রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

স্কলারশিপ প্রাপ্তিতে পিছিয়ে মাধ্যমিক, ভেবে দেখতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান
প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৬:৩১ পিএম

শেয়ার করুন:

mizan
মুহাম্মদ মিজানুর রহমান । ছবি: সংগৃহীত

মৌলিক কাজগুলোর মধ্যে গবেষণাকর্ম অন্যতম। শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে নিত্যনতুন যা কিছু আবিষ্কার হচ্ছে সকল কিছুর মূলেই এই গবেষণা। শিক্ষাক্ষেত্রে গবেষণাকে এড়িয়ে কোনোভাবেই শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা যাবে না। বুঝতে হবে, গবেষণা কী এবং কেন। গবেষণা হলো- যা নিয়ে কেউ এর আগে কাজ করেনি বা কাজ করলেও ইতঃপূর্বে যে বিষয়টির ওপর গবেষণা হয়েছে, তার যে সীমাবদ্ধতা ছিল নতুন গবেষণায় সেটির পূর্ণতা দেওয়া হয়েছে। সকল ক্ষেত্রেই গবেষণার উদ্দেশ্য একটাই, নতুন কিছু আবিষ্কার করা। শিক্ষার ক্ষেত্রে নিত্যনতুনের বিষয়টি খুব বেশি গ্রহণযোগ্য। তাই শিক্ষার সাথে গবেষণার সম্পর্কটা বেশ নিবিড়। যা দেশ, জাতি ও মানুষের কল্যাণে সুফল বয়ে আনে। সুতরাং গবেষণা একটি চলমান প্রক্রিয়া- যা সমাজ, বাস্তবতা, পরিবর্তিত পরিবেশ ও পরিস্থিতে মানুষ সমস্যার সমাধানে বা উন্নত সমাজ বিনির্মাণে কাজ করে। তাই শিক্ষার সাথে গবেষণার সম্পর্কও একটি অবিচ্ছেদ্য বিষয়।

আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণাকর্মকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ফলে সৃষ্টিশীল কাজে সম্পৃক্ত মেধার একটি বড় অংশ দেশ-বিদেশে মানুষের কল্যাণে অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাই মুক্তচিন্তার স্বতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও সেভাবে অর্জন করেছে। স্টাডি ছাড়া জ্ঞান কখনোই শাণিত হয় না। জ্ঞানের গভীরতায় প্রবেশ ছাড়া উল্লেখেযোগ্য কিছু আবিষ্কার করাও সম্ভব নয়। এখানেই গবেষণার আবশ্যকতা। বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার অন্যান্য কিছু স্তরে গবেষণাকর্মের যথেষ্ট সমাদর থাকলেও মাধ্যমিক পর্যায়ে এটি অনেকটাই উপেক্ষিত। পরোক্ষভাবে গবেষণাকর্মকে নিরুৎসাহিত করার পদ্ধতিগত সবধরণের প্রতিবন্ধকতা এখানে রয়েছে। আমরা জানি, শিক্ষার বুনিয়াদি ভিত মজবুতকরণে মাধ্যমিক একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আর এ-ও জানি, একজন মানসম্পন্ন শিক্ষক ছাড়া কখনোই মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। পেশাগত দক্ষমতা উন্নয়নে মাধ্যমিকে গবেষণার তেমন কোনো গুরুত্ব নেই, বেতন কাঠামোয় তিনটি ধাপ বৃদ্ধি ছাড়া একাডেমিক কোনো পদমর্যাদা বৃদ্ধির কোনো সুযোগও নেই। অথচ গবেষণাকে উৎসাহিত করণে এটি ছিল অগ্রাধিকার পাবার মতো একটি বিষয়।


বিজ্ঞাপন


মাধ্যমিকে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে ওই সমস্ত মেধাকে এই স্তরে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন, যারা মাধ্যমিকে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে দীর্ঘদিন মাধ্যমিকে কাজ করেছেন। পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে শিক্ষা ও গবেষণায় অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, নায়েম, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজসহ যেখানে মাধ্যমিক সংশ্লিষ্ট কাজ রয়েছে এই সমস্ত পদগুলোকে মাধ্যমিক থেকে উঠে আসা গবেষকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করলে মাধ্যমিক শিক্ষা গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে মাধ্যমিক থেকে গবেষণা কাজে তথা উচ্চশিক্ষা অর্জনের যাবতীয় অন্তরায়সমূহ তুলে ফেলতে হবে। মাধ্যমিকে গবেষণার চিন্তা মানেই অবজ্ঞা, উপেক্ষা ও বঞ্চনায় ভরা হাজারও যন্ত্রণা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে খবর রাখেন কি না জানি না। যদি না রাখেন, এ বিষয়ে তাদের এখনি ভাবা দরকার।

মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে গেলে অনেকেই বাধ্য হয়ে অর্ধগড় বেতনে শিক্ষাছুটি নিতে হয়। দুই বছরের অধিক তারা কোনোক্রমেই শিক্ষাছুটি ভোগ করতে পারেন না। কোথাও স্কলারশিপের আবেদন করলেও সেটিকে গুরুত্ব দিয়েও বিবেচনা করা হয় না। স্কলারশিপ না পাওয়ায় এই সীমিত সময়ে প্রেষণে যাওয়ার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হন। ফলে অর্থনৈতিকভাবে তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। একদিকে গবেষণা করতে গিয়ে গবেষকের আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে যায়, অন্যদিকে তারা মূল বেতনের অর্ধেক পেয়ে থাকেন। ফলে এমনিতেই মাধ্যমিক থেকে অনেকেই গবেষণা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এখানে অবশ্যই কিছু সংস্কার প্রয়োজন। রাজস্ব খাতে চাকরি হলে তারা স্কলারশিপ পান বা না পান, উচ্চশিক্ষা চলাকালীন পূর্ণ বেতন ভাতায় প্রেষণে ছুটি ভোগ করার অধিকার তারা রাখবেন। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সময় পূর্ণকালীন এম.ফিল ও পিএইচডির জন্য পুরো সময়ে প্রেষণে শিক্ষাছুটি ভোগ করবেন। এম.ফিলের জন্য পূর্ণকালীন ন্যূনতম দুই বছর ও পিএইচডির জন্য পূর্ণকালীন ন্যূনতম তিন বছর। এক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কলেজ, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বেসরকারি স্কুল-কলেজের মধ্যে কোনো ধরনের পার্থক্য থাকা অনুচিত। তাতে শিক্ষার সমঅধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সবস্তরেই একই ধরনের নীতিমালা ও বাস্তবতার প্রয়োগ আবশ্যক।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ যারা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজের সাথে জড়িত তারা অবশ্যই বিষয়টি ভেবে দেখবেন। মাধ্যমিকে স্কলারশিপ অর্জনে যে বৈরী পরিবেশ রয়েছে সেটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করে মাধ্যমিক শিক্ষকদের গবেষণাকর্মে সম্পৃক্ত হওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা কল্যাণ ট্রাস্ট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে যারা উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ দিয়ে থাকেন মাধ্যমিকের অধিকারের বিষয়টি তাদেরকেও নিশ্চিত করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আশা করি, মাধ্যমিকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে যে অনীহা রয়েছে এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্কলারশিপ প্রদানের মাধ্যমে সেই জটিলতা অচিরেই কেটে যাবে। আশা করছি, এসব প্রতিষ্ঠান ২০২৫ সাল থেকে মাধ্যমিকে স্কলারশিপ প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা দূর করতে সক্ষম হবেন। মাধ্যমিকে একটি গবেষণা সহায়ক গতিশীল পরিবেশ ফিরে আসবে। 

লেখক: পিএইচডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর