সোমবার, ৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

জলবায়ু উদ্বাস্তু মোকাবেলায় নজর দেওয়ার সময় এখনই!

মোহাইমিনুল ইসলাম জিপাত
প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:২৫ এএম

শেয়ার করুন:

জলবায়ু উদ্বাস্তু মোকাবেলায় নজর দেওয়ার সময় এখনই!

জলবায়ু পরিবর্তন শুধু একটি সমাজ কিংবা দেশের নয় এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে  অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, দাবানল, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততাসহ নানা রকম প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা দেয়। এসব প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ।

১৯৯০ সালে প্রকাশিত আইপিসিসি-র ফার্স্ট এসেসমেন্ট রির্পোর্টে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় প্রভাব হিসেবে মানুষের স্থানান্তরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইউএনএইচসিআর এর তথ্য মতে, ২০১০ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বে ২ কোটি ১৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং অস্ট্রেলিয়ার ইনিস্টিটিউট ফর ইকোনমিক্স এন্ড পিস  ইকোসিস্টেম থ্রেট রেজিস্টার শীর্ষক ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের কমপক্ষে ১০০ কোটি মানুষ তাদের বাড়িঘর হারাতে পারে।


বিজ্ঞাপন


জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রথম সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমঞ্চাল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নানা রকম দূর্যোগের শিকার হচ্ছে। বঙ্গোপসাগেরর উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এইসব কারণে সেখানকার মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিতে নিজ ভিটেমাটি ছাড়া হচ্ছে। ইন্টানাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার এর তথ্য মতে, প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় ৭ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুতি ঘটছে। বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ২০৫০ সালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত হতে পারে আনুমানিক ১ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ। 

জলবায়ু সংকটের  প্রভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে উপকূলীয় এলাকার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিচ্ছে শহরে, ঢাকা সহ বড় বড় শহরগুলোর বস্তি এলাকাগুলোতে তাদের বসবাস। এই কারনে ঢাকা সহ বড় বড় শহর গুলো ঘনবসতি থেকে আরো ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। বড় শহরগুলোতে আশ্রয় নিলেও এইসব বাস্তুচ্যুত মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। বলা যায় অভ্যন্তরীণ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাস্তুচ্যুত মানুষদের টেকসই সমাধান দিতে না পারলে বাস্তুচ্যুত মানুষদের শহরমুখী  হওয়া ফেরানো যাবে না।

জলবায়ু সংকটের জন্য বাংলাদেশ উন্নত বিশ্ব গুলোর কাছে প্রতিবছর আর্থিক সাহায্য চেয়ে থাকে যার মধ্যে  ২০২২ সালে মিশরে  কপ-২৭ সম্মেলনে ১৯৮ টি দেশের সম্মতিতে  লস এন্ড ডেমেজ তহবিল গঠন করা হয়। বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের এই লস এন্ড ডেমেজ ফান্ড থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা কমাতে এই ফান্ডকে কাজে লাগানো যেতে পারে। বাস্তুচ্যুতি যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তা কমিয়ে আনা সম্ভব যদি সঠিক কৌশল ও উপযুক্ত নীতি গ্রহন করা হয়।

উল্লেখ্য, জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে অভন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির ঘটনা বাড়বে। এইক্ষেত্রে বাস্তুচ্যুতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোতে বাস্তুচ্যুতি জনগণকে সংশ্লিষ্ট করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের এক বৃহত্তম ক্ষতির রূপ হতে যাচ্ছে বাস্তুচ্যুত এই সমস্যা সমাধানে এখন থেকে পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


লেখক: শিক্ষার্থী, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ও ট্রেলব্লেজিং ইয়াং ক্লাইমেট লিডার, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস

ডিএইচডি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর