বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

কিশোর গ্যাং নিয়ে একজন চিকিৎসকের ভাবনা

ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু
প্রকাশিত: ০৬ জুন ২০২২, ১০:২২ পিএম

শেয়ার করুন:

কিশোর গ্যাং নিয়ে একজন চিকিৎসকের ভাবনা

চেম্বার থেকে বাসায় যাচ্ছি। গলিতে নামতেই খটকা লাগলো। স্কুল ড্রেস পড়া কয়েক ছেলে দুই বখাটের পিছু নিয়েছে। এদের একজন কোনও এক বন্ধুকে আসার জন্য ফোন করতে বলল। শুনলাম, যাকে ফোন করা হচ্ছে, তার নাম আবদুল্লাহ। চমৎকার নাম, আমার খুব প্রিয়।

আমার কৌতুহল হলো। একটু দাঁড়ালাম। ছেলেগুলোর জন্য মায়াও হলো। ওদের মা-বাবার কথা মনে হলো। কি আদর করেই না ওদের মানুষ করেছে। উঠতি বয়সি এই ছেলেদের কারো বয়স পনেরো পেরোয়নি। ভদ্র চেহারা, মায়ায় ভর্তি। এরা কিশোর গ্যাংয়ের খপ্পড়ে পড়েছে। 


বিজ্ঞাপন


মোটরবাইকে করে তিন বখাটেকে আসতে দেখলাম। ওদের কানেও মোবাইল ফোন। উপস্থিত সবাই অস্থির হয়ে সালাম দিলো তাদের। আর অন্য গলিতে দেখা গেলো আরো কয়েক বখাটেকে।

একটা সঙ্ঘাত আসন্ন। এই সঙ্ঘাতে হয়তো মায়াভরা চেহারার দুইএক কিশোর আহত হবে। মারাও যেতে পারে। এতে খালি হবে মায়ের বুক।  কিশোর গ্যাং এরিমধ্যে অনেক মায়ের বুক খালি করেছে।
ভয়ঙ্কর এই চর্চার শেষ কোথায়!

আমাদের এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথই বা কী?

ভাবতে হবে এখনি। এই কিশোরেরা ক্রমেই নৃশংস হয়ে উঠছে। এরা তৈরি করছে বিভীষিকা। ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। মায়াভরা এই চেহারাগুলো জড়িয়ে যাচ্ছে খুন, ধর্ষণের মতো অপরাধে। ঐশির হাতে তারই বাবা-মায়ের মৃত্যু এর উদাহরণ। 


বিজ্ঞাপন


ঐশিদের জন্ম আমাদের সমাজেই। তাহলে কি এই সমাজই এদের তৈরি করেছে! আমাদের সময় সমাজ তো এমন ছিলো না। তখনকার কিশোরেরা এতোটা একাকিত্ত্ব নিয়ে বেড়ে উঠেনি। সেইসময় ছিল যৌথ পরিবার। আর এখন মা-বাবা ছাড়া পরিবারে অন্যদের কল্পনা করা কঠিন। ওই সময় দাদা-দাদিসহ বাড়ির অন্যরা থাকতেন। এরা ছোটদের শাসন করতেন। তাদের সাথে কথা বলতেন। সুখ-দুঃখ শেয়ার করতেন। আর এই সমাজের শিশুরা বড় হচ্ছে একাকিত্বকে সঙ্গী করে। মা-বাবা দু’জনই ব্যস্ত। সন্তানেরা শিখছে পাড়ার ছেলেটা থেকে। কাজের বুয়া থেকে। ভার্চুয়াল জগত তাদের সববচেয়ে বড় সঙ্গী। পরিবার থেকে সামান্য শিক্ষাও পাচ্ছে না শিশু ও কিশোরররা।
গ্যাংয়ে যুক্ত হচ্ছে ১২ থেকে ১৭ বছরের কিশোরেরা। আচরণ পরিবর্তন হয়ে পড়ছে তাদের। শরীরে ট্যাটু, দেয়ালে লিখন, প্রভাব বিস্তারের মতো এক অবাস্তব প্রতিযোগিতা। 

বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার সময় এসেছে এখন । প্রজন্মকে রক্ষায় লাগাম টানতে হবে। নয়তো ভবিষ্যতে এর দায় আমাদেরই নিতে হবে। 

আজ প্রশ্ন রাখার জায়গা তৈরি হয়েছে আমরা কতোটা সময় দিচ্ছি পরিবারকে। কোন পথে হাঁটছে সমাজব্যবস্থা। গ্যাং কালচার তৈরির উপাদান বন্ধে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাহচার্য,সামাজিক অসমাতা, ব্যক্তিত্ব বা কোথায় ঠেকেছে। এ কাজে পরিবারও অনেকসময় ভূমিকা রাখছে প্রত্যক্ষভাবে। পারিবারিক বিশৃঙ্খলা অথবা ডিভোর্স, একাধিক বিবাহ, সন্তানের হতাশার সময় পাশে না থাকা। 

এর সাথে জাড়িয়ে আছে নেশায় আশক্ত হয়ে পড়ার মতো ঘটনা। পাঠদান ব্যাহত হলে শিক্ষার্থীরা মাদককে কেন্দ্র করে আড্ডায় জড়ায়। এছাড়াও এদের মধ্যে রয়েছে অনুকরণপ্রবণতা, অল্প বয়সে যৌন আসক্তি।
আল্লাহ আমাদের এ অবস্থা থেকে উত্তরণ করো..

ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু 
নিউরোলজিস্ট :ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল 

ডিএইচডি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর