শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রাজনীতির চ্যালেঞ্জে ইউনূসের মধ্যবর্তী পথ

হারুন জামিল
প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫৭ পিএম

শেয়ার করুন:

রাজনীতির চ্যালেঞ্জে ইউনূসের মধ্যবর্তী পথ

বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে তীব্র বিভাজিত সমাজে কোনো একটা বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো রীতিমতো অসম্ভব। রাজনৈতিক দলগুলো কখনোই এ বিষয়ে ছাড় দেবে না। তবে ইস্যুভিত্তিক ঐক্য সম্ভব। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার জুলাই সনদ নিয়ে মধ্যবর্তী অবস্থান নিয়েছেন। যেকোনো অরাজনৈতিক সরকার এটাই করবে স্বাভাবিক।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ যে তৎপরতা দেখানোর চেষ্টা করছে তা তাদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ নয়। আওয়ামী লীগ জনসমর্থন হারিয়েছে অনেক আগেই। ন্যূনতম জনসমর্থন থাকলে তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিত না। তাদের পলিসি ছিল ভীতি তৈরি করে বিভাজনের শঙ্কা দিয়ে শাসন করা। এ ধরনের শাসনব্যবস্থার পরিণতি যা হয় আওয়ামী লীগের তাই হয়েছে। জুলাই–আগস্টের আন্দোলন ছিল আওয়ামী লীগের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনতার বিদ্রোহ। আওয়ামী লীগ বরাবরই রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে বিরুদ্ধমতকে দেশদ্রোহ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করেছে। গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রচারণা চালিয়েছে। তাদের এই পলিসি জনগণ থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এখন পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কিছু স্তাবক যেসব প্রচারণা চালাচ্ছে তা সেই পুরনো কৌশলের অংশ। এতে মানুষের বিরক্তি বাড়ছে। আওয়ামী লীগে কর্মীর চেয়ে স্তাবক ও তোষামোদকারির সংখ্যা এখন অনেক বেশি। রাজনীতি না বুঝলেও এদের মনস্তাত্ত্বিক জ্ঞান টনটনে।


বিজ্ঞাপন


বিএনপির সমস্যা হলো পুরনো রাজনীতিবিদদের শূন্যতা। নতুন যারা আসছেন তারা জনগণের পালসটা ঠিকমতো ধরতে পারছেন না। জুলাই–আগস্ট মানুষের মনোজগতের বিরাট পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছে। এই পরিবর্তনটাই ধারণ করতে পারছে না বিএনপি। একটি রাজনৈতিক দলের উত্থান–পতন হতেই পারে। সেগুলো শোধরাতে হয়। ভুল চিহ্নিত করতে হয়। ক্ষমতার রাজনীতি আর রাজনীতির ক্ষমতা ভিন্ন ভিন্ন। একবার ইমেজ সঙ্কট দেখা দিলে তা পুনরুদ্ধার কঠিন। গুজববাজ সমাজে মন্দ ছড়ায় বেশি। এখনকার সমাজে তরুণদের ভাষা প্রবীণরা বুঝতে পারে না। এ ভাষা শিখতে হবে।

জামায়াতে ইসলামী পুরনো দল। এই প্রথম তারা গণমুখী হওয়ার চেষ্টা করছে। সামাজিক কল্যাণমূলক কাজের দিকে মনযোগ দিচ্ছে। মনে রাখতে হবে এ দেশে জামায়াত সবসময়ই বৈরি প্রচারণার মধ্যে পার করেছে। তাদের সম্পর্কে মিথ ও সত্যের বিস্তর ব্যবধান। আওয়ামী লীগের শাসনামলে তাদের নেতাদের বিচারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে। দলটির প্রতি মানুষের মধ্যে সহানুভূতি বেড়েছে। তবে বড় সমস্যা হলো কর্মীদের মধ্যে অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাস, যা বাস্তবতার সাথে মেলে না। তাছাড়া নিজেদের সবসময়ই শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠিতে বিচার করে। দুনিয়ার বহু বিষয় সম্পর্কে এরা বেখবর থাকে।

ছাত্রদের নতুন দল এনসিপিকে নিয়ে মানুষ হতাশ। এরা শক্তি হারিয়ে দুর্বল হয়ে গেছে। তত্ত্ব আর বাস্তবতার সাথে অভিজ্ঞতার মিশ্রণ না থাকায় এরা ক্ষীণ ও দুর্বলতর হচ্ছে। তবে পরিবর্তনের আইকনিক শক্তি হিসেবে এরা সমাদৃত। এরা তরুণ সমাজের কাছে যে আইডিয়া দিয়েছিল তার প্রয়োগ দেখাতে পারেনি। নির্বাচনে এরা ভাগাভাগি হয়ে যেতে পারে।

জাতীয় পার্টি ও বামপন্থী দলগুলোর কোনো ভবিষ্যৎ নেই। বামপন্থীরা অন্যের ঘাড়ে সওয়ার হওয়া এবং ঘুপচি রাজনীতিতে পারঙ্গম। ফলে আপাতত তাদের জেগে ওঠার কোনো  সম্ভাবনা দেখছি না।


বিজ্ঞাপন


যতদূর মনে হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। সে নির্বাচনে মানুষ বুঝেশুনে ভোট দেবে। বিরাট এক জনগোষ্ঠী চুপচাপ আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মতিগতি দেখেই তারা সিদ্ধান্ত নেবে। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার দেশে পুরনো রাজনীতিকে কঠিন করে দিয়ে যাবেন।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, ঢাকা মেইল

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর