শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রেমিট্যান্স ও রেমিটার নিয়ে আমার ভাবনা

মো. শরীফুল ইসলাম
প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট ২০২২, ০৫:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

রেমিট্যান্স ও রেমিটার নিয়ে আমার ভাবনা

রেমিট্যান্স আমাদের দেশের অর্থনীতির প্রাণ। দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার লাইফলাইন হলো রেমিট্যান্স। আর সেই রেমিট্যান্স আহরণে আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ব্যাংক, বর্তমান এমডির নেতৃত্বে ঈর্ষণীয় ভূমিকা পালন করছে। সরকার নানা উদ্যোগ এবং প্রণোদনা দিচ্ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করতে এবং বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স আনতে। কিন্তু প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ সাময়িক বাড়লেও হুন্ডি রেট প্রণোদনার চেয়েও বেশি তাই এখনও প্রচুর রেমিট্যান্স হুন্ডির মাধ্যমে আসছে। হুন্ডি লেনদেন না করতে এবং হুন্ডির বাজে প্রভাব নিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে আমরা ক্লান্ত প্রায়। অনেকবার চিহ্নিত হুন্ডি কারবারিদের হুমকিও পেয়েছি কাউন্টারে হুন্ডির টাকা জমা না নেওয়ায়।

একজন ব্যাংকার এবং রেমিট্যান্স ডেক্সে দীর্ঘদিন কাজ করার কারণে রেমিটারদের কিছু মনের কথা জানতে পেরেছি। সরকার প্রণোদনা আরও দিলেও তেমন কাজ হবে বলে মনে হয় না। কারণ হুন্ডি ব্যবসায়ীরা তারচেয়ে আরও বেশি লাভ দেবে, সুযোগ দেবে। আমরা মানুষ মাত্রই ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীতু। যদি রেমিটারদের ভবিষ্যৎ সিকিউরিটি সরকার দিতে পারে তবে হুন্ডি প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে। যেমন- আমরা যারা সরকারি ব্যাংকে চাকরি করি তাদের বেতন-ভাতা প্রাইভেট ব্যাংকারদের থেকে অনেক কম। তারপরেও সরকারি চাকরির জন্য এত লাইন কেন! কারণ ভবিষ্যৎ সিকিউরিটি। পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড, সামাজিক মর্যাদা এই সবের জন্য আমরা প্রাইভেট ব্যাংকের তুলনায় বর্তমান লাভটা ছাড় দিচ্ছি ভবিষ্যতের জন্য।


বিজ্ঞাপন


ঠিক তেমনি সরকার যদি রেমিটারদের প্রেরিত অর্থের ওপর ভিত্তি করে পেনশন ভাতা/বিশেষ ভাতা চালু করে তবে একজন রেমিটার ভবিষ্যৎ সিকিউরিটির কথা চিন্তা করে হুন্ডি লেনদেন করবে না। যেমন: সরকার যদি একটা কাঠামো দিয়ে দেয় যে, একজন রেমিটার যত বেশি রেমিট্যান্স বৈধ পথে দেশে পাঠাবে তার ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে সে দেশে চলে এলে তত বেশি পেনশন ভাতা পাবে। কত বছর পর্যন্ত সেই রেমিট্যান্স আসতে হবে, পরিমাণ কী হবে এসবের শর্ত ঠিক করা যেতে পারে। আমাদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয় যৌথ সমন্বয়ে একটা রূপরেখা প্রণয়ন করা যায়।

আরও পড়ুন: বিমানবন্দরের কর্মীদের বলে দেন তারা যেন প্রবাসীদের স্যার বলেন

আমাদের প্রবাসী ভাইবোনদের চাওয়া খুব বেশি না; দেশের অর্থনীতি চাকা সচল রাখতেই আজ তারা পরবাসী। নিজের প্রিয় পরিবার পরিজন, স্ত্রী সন্তান থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও নিদারুণ পরিশ্রম করে কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স দেশে পাঠায়। তারা চায় একটু সম্মান। এয়ারপোর্টে তাদের কেউ হাসিমুখে বরণ করুক, ভালো আচরণ দিয়ে তাদের কেউ ঝামেলামুক্ত আগমন-প্রস্থানে সাহায্য করুক। নিজের সর্বস্ব বিক্রি করে কিংবা ঋণের অভিশাপ মাথায় নিয়ে বিদেশে গিয়ে অনেক সময় তাদের আশানুরূপ কর্ম পায় না; অমানবিক কষ্ট এবং পরিশ্রম করে অর্থ পাঠায় প্রিয় দেশে। ভিন দেশে অনেক সমস্যায় পড়লেও আমার দেশের দূতাবাসগুলো থেকে তেমন সাহায্যও পায় না। অনেকে প্রবাসী ভাই ধরা পড়ে দেশে চলে এলে তার ভিক্ষে করা ছাড়া উপায় থাকে না। সে স্ত্রী সন্তানের চোখে চোখ রাখতে পারে না, পাওনাদারের ভয়ে বাইরে যেতে পারে না, মান সম্মানের ভয়ে রিকশাও চালাতে পারে না! আজ এই অবস্থা কিন্তু আমাদের অর্থব্যবস্থার জন্যই। রাষ্ট্র তাকে তার অর্থ রোজগারের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। কোনো প্রবাসী ভাই দেশে চলে এসে নিজের কোনো ব্যবসা শুরু করতে চাইলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। তাই সরকারের উচিত তারা দেশে চলে এলে তাদের জন্য জামানতবিহীন ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থার নিশ্চয়তা দেওয়া। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা।

আরও পড়ুন: রেমিট্যান্সে প্রণোদনা মিলবে আড়াই শতাংশ


বিজ্ঞাপন


দেশের স্বার্থে সরকার কত ধরনের ভাতা ও পেনশন দিয়ে থাকে। আমার দেশের অর্থনীতির প্রাণ প্রবাসী ভাইদের জন্য ভবিষ্যৎ পেনশন/বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করলে ওনারা সম্মানিত হবেন, ভবিষ্যৎ সিকিউরিটি পাবেন, দেশের প্রতি ভালোবাসা বাড়বে, হুন্ডি বন্ধ হবে, বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রচুর বাড়বে। কারণ অনেক প্রবাসী ২০-৩০ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে এসেও দেশে তার প্রাপ্য সম্মানটুকুই পান না। নিজের সর্বস্ব দেশে পাঠিয়ে দিয়ে দেশে এসে পকেট খরচ এর অর্থটাও পায় না। পরিবারকে সব দিয়ে নিজে নিঃস্ব হয়। তাই তাদের সম্মান বাড়লে এবং দেশে এসে মর্যাদার নিশ্চয়তা পেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ যেমন বাড়বে তেমনি দেশটাও এগিয়ে যাবে। দেশটা এগিয়ে যাক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক: সিনিয়র অফিসার, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, নিমসার শাখা, কুমিল্লা

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর