মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

লাল-সবুজের পতাকা ও বাংলাদেশ

আহসান হাবিব
প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:২৫ এএম

শেয়ার করুন:

লাল-সবুজের পতাকা ও বাংলাদেশ

মহান বিজয় দিবস বাঙালির ইতিহাসে এক গৌরবোজ্বল দিন, মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন। ১৬ কোটি বাঙালি সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করবে দেশের বীর সন্তানদের। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেয় বাঙালি জাতি। দেশের প্রতিটি প্রান্তে শুরু হয় বিজয়ের মিছিল। আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে পুরো বাঙালি জাতি। যাদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পেয়েছে লাল-সবুজের পতাকা।

বাংলার সবকিছু শোষণ-ত্রাসনে রেখে পাকিস্তানি শাসকরা চেয়েছিল বাঙালির সাহিত্য, সংস্কৃতি, জীবনবোধ- সব হবে পাকিস্তানি শাসকদের চাপিয়ে দেয়া ভাষাকেন্দ্রিক। তাহলে টিকে থাকে তাদের কর্তৃত্ববাদী শাসন। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত সাংবাদিক রবার্ট পেইনের ‘ম্যাসাকার’ নামক গ্রন্থে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত এক সামরিক বৈঠকে ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন, ‘ওদের ৩০ লাখ মেরে ফেলো। বাদবাকিরা আমাদের হাত থেকেই খেয়ে বেঁচে থাকবে (কিল থ্রি মিলিয়ন অব দেম, অ্যান্ড দ্য রেস্ট উইল ইট আউট অব আওয়ার হ্যান্ডস)। কিন্তু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতার মধ্য দিয়ে বদলে যায় পাকিস্তানিদের স্বপ্নের সাজানো বাগান। তারপর ২৫ মার্চ বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে শুরু হয় গণহত্যা। অপারেশন সার্চলাইট নামে এই গণহত্যায় ঢাকায় একদিনে মারা যায় ৩০ হাজার মানুষ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী ৯ মাস ধরে সব রীতি-নীতি, আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে বাঙালিদের হত্যা, অত্যাচার-নির্যাতন করলেও প্র্রাণ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। কারারুদ্ধ করে জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। অতঃপর বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের বুকে রচিত হয় নতুন ইতিহাস। পৃথিবীর মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে আরেকটি দেশ, যার নাম বাংলাদেশ।


বিজ্ঞাপন


১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পরাজয় মেনে নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণের দলিলে সই করেন পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজি। বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন মিত্রবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে ভোর থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়নে পালিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি। সারাদেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতসহ আজ সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।

৩০ লাখ মানুষের প্রাণ বলিদান হলো মাত্র ৯ মাসেই। সম্ভ্রম হারালো ২ লাখ মা-বোন। হাজারো ঘরবাড়ি, স্থাপনা ভস্মীভূত হয়ে দেড় কোটি লোক হলো উদ্বাস্তু। সেদিনের সেই ত্যাগের বিনিময়েই স্বাধীন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। প্রতি বছর বিজয় দিবস এলেই তাই চলচ্চিত্র, কবিতা, নিবন্ধ, গণমাধ্যমে  ফুটিয়ে তোলা হয়।  কিন্তু তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়- যে বাংলাদেশ চেয়ে একসাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হলো দেশ সে বাংলাদেশ কি আমরা পেয়েছি? সারাদেশের মানুষ যেদিন তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখবে সেদিন মনে হবে আমাদের দেশগড়ার যুদ্ধ সার্থক হয়েছে। লাল-সবুজের পতাকার মধ্যে বিম্বিত হয় অযুত শহীদের অবয়ব। আমাদের চেতনাকে শানিত করতে প্রতিদিন ডাক দিয়ে যায় অযুত শহীদ।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর