ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে জানতে পারলাম, একজন সচিবের মাসিক বেতন সব মিলিয়ে এক লাখ ১২ হাজার টাকা। এর বাইরে সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য একটি গাড়ি পান। (এখন সম্ভবত পরিবারকেও ব্যবহারের জন্য একটি গাড়ি দেওয়া হয়)। গাড়ির ড্রাইভার, জ্বালানি ও মেরামত খরচ সরকারের। একজন সচিব চাইলে সরকারি গাড়ি না নিয়ে গাড়ি কেনার জন্য বিনা সুদে ঋণ নিতে পারেন। তখন গাড়ির ড্রাইভার ও জ্বালানি খরচ সরকার দেবে। এছাড়াও আছে বাসায় ল্যান্ড ফোন, হাতে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সুবিধা। আপ্যায়ন ভাতা, বিদেশ ভ্রমণ ভাতা পান। বাসায় রান্নান বাবুর্চি পালতে ১৬ হাজার টাকা ও নিরাপত্তা প্রহরীর জন্য আরো ১৬ হাজার টাকা পান।
এখানে হয়ত তথ্য কিছু কম বেশি থাকতে পারে। কিন্তু এটা ঠিক যে, আমলাতন্ত্র বেতনের বাইরে আরও বড় অংকের সুযোগ-সুবিধা পান। বিপরীতে তারা জনগণের জন্য কী কী সুযোগ সুবিধা দেন? ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না। দুর্ব্যবহার কমন, সময়ক্ষেপণ আরও কমন। এক সপ্তাহের কাজ অন্তত এক মাস না ঘুরিয়ে শেষ করেন না। ব্যতিক্রম হয়তো কিছু আছে, কিন্তু বেশির ভাগেরই একই চরিত্র।
বিজ্ঞাপন
এই আমলাতন্ত্র গত ১৫ বছর কী করেছে? তিনটি ভুয়া নির্বাচন করতে সাহায্য করেছে, যা অর্থনীতির শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে। রাজনীতিবিদ ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে নিয়ে এই আমলাতন্ত্র গত রেজিমে বছরে অন্তত ১৬ বিলিয়ন ডলার করে পাচারের সুযোগ তৈরি করেছে। মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে। বৈষম্যের পাহাড় তৈরি করেছে। ফলাফল হিসেবে জুলাই বিপ্লব।
তাহলে এখন তাদের কথাতেই অন্তর্বতী সরকার কেন ভ্যাট বাড়াচ্ছে? ফল থেকে শুরু করে ইন্টারনেটের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে, দ্রুত এই সরকারকে জনগণের কাছে অজনপ্রিয় করার, নীলনকশা তো মনে হয় এই আমলাতন্ত্রেরই। বিপ্লবের পর জনগণ আশায় ছিল অন্তত বাজারে জিনিসপত্রের দাম কিছুটা হলেও কমে আসবে। ভ্যাট বাড়ানোর এই প্রস্তাবে আজ থেকেই সব কিছুর দাম বাড়তে শুরু করেছে। কাল পরশু পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে?
আরও পড়ুন
ভ্যাট বৃদ্ধির প্রভাব নিত্যপণ্যে পড়বে না: এনবিআর
ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়বে না নিত্যপণ্যে: অর্থ উপদেষ্টা
উপদেষ্টাদের কেউ কেউ বলছেন, আগের সরকারের লুটপাটের খেসারত দিতে হচ্ছে জনগণকে। তাই কর বাড়াতে হচ্ছে। কী অদ্ভুত কথা? আপনি আমলাতন্ত্রের ফালতু খরচ কমাচ্ছেন না কেন? উল্টো তাদের মহার্ঘ ভাতা দিচ্ছেন। আর, সেই ভাতার টাকা এখন জনগণের পকেট থেকে সহজে বের করে নিতে ভ্যাট বাড়াচ্ছেন? কে এত বড় দায়িত্ব আপনাদের দিলো? মাত্র ছয় মাস আগে তরুণরা এজন্য জীবন দিয়েছিল?
বিজ্ঞাপন
আমলাতন্ত্রের ফালতু খরচ কমানোর পাশাপাশি রাজস্ব আয় বাড়াতে চট্টগ্রাম ও বেনাপোল বন্দরে কাস্টমের দুর্নীতি কমিয়ে আনেন। সেটা করছেন না কেন? আপনাদের তো জনগণ সেই ম্যানডেট দিয়েছে। কাস্টমসে টাকা ছাড়া কোনো কথা হয় না, এটা কেন না জানে? আপনি গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ করতে চাইছেন, অথচ তিতাসের কেজি দরে ঘুষ খাওয়া বন্ধ করছেন না কেন? সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোর দরজা-জানালও ঘুষ খায় শুনছি। ওটা কী বন্ধ করেছেন? আপনাদের সেই ক্ষমতা তো দেওয়া হয়েছে।
যারা গত ১৫ বছর লুটপাট করেছে, তাদের দেশে থাকা টাকাগুলো আবার বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিলেন কেন? এখন তাদের যেসব সম্পত্তি আছে সেগুলো ক্রোক করছেন না কেন? যাদের কোটি কোটি টাকার সম্পদ হয়েছে, তাদের সম্পদ কর বাড়াচ্ছেন না কেন? এসব ধনীরা ঠিকমত সম্পদ কর দিচ্ছে কি না তা যাচাই করছেন না কেন? জনগণের পকেট টাকা খুব সহজ, তাইতো? আগের দেখানো পথে হেঁটে কাদের সুবিধা করে দিতে চাইছন? বাজেট বাস্তবায়ন করতে যদি রাজস্ব আয় বাড়াতে না পারেন, তাহলে সকল সরকারি অফিসারের বেতন অর্ধেক করে দেন এই বছর। কেন শুধু শুধু সাধারণ জনগণের পকেটে হাত দিচ্ছেন? উদ্দেশ্য কী?
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী