বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

১০০ গ্রাম সোনা ও বাংলাদেশের কাস্টমস!

দীপ আজাদ
প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০২২, ০৩:২৬ পিএম

শেয়ার করুন:

১০০ গ্রাম সোনা ও বাংলাদেশের কাস্টমস!

দুবাই থেকে ফিরছি। দুবাই বিমানবন্দরে আমার ফ্লাইটের চেক ইন কাউন্টার খুঁজছি। টিভি স্ক্রিনে দেখানো পথেই খুঁজে চলছি, কিন্তু পাচ্ছি না। এয়ার ইন্ডিয়ার কাউন্টারের আশে পাশে ঘুরছি, এমন সময় একজন জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় যাবেন, ঢাকা? হ্যাঁ সূচক উত্তর দিতেই একবার আমাকে আরেকবার আমার লাগেজ দেখলেন। এরপর কিছু না বলেই চলে গেলেন। মাথা ঘামাবার সময় পেলাম না, তখন আমার মাথায় শুধু আমার ফ্লাইটের চেক ইন কাউন্টার।

অবশেষে খুঁজে পেলাম কাঙ্খিত চেক ইন কাউন্টার। বিমান সংস্থার দু’জন কর্মকর্তা দেখলাম, যথাসাধ্য চেক ইন কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের সহযোগিতা করছেন। আশ্বস্থ হলাম।


বিজ্ঞাপন


চেক ইন কাউন্টারের ব্যারিকেডের বাইরে দাঁড়িয়ে সেই ভদ্রলোক! যিনি আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন ঢাকা যাবো কি না? ভদ্রলোককে দেখে এবার আগ্রহ জাগলো। সাথে কোনো লাগেজ নাই। ব্যারিকেডের বাইরে দাঁড়িয়ে! লাইনে দাঁড়ানো অন্য যাত্রীদের সাথে মৃদু স্বরে কথা বলছেন। কান খাড়া করলাম।

১০০ গ্রাম সোনা নিতে পারবেন? ঢাকায়ে বিমানবন্দরে আমার লোক আছে। তার কাছে দিয়ে দেবেন। কোনো সমস্যা নাই। ১০০ গ্রাম সোনা নেওয়া যায়। টাকা পাবেন। প্রত্যেককেই এভাবে বলছেন তিনি।

যিনি রাজি হচ্ছেন তাকে লাইন থেকে বাইরে নিয়ে একটু দুরে গিয়ে ছোট্ট পোটলা ধরিয়ে দিচ্ছেন।

চেক ইন লাইনে আমি কাছে যেতেই, আমাকে চিনলেনই না! আহারে সবাইরে অফার করলেন আমারে করলেন না। আমার কিছুটা পেছনে ছিলেন ক্লোজআপ ওয়ানের রানার আপ সোহাগ সুমন ও মীরাক্কেলখ্যাত তারকা আরমান।


বিজ্ঞাপন


সুমন ও আরমানকে হাসতে হাসতে বললাম, নিবা নাকি ১০০ গ্রাম সোনা? ওরাও হাসতে হাসতে বললো, না ভাই। আমরা এসবের মধ্যে নাই।

আমার চেক ইন সমাপ্ত হয়ে গেল। সেই ভদ্রলোকের ১০০ গ্রাম সোনা নেবার অফার দেখলাম তখনও অব্যাহত আছে।
জানি না শেষ পর্যন্ত কত জনকে ১০০ গ্রাম সোনা ধরিয়ে দিতে সামর্থ হয়েছিলেন তিনি। বেশভুষা দেখে রেমিটেন্সযোদ্ধা বলেই মনে হয়েছে তাকে। কথা বলার ইচ্ছে হলেও তার ব্যবসায় সময় নষ্ট করতে চাই নাই।

ভোর ৬টা, ঢাকা বিমানবন্দর। আসার পথে একটুও ঘুমাতে পারি নাই। পেছনের ৩ সিটে তিন অভদ্রলোক ছিলেন। পুরোটা সময় উচ্চস্বরে কথা বলা, সিটের পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়া সব মিলিয়ে আসার সময়টা খারাপ ছিল। ক্লান্ত ও বিরক্ত ছিলাম।

ঢাকা বিমানবন্দরে নেমে গ্রীন চ্যানেল পার হচ্ছি, কাষ্টমস কর্মকর্তা বললেন, সব লাগেজ স্ক্রিন হবে। সাড়ে ১৪ গ্রামের সোনা আছে আমার কাছে। দুটো ব্রেসলেট, দুই কন্যার জন্য। দেখাতে চাইলাম। বললো, দেখাতে হবে না। লাগেজ মেশিনে দেন।

দিলাম। মেশিনে দিতে নামানো ও উঠানোর কষ্ট হলো। বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞাসা, গ্রীন চ্যানেল কেন? যদি এভাবে সব যাত্রীকে সব চেক করতে হয়। উত্তর র‌্যানডম চেকিং। ১০০ শতাংশ যাত্রীকেই চেক করা কি স্যাম্পল চেকিং?

দুঃখ প্রকাশ করে জানালেন, অনেকে এক কেজি সোনাও নিয়ে আসেন। আমার বড় সাইজের ওয়ালেটটা মেশিনে না দিয়ে তার কথার পর বললাম, এটা তো চেক করলেন না? আমি তো এটাতেই ৭/৮ টি সোনা বার সহজেই আনতে পারতাম। 

সুশ্রী চেহারার কাস্টমস কর্মকর্তার চেহারায় অসহায়ত্ব ফুটে উঠলো। বললেন, আপনি যান। জালের কোন ফুটো দিয়ে কে পার হয়ে যায়, কে জানে!

লেখক: সাংবাদিক

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর