমালোচনার বিষয়গুলো উল্লেখ করা যাক। এই কথাগুলোর যৌক্তিকতাও হয়তো আছে। সেক্ষেত্রে কোরআন-হাদিসের বাণী প্রচারের এমন আয়োজনে কোনো পরিবর্তন আনা যায় কিনা সেটা নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। যদিও ইদানিং অনেক জায়গায় রাতে নয়, দিনে হচ্ছে ওয়াজ মাহফিল। এটাও একটা পরিবর্তন। মাহফিলে আসা আলোচকরা অনেকে মানুষের শব্দে কষ্ট হবে এসব বিবেচনায় বেশি রাত পর্যন্ত আলোচনা করতে অনীহা দেখাচ্ছেন। এটাও পরিবর্তনের আলামত। আর কি করা যায় সে নিয়েও নিশ্চয়ই ভাববেন সংশ্লিষ্টরা।

একটা সরল কথা বলি। গ্রাম থেকে শুরু করে শহর অঞ্চলেও রাতে ওয়াজ মাহফিল নতুন কিছু নয়। যুগের পর যুগ ধরে চলছে। হক্কানি পীর-আউলিয়ারা ঘুরে ঘুরে কোরআন-হাদিসের আলোকে মানুষকে ধর্মের দীক্ষা দিয়েছেন। যুগের সঙ্গে সঙ্গে মাইক বা অন্যান্য প্রযুক্তি আসায় ধর্মীয় আলোচনা শব্দযন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এতে করে একসঙ্গে বেশি মানুষের কাছে ধর্মের বাণী পৌঁছানো সহজ হয়েছে। এখন ইন্টারনেটের কল্যাণে ফেসবুক, ইউটিউবেও শোনার সুযোগ হচ্ছে। 

তবে ধর্মীয় আলোচনার নামে যারা মিলিয়ে মিলিয়ে গালগল্প, বিষোদগার, গানের তালে ওয়াজ করার চেষ্টা করেন তাদের নিয়ে আমারও কষ্ট হয়। ফলে এমন আলোচকদের আমন্ত্রণ না জানালে আলোচনায়ও পরিবর্তন আসতে বাধ্য। 

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর