সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ঢাকা

দৃষ্টিহীন ব্যক্তির অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তা

মোহাম্মদ শাহী নেওয়াজ
প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০২২, ১১:০৮ এএম

শেয়ার করুন:

দৃষ্টিহীন ব্যক্তির অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তা

প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে বেঁচে থাকার। প্রত্যেকে চায় মানুষ হিসেবে মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্র নাগরিকের অধিকারসমূহ বাস্তবায়নে বিবিধ উদ্যোগ ও কর্মসূচি গ্রহণ করে। একটি রাষ্ট্রে বসবাসকারী সকল নাগরিকের অবস্থান সমান নয়। শারীরিক সক্ষমতা, মানসিক সক্ষমতা, আর্থিক সক্ষমতা ও আঞ্চলিক ভেদে মানুষের মধ্যে অবস্থানগত ভিন্নতা আছে। সমাজের সুস্থ ও সক্ষম মানুষ যারা রাষ্ট্রের সকল সুযোগ ভোগ করতে পারে অনায়াসে। প্রয়োজনে অধিকার আদায়ে লক্ষ্যে তারা প্রতিবাদ, সংগ্রাম বা সমাবেশ করার পথ বেছে নেয়। কিন্তু যাদের শারীরিক সক্ষমতা নেই তাদের কী হবে! বিশেষত যারা অন্ধ, দৃষ্টিহীন বা চোখের আলো নেই তাদের কি হবে! কী তাদের পথ চলার উপায়! বর্ণিল এ পৃথিবী একজন দৃষ্টিহীনের নিকট সাধহীন, গন্ধহীন ও নিরান্দময়। মনের আলোতেই তারা সাজাতে চায় এ জগৎ। জীবন চলার পথে তারা পাশে চায়, সমাজের সুস্থ, সক্ষম ও কল্যাণকামী মানুষকে।

আজ ১৫ অক্টোবর, বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস। দৃষ্টিহীন মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। সমাজের সক্ষম মানুষগুলোর প্রতি দৃষ্টিহীন ব্যক্তির আবেদন, পথ চলায় তারা পাশে থাকুক। প্রাচীনকাল হতে দৃষ্টিহীন মানুষ অধিকার বঞ্চিত ও অবজ্ঞার শিকার। দৃষ্টিহীনের অধিকার আদায়ের যাত্রা শুরু হয় ১৯২১ সালে। ইংল্যান্ডোর ব্রিষ্টল শহরে জেমস গিবস নামের একজন ফটোগ্রাফার দূর্ঘটনায় তার দৃষ্টিশক্তি হারান। স্বাধীন পথ চলার প্রতীক হিসেবে তিনি প্রথম ব্যবহার করেন সাদা রঙ্গে রঞ্জিত লাঠি। পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন দৃষ্টিহীন ব্যক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মার্কিন কংগ্রেসে সর্ব প্রথম ১৯৬৪ সালের ১৫ অক্টোবরকে ‘বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস’ পালনের বিল অনুমোদন করেন। এ ধারাবাহিকতায় ১৯৬৯ সালে শ্রীলংকার কলম্বোতে অনুষ্ঠিত হয় ‘International Federation of Blind (IFB)’ সম্মেলন। উক্ত সম্মেলনে ৬৯টি দেশের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও কর্মরত সংগঠনের সদস্যবর্গের উপস্থিতিতে প্রতি বছর ১৫ অক্টোরকে বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যা ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সর্ব সম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। ১৯৯৬ সাল হতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রতিবছর রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়: ‘দৃষ্টিজয়ে ব্যবহার করি, প্রযুক্তি নির্ভও সাদাছড়ি।’


বিজ্ঞাপন


সাদাছড়ি নিরাপত্তা এর শাব্দিক বিশ্লেষণ হলো ‘সাদাছড়ি’ ও ‘নিরাপত্তা’। ‘সাদাছড়ি’ অর্থ হলো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রতীক। স্বাধীন পথ চলার মাধ্যম। ‘সাদাছড়ি’ সমাজের সকলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তাদেরকে সহায়তার। দৃষ্টিহীন ব্যক্তিগণ এ সাদাছড়িকে নিজের ‘চোখ’ বলে মনে করে থাকে। যা এক পরোক্ষ দৃষ্টিশক্তি। ‘সাদাছড়ি’ দৃষ্টিহীনকে নিয়ে এগিয়ে যায় আপন গন্তব্যে। ‘নিরাপত্তা’ বলতে বুঝায় দৃষ্টিহীন ব্যক্তির সকল প্রকার অধিকারের নিরাপত্তা। বর্তমানে ভাঁজ করা সাদাছড়ি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যা ভার্চুয়াল সাদাছড়ি হিসেবে বিবেচিত। ট্যাকনিক্যাল নাম লেজার বেইজ রেঞ্জ সেন্সিং ডিভাইজ। এতে আছে একটি ক্যামরা, লেজার টর্চ ও মাইক্রো প্রসেসর। যার মাধ্যমে দৃষ্টিহীন ব্যক্তি সাদাছড়ি হাতে রেখেই উচুঁ, নিচু, দুরত্ব ও বাধা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক নয়। দৃষ্টিহীনতার জন্য কী কোনো ব্যক্তিস্বত্ত্বা দায়ী! কিন্তু দুঃখের বিষয় পরিবার হতে শুরু হয় তার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন। আধুনিক সভ্য সমাজের অনেকে এখনো দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ‘অন্ধ’ বা ‘কানা’ ইত্যাদি নামে ডাকে। যা তাদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টি ভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। সভ্যতার শুরু থেকেই সকল মানব সমাজে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর অস্তিত্ব ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত তাদের প্রতি সমাজ নানা ধরনের কু-ধারনা পোষণ করত। প্রাচীন গ্রীসে দৃষ্টিহীনদের বেঁচে থাকার অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। গ্রীক সভ্যতার স্পার্টাতে দৃষ্টিহীনদের নির্মমভাবে হত্যা করা হত। এথেন্সে দৃষ্টিহীন শিশুকে মাটির পাত্রে ভরে রাস্তার ধারে ফেলে রাখা হতো। ল্যাসিডামোনিয়াতে দৃষ্টিহীন ও বিকলাঙ্গদের গভীর খাতে ছুড়ে দিয়ে হত্যা করা হতো। অন্যদিকে ভারতীয় সংস্কৃতি ও ধর্মে অন্ধত্বকে দেবতার অভিশাপ বা পূবজন্মের কৃতকর্মের ফল বলে বিবেচনা করা হয়েছে।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা. প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে তৎকালীন ৪ বিভাগে (Phsically Handicraft Training Centre) পি.এইচ.টি সেন্টার নামে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। চট্টগ্রাম বিভাগে পরিচালিত পি.এইচ.টি সেন্টারের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে এক বছর দায়িত্ব পালন করেছি। দায়িত্ব পালনকালে দৃষ্টিহীন ব্যক্তির জীবন চলার প্রতিবন্ধকতা, আবেগ, অনুভূতি, মনোভাবসহ সার্বিক অবস্থা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুরা অত্যান্ত শ্রুতিধর ও প্রকট মেধা শক্তির অধিকারী। আজ মনে পড়ছে ঐ প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন নিবাসীর কথা যারা অত্যান্ত মেধবী। যেমন- আলআমিন: যার মধুর কণ্ঠে গানের সুর আজও শুনতে পাই। গানের সুরে যে কোনো অনুষ্ঠন সে মাতিয়ে তুলে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করছে। সিয়াম: দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশু হিসেবে যুবক। বয়সে পবিত্র কুরআন মুখস্থ সম্পন্ন করে। ফরিদ: যে কোনো বিষয়ে বক্তব্য প্রদানের বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন। সোহেল রানা: প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। আরও অনেক প্রতিভাধর দৃষ্টিহীন শিশু এ প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করছে। বাংলাদেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পথিকৃৎ ভাষকর ভট্টাচর্য্য এ প্রতিষ্ঠানের গর্বিত ছাত্র। যিনি দৃষ্টিহীন কিন্ত দেশের একজন খ্যাতমান প্রযুক্তিবিদ। 

মানুষের দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা কেন? এ বিষয়ে আমাদের ধারণা সুস্পষ্ট নয়। দৃষ্টিহীনতা মানবের জন্মগত, অপচিকিৎসাজনিত বা কোনো দুর্ঘটনার ফল। আমাদের দেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতার অন্যতম কারণ হলো গর্ভকালীন পরিচর্যা, চিকিৎসা সেবা ও পর্যাপ্ত ভিটামিনের অভাব। তাছাড়া ছানি প্রতিসারণজনিত সমস্যা, গ্লুকোমা, ভিটামিন এ’র অভাব, ট্রাকোমা, চোখে আঘাত, সংক্রামক রোগ, পুষ্টিহীনতা, আর্সেনিক বিষক্রিয়া’ প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক দুর্ঘটনা ইত্যাদি। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর জীবনকাল অতি কষ্টের, অতি দুঃখের। জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা অতিমাত্রায় অন্যের উপর নির্ভরশীল। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে প্রাপ্য সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হন। 


বিজ্ঞাপন


বাংলাদেশ সরকার সমাজকল্যাণ বান্ধব সরকার। আমাদের সংবিধান মানবাধিকারের অনন্য অসাধারণ দলিল। সংবিধানের ১৫(ঘ) অনুচ্ছেদে দেশের সকল অসহায় নাগরিকের সামাজিক নিরাপত্তার অধিকারের কথা উল্লেখ আছে। বিশেষত সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী’।

২০০৮ সালের ৩ মে  জাতিসংঘের ৬১তম সাধারণ সভায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদ অনুমোদিত হয়। বাংলাদেশ সরকার উক্ত সনদের স্বাক্ষর ও অনুসমর্থন করেছে। এ প্রেক্ষিতে সরকার প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। যেমন: অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি, প্রতিবন্ধী পূর্নবাসন কার্যক্রম, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সেবা ও চিকিৎসা কার্যক্রমসহ ব্যাপক কর্মসূচি। ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তন করেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ‘সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম’। দেশব্যপী এ কার্যক্রম চলছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ কার্যক্রমের অধীন শিক্ষক সংকট নিরসন এবং আধুনিকায়ন প্রয়োজন।

সামাজিক উন্নয়ন সূচকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এ দেশ। প্রতিবন্ধীবান্ধব বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩’ প্রবর্তন। এ আইনের ১৬নং ধারায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বাঁচিয়ে থাকা, সমান আইনি স্বীকৃতি, স্বাধীন মত প্রকাশ, শিক্ষার অধিকার সহ ১৬ প্রকার অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া সরকার  সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ‘প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচির ২০১৩’ গ্রহণ করে। এ কর্মসূচির আওতায় (www.dis.gov.bd) এর নামে একটি ডাটাবেইজ চালু আছে। এর মাধ্যমে দেশের মাধ্যমে দেশের সকল প্রকার প্রতিবন্ধীর তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে। এ ডাটা ব্যাংকের তথ্য মতে সমগ্র দেশে শনাক্তকৃত মোট প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ২৬,৪৭,২৭৮ জন এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৪,১৩,২৭৬ জন। 

সভ্যতার সংকটে বর্তমান বিশ্ব। আধুনিক সভ্যতায় পুঁজিবাদের অন্তরালে মানবতার বিপর্যয় ঘটছে ক্রমাগত। সমাজে মানবকল্যাণ ও মূল্যবোধের উদ্ভব ঘটে ধর্মীয় অনুপ্রেরণা থেকে। পরকালীন মুক্তির ব্রত নিয়ে মানুষ এগিয়ে আসে কল্যাণের পথে। বৈশ্বিক শান্তি ও স্বস্থিও জন্য মানুষকে বেছে নিতে হবে কল্যাণের পথ। সমাজের অসহায় ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাড়াতে হবে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ সকল ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষগুলো সেবা প্রত্যাশী হয়ে ক্রমাগত ডাকছে সমাজের সুস্থ-সবল মানুষদের। অসহায়ত্বের সেবায় নিবেদিত হওয়াই মানবতাবাদ এবং স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের পাথেয়।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা দেশের অন্যতম সামাজিক সমস্যা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজের বিচ্ছিন্ন কোনো অংশ নয়। তারা আমাদেরই অতি আপনজন। দৃষ্টিহীন বা অসহায় মানুষের কল্যাণের মাঝেই মানব শ্রেষ্ঠত্ব। সভ্যতার উৎকর্ষতার যুগে নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি বর্তমান সমাজব্যবস্থা। এ সমাজে যারা দৃষ্টিসম্পন্ন ও সুস্থ মানষ তারা বিবিধ অপরাধে লিপ্ত। তাদের কাছে এই সমাজ ও সভ্যতা অ-নিরাপদ। দুর্ভাগ্য তাদের জন্য যারা দৃষ্টিমান কিন্তু হৃদয় অন্ধকারাচ্ছন্ন। মানবতার জয় তখনই হবে সমাজের দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষেরা সুপথগামী হবে এবং দৃষ্টিহীনের কল্যাণে এগিয়ে আসবে। জয় হোক দৃষ্টিহীন মানুষের।

লেখক: সহকারী পরিচালক, সমাজসেবা অধিদফতর, বিভাগীয় কার্যালয়, চট্টগ্রাম।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর