দেশের রাজনীতির আকাশে জমে থাকা অনিশ্চয়তার মেঘে আচমকাই দেখা দিলো আলোচনার এক নতুন রেখা। আগামীকাল শুক্রবার (১৩ জুন) সকালে লন্ডনের অভিজাত ঠিকানায় মুখোমুখি বসেছেন দুই প্রান্তের দুই মুখ। একদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও মাইক্রোক্রেডিটের জনক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্যদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, লন্ডনপ্রবাসী তারেক রহমান। এই বৈঠক নিছক সৌজন্য বিনিময়, নাকি রাজনীতির জমে থাকা বরফ গলানোর সূক্ষ্ম প্রয়াস? প্রশ্ন ঘুরছে বাংলাদেশের রাজনীতির অলিন্দে। সরকারি ভাষ্য বলছে— কোনো নির্দিষ্ট এজেন্ডা নেই। তা ইউনূসের প্রেস সচিবের ভাষায়, “কোনো নির্দিষ্ট ফরম্যাট নেই।” তবু আলোচনা ঘিরে সম্ভাব্য বিষয়গুলোর তালিকা বেশ দীর্ঘ- রাজনৈতিক অচলাবস্থা, জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি, ‘জুলাই চার্টার’, কাঠামোগত সংস্কার।
বিএনপির ঘনিষ্ঠ মহল এই বৈঠককে সম্ভাবনার জানালা খুলে দেওয়ার প্রথম পদক্ষেপ বলেই মনে করছে। অনেকের চোখে এ এক ‘টার্নিং পয়েন্ট’। তবে বাস্তবতা বলছে, এই বৈঠকের তাৎক্ষণিক ফল মিলবে কি না, সে প্রশ্ন রয়ে গেছে। এ আলোচনার মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতির বোর্ডে নতুন চালের ইঙ্গিত কি ধরা পড়ছে? উত্তর দেবে সময়। ঢাকার রাজনৈতিক মহলে কান পাতলে শোনা যায় নানান গুঞ্জন—এই আলোচনার পর্দার আড়ালে কি বড় কোনো সমঝোতার নকশা আঁকা হচ্ছে, নাকি এটি শুধু শুরু?
বিজ্ঞাপন
রাজনীতির রসায়ন সোজাসাপটা হয় না। অন্তত বাংলাদেশে তো নয়ই। সামনের মঞ্চে যা দেখা যায়, তার আড়ালে চলে আরও বহু স্তরের হিসাব-নিকাশ। কূটনীতি, শক্তির সমীকরণ আর পেছনের দরজা দিয়ে কথাবার্তা-সব মিলিয়ে এক জটিল গেম-প্ল্যান। সেই অঙ্কেই এ বার যোগ হতে চলেছে নতুন সূত্র। লন্ডনে হতে চলেছে অধ্যাপক ইউনূস এবং তারেক রহমানের আলোচিত সাক্ষাৎ। দেশের রাজনৈতিক মহলে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে জল্পনার ঝড়। ১৩ জুন, শুক্রবারের আগে থেকেই বাড়তে শুরু করেছে এই বৈঠককে ঘিরে চর্চা। কেবল লন্ডনের আবহেই নয়, ঢাকার অলিন্দেও এই বৈঠকের তরঙ্গ পৌঁছে গিয়েছে বহু আগেই। প্রশ্ন হলো— দু’জনের বৈঠক কি সত্যিই সংকট সমাধানে পথ দেখাবে? অতীতে সেসব আলোচনায় কূটকৌশল ও প্রত্যাশার ফাঁক-ফোকর চিহ্নিত করে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন— লন্ডন বার্তা নয়, বরং আচার-আচরণ ও ফলেই বিচার্য। ড. ইউনূস ও বিএনপি প্রধানের এই বৈঠক শুধুমাত্র সংবাদ শিরোনাম নয়-বরং এটি জনগণের বুকজুড়ে নতুন প্রত্যাশার সঞ্চার করতে পারে। তবে সে প্রত্যাশা বাস্তবে রূপ পায় কি না, সেটাই দেখার বিষয়। এখন শুধু সময়ই বলবে-লন্ডন হবে শনির দিক, নাকি আবার শঙ্কার ঠিকানা?
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক সমঝোতার প্রক্রিয়া যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে তা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংঘাতের অবসানে এক বড় মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে। যদি ইউনূস-তারেক বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসা যে কোনো সমঝোতা দেশের সকল রাজনৈতিক শক্তিকে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কাঠামোয় নিয়ে আসতে পারে, তবে এর ইতিবাচক প্রতিফলন শুধু রাজনীতিতেই নয়, দেশের অর্থনীতি, সুশাসন ও সামগ্রিক স্থিতিশীলতায়ও পড়বে। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে, এ পথ মোটেই সহজ নয়। এর পেছনে রয়েছে বহুস্তরীয় জটিলতা, রাজনৈতিক দলের মতপাথ্যক্য, অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক চাপ, পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা। সকল প্রকার শত্রুতা, সংঘাত ও ক্রিমিনালাইজেশন অব পলিটিক্সের প্রেক্ষাপটে এই ধরনের বৈঠক বাস্তব ফল দিতে হলে সকল পক্ষের আন্তরিকতা সবচেয়ে বড় শর্ত। শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতৃত্ব নয়; সেনা-বেসামরিক প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজসহ প্রত্যেকটি স্টেকহোল্ডারকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি মধ্যস্থতা বা নরম-চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে দুই পক্ষকে সমঝোতায় আসতে উৎসাহিত করে, তাহলে সম্ভাবনা অনেক বাড়বে। পাশাপাশি, আঞ্চলিক শক্তি ভারতকেও এখানে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। কারণ, স্থিতিশীল বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জনগণের ভূমিকা। রাজনীতির এই সমঝোতা জনগণের প্রত্যাশা ও আস্থার প্রতিফলন হতে হবে। কেবলমাত্র ক্ষমতা ভাগাভাগির সমঝোতা হলে তা স্থায়ী হবে না। জনগণের মৌলিক অধিকার, আইনের শাসন, সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত না হলে এই প্রচেষ্টা একপর্যায়ে আবারও ভেঙে পড়তে পারে। তাই সমঝোতা যদি হয়ও, তা হতে হবে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং জনস্বার্থনির্ভর।
ইউনূস-তারেক বৈঠক আসলে দেশের আগামী রাজনীতির সম্ভাব্য রূপরেখার সূচনা হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এই সমঝোতার প্রক্রিয়া যদি সফল হয়, তবে তা দেশের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংঘাতের অবসানে বড় মাইলফলক হতে পারে। কিন্তু এ পথ সহজ হবে না। সকল পক্ষের আন্তরিকতা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে এই প্রচেষ্টা ব্যর্থও হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
বৈঠকটি কেন তাৎপর্যপূর্ণ? বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে এক দীর্ঘ অচলাবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সংস্কার, বিচার, জাতীয় নির্বাচন, আন্তর্জাতিক চাপ সবমিলিয়ে রাজনীতির আকাশে জমে আছে অস্বস্তির মেঘ। এই প্রেক্ষাপটে ১৩ জুন লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রুদ্ধদ্বার বৈঠক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বহুমাত্রিক অচলাবস্থার মধ্যে ড. ইউনূস আশার আলো দেখাচ্ছেন। তিনি দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক মহলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে উচ্চকণ্ঠ, অন্যদিকে তারেক রহমান বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ক্ষমতার কেন্দ্রে। দেশে নানা ইসুতে আন্দোলন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতাদের কঠোর বক্তব্য, রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যক্তির বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ বটে! অনেকের মতে— এ বৈঠক ভবিষ্যতে বৃহত্তর কোনো সমঝোতা বা আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার ইঙ্গিতও দিতে পারে।
আলোচনা কি নিয়ে হতে পারে? বৈঠকটি ঘিরে নানা আলোচনা থাকলেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি আসেনি। তবে ঘনিষ্ঠ সূত্রের মাধ্যমে যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, আলোচনায় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো প্রাধান্য পেতে পারে—দেশের গণতন্ত্র ও দ্রুত নির্বাচন— বিএনপি প্রধান তারেক রহমান ড. ইউনূসের কাছে দ্রুত নির্বাচন দাবি করতে পারেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার—জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে সংকল্পবদ্ধ। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ শাসন আমলেরর রাতের ভোট দিনের ভোট হতে পারে এটারও শঙ্কা আছে। তাই সরকার প্রধান সংস্কারের বিষয়টি সামনে আনতে পারেন এবং সে জন্য নির্বাচন কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। এ বিষয়টি মানা না মানা নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা হতে পারে। ড. ইউনূস কম কথা বললেও তাকে নীতিতে অবিচল মনে হয়। হেঁসে কথা বললেও বিচক্ষণতার ঘাটতি নেই তার। ব্যক্তিত্বের তো বটেই! সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরের নির্বাচনের বিষয়টি এলে তিনি তা কতটুকু গুরুত্ব দেবেন সেটা দেখার বিষয়। এ প্রেক্ষাপটে দু’জনের আলোচনায় দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কীভাবে অন্তত গ্রহণযোগ্য মানে ফিরিয়ে আনা যায়, সেই আলোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের অবস্থানকে কার্যকর করতে উভয়েই সমন্বয় করতে পারেন।
দেশে রাজনৈতিক সংকটের স্থায়ী সমাধান হিসেবে আগাম কোনো জাতীয় সংলাপ হতে পারে। যা শুধু বিদেশি চাপ বা কূটনীতি দিয়ে সম্ভব নয়— এটা দুই পক্ষই বুঝতে পারছেন। তাই ভবিষ্যতে সরকারের এবং বিএনপির কি করা উচিত তা নিয়ে বৈঠকে কথা হতে পারে। সংলাপ বা বোঝাপড়ার সম্ভাবনা নিয়েও দু’জন আলোচনা করেছেন বলে ধারণা। এ বৈঠক ঘিরে অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ তৈরি হতে পারে। বিভিন্ন মহলে এমনকি জনগণের একটি অংশ এই বৈঠককে ইতিবাচকভাবে দেখার প্রবণতা নেই। অনেকেই মনে করছেন— এটি সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে দ্রুত নির্বাচনের জন্য চাপ তৈরি করার নীলনকশারই অংশ হতে পারে। নির্বাচনের সময়সূচি নির্ধারণ বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বিএনপির প্রধান দাবি ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যেই নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। তারা মনে করে ২০১৮ সালের ভোটের মতো আরেকটি ‘নির্বাচনি প্রহসন’ ঠেকাতে হলে দ্রুততার সাথে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। অপরদিকে ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার মনে করে অবকাঠামোগত ও আইনি সংস্কার ছাড়া অবিলম্বে নির্বাচন দেশকে আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলবে। তারা একটি ধাপে ধাপে সংস্কারের মাধ্যমে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছে। সময়ের এই তফাতই মূলত পুরো আলোচনার সবচেয়ে বড় গলদ। উভয়পক্ষই তাদের অবস্থানে অনড় থাকলে সমঝোতা অসম্ভব হয়ে পড়বে। দ্রুত নির্বাচন দিলে সরকার এটিকে ‘বিএনপির ফাঁদ’ মনে করে। আর বিলম্বিত নির্বাচনকে বিএনপি দেখে সরকারের ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা হিসেবে। এই টানাপোড়েনের অবসান ছাড়া আলোচনার কোনো স্থায়ী ফলাফল সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশে নেতৃত্ব অনেকটাই প্রথাগত পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতির ভেতরে আবদ্ধ ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে জনমানসে নেতৃত্বের ক্লান্তি দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম নতুন মুখ, আধুনিক চিন্তা ও দক্ষ প্রশাসনিক নেতৃত্ব আশা করে। ড. ইউনূস নেতৃত্বের শিক্ষায়ত্নিক ও মূল্যবোধভিত্তিক ধারা তৈরি করতে চাইছেন। যেখানে ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতৃত্ব পর্যন্ত প্রশিক্ষিত ও দক্ষ নেতৃত্ব গড়ে তোলার রূপরেখা আসতে পারে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের রাজনৈতিক ভূমিকা ক্রমেই বড় হচ্ছে। শুধু অর্থনৈতিক সহায়তা নয়, নীতি-পরামর্শ, লবিং ও কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রেও তারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে প্রবাসী বাংলাদেশিরা আজ সরাসরি রাজনৈতিক আলোচনার এক অনিবার্য অংশ। এই বৈঠকটি লন্ডনে হওয়ার মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনীতি অনেকটাই আন্তর্জাতিক ডায়াসপোরার হাত ধরে নতুন সমীকরণ খুঁজছে। প্রবাসী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সম্ভবত এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যস্থতামূলক শক্তি গড়ে তোলারও উদ্যোগ রয়েছে, যারা দেশে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার রূপান্তর দেখতে চায়।
বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা আর সংঘাতময় রাজনীতির ক্লান্তিতে ভুগছে। তারা স্থিতিশীলতা চায়, স্থায়ী শান্তি চায়। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আস্থাহীনতা, চুক্তি ভঙ্গের অতীত অভিজ্ঞতা তাদের মধ্যে সন্দেহও তৈরি করে। এই আলোচনার প্রাথমিক খবর জনগণের মনে যেমন আশার আলো জাগাচ্ছে, তেমনি এটিকে অনেকে দেখছে ‘পুরনো খেলোয়াড়দের নতুন নাটক’ হিসেবেও। তাই এই বৈঠক থেকে যদি কোনো আন্তরিক ও কার্যকর রূপরেখা বেরিয়ে আসে, তাহলেই জনগণের আস্থা বাড়বে। অন্যথায়, এটি আরেকটি ব্যর্থ প্রচেষ্টায় পরিণত হলে হতাশা আরও ঘনীভূত হবে।
লন্ডনের আলো-আঁধারের এই বৈঠক আপাতত এমন অনেক প্রশ্নের জন্ম দিলেও উত্তর এখনো অনিশ্চিত। তবে এটুকু স্পষ্ট—দেশের রাজনৈতিক সংকট নিয়ে বিদেশে আলোচনা নতুন মাত্রা পাচ্ছে। এই আলোচনা কি কোনো সমাধানের দিকে এগিয়ে যাবে, নাকি কেবল আরেকটি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে— সময়ই বলবে। তবে ইউনূস-তারেক বৈঠক সংকটের মাঝে নয়া সম্ভাবনার ইঙ্গিত বহন করছে। লন্ডনের আলোচনায় রাজনীতির নতুন সমীকরণ হতে পারে। লন্ডনের বৈঠক আপাতত একটি সাদামাটা খবর নয়। এর ঢেউ যে ঢাকার গুলিস্তান, বনানী কিংবা শাহবাগ পর্যন্ত পৌঁছবে, তাতে সন্দেহ নেই। ইউনূস-তারেক বৈঠক আসলে একটি নতুন ডাইমেনশনের নাম-যেখানে রাজনীতি শুধুই দল নয়, বরং প্রক্রিয়া, যেখানে নেতৃত্ব মানেই রণকৌশল, আর যেখানে সমঝোতা মানেই শক্তি সঞ্চয়। বাংলাদেশ কি তবে এক ‘পলিটিক্যাল প্যারাডাইম শিফট’-এর দিকে এগোচ্ছে?
লন্ডনে ইউনূস-তারেক বৈঠক আপাতত শুধুই একটি আলোচনার খবর নয়; বরং এটি দেশের রাজনীতির নতুন দিকচিহ্ন হতে পারে। আবার সন্দেহের দানাও বাঁধতে পারে জনমনে। বাংলাদেশ কি তবে আবারও এক প্রকার ‘নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক সমঝোতা’র যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে? সময়ই তার উত্তর দেবে। তবে এটুকু বলা যায়— এই বৈঠক বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থবিরতার মধ্যে একটি স্বল্প আলোর রেখা দেখাচ্ছে। ১৩ জুন ঐদিন লন্ডন থেকে আশা আর সন্দেহের এক যৌথ বার্তা আসতে পারে; একটি সফল বৈঠক কি প্রকাশ্যে কূটবুদ্ধির চেয়ে বেশি প্রমাণ পাবে, না কি এ বৈঠক কেবল একটি ‘মাল্টি-ফাংশন’ সৌজন্য সাক্ষাৎ?
লেখক: সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব-কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।

