রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রত্যাশা

অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার
প্রকাশিত: ০৯ নভেম্বর ২০২২, ১২:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রত্যাশা

মিশরের শার্ম আল শেখ। বহু আন্তর্জাতিক সঙ্কটের মীমাংসার ইতিহাস যে ভেন্যুতে, সেখানেই এবারের জলবায়ু সম্মেলন। প্রায় দু’শ রাষ্ট্রের প্রতিনিধি নিয়ে শুরু হয়েছে ২৭তম জলবায়ু সম্মেলন। ২৭তম জলবায়ু সম্মেলন ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর জন্য বাঁচা মরার লড়াই। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির মুখে আছে মিশর ও বাংলাদেশসহ বহু দেশ। গেলো বছরের বন্যা-খরা, অতিরিক্ত তাপদাহ ও ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দূর্যোগের ঘটনাগুলো এবারের সম্মেলনের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। 

জাতিসংঘ বলছে, ভূ-রাজনীতির কারণে জ্বালানি, খাদ্য ও পানির সংকটে আছে বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ। আর তাই, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর উপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু, হতাশাই যেনো এই সম্মেলনের রেওয়াজ। যা উঠে এলো জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেসের কণ্ঠেও, তিনি বললেন, জলবায়ু নরকের মহাসড়কে বিশ্ব। কারণ, গেলো এক বছরে জাতিসংঘ সম্মেলনের অর্জনের খাতাটা প্রায় শুন্য। সম্মেলনের তৃতীয় দিনের আলোচনায় ছিলো যুদ্ধ পরিস্থিতিতে জ্বালানি সংকট, নিরাপদ খাদ্য আর জলাবায়ু জনিত ক্ষয়ক্ষতির অর্থ যোগান। এবারও ক্ষতিপূরণ আর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আধুনিক প্রযুক্তি পাওয়ার দাবি জানাচ্ছেন বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো। 


বিজ্ঞাপন


এবার যেহেতু বেশি দেশ সম্মেলনে অংশ নিয়েছে, তাই সংকট সমাধানে ভালো কিছুর প্রত্যাশা বাংলাদেশের। তবে, রুশ- ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে তৈরি হওয়া জ্বালানি সংকট সমাধানের দিকেই নজর বিশেষজ্ঞদের। বরাবরের মতো এবারও জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশগুলোর বিপুল ক্ষতি আর হুমকিতে থাকার বিষয়টি জোরালো ভাবেই সম্মেলনে উঠে এসেছে।

বিশ্ব নেতৃত্ব, কূটনীতিক বা বিভিন্ন দেশের দূত, বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধি এবং সিভিল সোসাইটির সদস্যবৃন্দ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু এজেন্ডাকে আরও গতিশীল এবং অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌঁছায়। ইমপ্লিমেন্টেশন যেহেতু এবারের জলবায়ু সম্মেলনের মূল বিষয় তাই এই সম্মেলনে ‘ফুড সিকিউরিটির’ উপর একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে জলবায়ুর বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু সহনশীল কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আরও বেশি পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। 

এছাড়া, ‘জাস্ট ট্রানজিশন’ এর উপর একটি গোলটেবিল বৈঠক জলবায়ু সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয় যেখানে জলবায়ু নেতৃবৃন্দ এবং স্টেকহোল্ডারগন জাস্ট ট্রানজিশনের উপায় এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন যাতে স্থানীয় এবং বৈশ্বিক ক্লাইমেট এ্যাকশন মানুষ ও পৃথিবী রক্ষা নিশ্চিত করে। এছাড়া, বিশ্ব নেতারা ‘ইন্নোভেটিব ফাইন্যান্স ফর ক্লাইমেট এন্ড ডেভেলপমেন্ট’ শিরোনামে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এতে বিশ্বনেতৃত্ব ও স্ট্রোকহোল্ডারগণ জলবায়ু ঝুঁকি রোধে সরকারি ও বেসরকারি উভয় উৎসের অর্থের সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত ব্যবহারের জন্য একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য মত প্রকাশ করেন।

এছাড়া, জলবায়ু সম্মেলনের তৃতীয় দিনে বিশ্বের উন্নত দেশের কার্বন নিঃসরণকারী কোম্পানিগুলোকে অ্যাকাউন্টেবল করার বিষয়, বিশ্বের উন্নয়নশীল এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ক্লিন এনার্জিতে স্থানান্তরের জন্য বিশ্বের উন্নত ও কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর আর্থিকভাবে এবং প্রযুক্তিগতভাবে সহযোগিতার বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে। এমন অবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনা করে আলাদা তহবিল গঠন, খাদ্য নিরাপত্তার নিশ্চিতকল্পে খাদ্য উৎপাদনে টেকনোলজির ব্যবহার এর জন্য উন্নত রাষ্ট্রের সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি রোধকল্পে সরকারি ও বেসরকারি উভয় উৎসের অর্থের সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত ব্যবহারের জন্য ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থেকে বের হয়ে আসতে পারে।


বিজ্ঞাপন


গত ৩০ বছর ধরে উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি রোধে ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় উন্নত ও কার্বন নিঃসরণকারী রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করে আসছিল। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান দেশসহ উন্নত রাষ্ট্রগুলো এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছিল না। তবে, এবারের সম্মেলনে এই ধারার ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো সম্মেলনে বলেন, ইউরোপিয়ান দেশগুলো শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছে। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ নন ইউরোপিয়ান দেশগুলোকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানান। 

তাছাড়া, মঙ্গলবার স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজিঅন কপ২৭ সম্মেলনে লস অ্যান্ড ড্যামেজের ক্ষতিপূরণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ৫.৭ মিলিয়ন ডলার প্রধানের অঙ্গীকার করেন। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিশেল মার্টিন সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার প্রদানের অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করেন। এছাড়া, অস্ট্রিয়ার জলবায়ু মন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার প্রদানের অঙ্গীকার করেন।

লেখক: চেয়ারম্যান, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)

ডিএইচডি/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর