সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

২০২৫ সালকে স্বাগত: অতীতের শিক্ষা ও ভবিষ্যতের প্রত্যাশা

বিল্লাল বিন কাশেম
প্রকাশিত: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১২ পিএম

শেয়ার করুন:

২০২৫ সালকে স্বাগত: অতীতের শিক্ষা ও ভবিষ্যতের প্রত্যাশা

২০২৫ সালকে স্বাগত। ২০২৪ বিদায় নিয়েছে। সময়ের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে বহু স্মৃতি, মুহূর্ত ও অভিজ্ঞতা। ২০২৪ একটি বিস্তীর্ণ বছর ছিল, যার মধ্যে ছিল আনন্দ, দুঃখ, সংগ্রাম, এবং অনেক কিছু শিখে যাওয়ার সুযোগ। এখন ২০২৫ এর পিপাসিত আগমন আমাদের সামনে, আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটি নতুন পথ উন্মোচিত হচ্ছে। কিন্তু এই নতুন বছরে প্রবেশের আগে, অতীতের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা আমাদের অতিক্রম করতে হবে এবং শুধুমাত্র সেগুলো থেকে নতুন দিশা নিতে হবে।

২০২৪: যেখান থেকে আমরা শিখলাম


বিজ্ঞাপন


২০২৪ সাল ছিল বিশ্বের জন্য এক বিস্ময়কর ও চ্যালেঞ্জিং সময়। কোভিড-১৯ মহামারী পরবর্তী পৃথিবী, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি—এসবই আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালে এই সমস্ত ঘটনা আমাদের অজান্তেই বদলে দিয়েছে, আমাদের জীবনধারার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে।

এই বছরটি বিশেষ করে বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে, বেশ কয়েকটি বড় পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে। দেশের ভেতর ও বাইরের রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও দৃঢ় হয়েছে। তবে এর পাশাপাশি আমরা দেখেছি মানুষ একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে আরও সহানুভূতির সঙ্গে জীবনযাপন করছে। মানবিকতা, সহযোগিতা এবং সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হয়েছে। ২০২৪ আমাদের শিখিয়েছে যেকোনো দুর্যোগের মধ্যেও মানুষের মধ্যে ঐক্য ও একে অপরকে সাহায্য করার শক্তি অমলিন।

এছাড়া প্রযুক্তির গতি বৃদ্ধি, পরিবেশ সংরক্ষণে বৈশ্বিক উদ্যোগ এবং শিক্ষা ব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তরও ছিল একাধিক আলোচনার বিষয়। তবে এই প্রযুক্তির বিকাশ ও পরিবেশগত সংকটের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করতে হলে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় সমন্বিত পরিবর্তন আনতে হবে।

এ বছর ছিল আমাদের একাধিক ভুলেরও বছর। আমরা ভুলে গিয়েছি যে, বিশ্বব্যাপী প্রতিটি মানুষের জন্য সহানুভূতি এবং সমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে সব মানুষ সমান সুযোগ পাবে, সেখানে সমাজ আরও সমৃদ্ধ হতে পারে।


বিজ্ঞাপন


২০২৫: নতুন বছর, নতুন প্রত্যাশা

২০২৫ এর আগমন আমাদের কাছে এক নতুন আশা এবং উদ্দীপনা নিয়ে এসেছে। নতুন বছর মানে নতুন সূচনা, নতুন চ্যালেঞ্জ এবং নতুন সম্ভাবনা। কিন্তু এই নতুন বছরের পথে হাঁটতে গেলে আমাদের অতীতের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা যেন আমাদের পথপ্রদর্শক হয়।

২০২৫ সালে আমরা চাই একটি সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও সবার জন্য উন্নত পৃথিবী। এর জন্য আমাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং সবক্ষেত্রে উদার মনোভাব বজায় রাখতে হবে। আমাদের একক প্রচেষ্টার চেয়ে সমষ্টিগত প্রচেষ্টা বেশি ফলপ্রসূ হতে পারে। রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের উন্নতি সাধন করতে হলে, আমাদের উচিত একে অপরকে সহায়তা করা এবং উদার মনোভাব থেকে কাজ করা।

নতুন বছরে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে পরিবেশগত বিপর্যয় রোধ এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী যে বিপর্যয় ঘটছে, তা আমরা প্রতিনিয়ত অনুভব করছি। এ থেকে উত্তরণ পেতে আমাদের পরিবেশের প্রতি আরও সচেতন হতে হবে। সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি এবং নবায়নযোগ্য শক্তির প্রতি আমাদের মনোযোগ বাড়ানো উচিত। একইসঙ্গে প্লাস্টিক ও অন্যান্য দূষণকারী উপাদান থেকে দূরে থাকতে হবে।

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণও একটি বড় উদ্দেশ্য হতে পারে ২০২৫ সালের জন্য। আমাদের উচিত এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেখানে সব মানুষের জন্য সমান সুযোগ এবং সমান অধিকার নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এসব ক্ষেত্রে সমান সুযোগ নিশ্চিত করাই হবে আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য।

অতীতের শিক্ষা থেকে বর্তমানের দৃষ্টিভঙ্গি

২০২৫ সালে পা রেখে আমাদের উচিত অতীতের শিক্ষাগুলো নিজেদের অন্তরালে ধারণ করা। এই শিক্ষাগুলো আমাদের জন্য কেবল এক ধরনের পথপ্রদর্শক নয় বরং আমাদের ভুলগুলোর সংশোধনের মাধ্যমও হতে পারে। যেমন ২০২৪ সালে আমরা দেখেছি, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের সামাজিক শান্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। অথচ সবাই একে অপরকে শ্রদ্ধা এবং সহযোগিতা করলে হয়তো পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত। তাই আমাদের উচিত এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে রাজনৈতিক মতবিরোধের পাশাপাশি মানবিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

আমাদের উচিত একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা এবং সমষ্টিগত প্রচেষ্টায় একটি ভালো সমাজ গড়ে তোলা। নতুন বছরে আমরা যদি একে অপরের প্রতি সদয় ও সহনশীল হই, তবে ২০২৫ একটি স্মরণীয় বছর হয়ে উঠবে।

নীতিমালা এবং সমষ্টিগত দায়িত্ব

২০২৫ সালের পথচলায় শুধু আমাদের নিজেদেরই নয়, বরং সমাজের প্রতিটি সদস্যের জন্য একটি দৃঢ় নীতিমালার প্রয়োজন হবে। তা হতে পারে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ বা সামাজিক কল্যাণের ক্ষেত্রে। আমাদের উচিত সমষ্টিগত দায়িত্ববোধ থেকে একে অপরকে সাহায্য করা এবং আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে উন্নতির জন্য কাজ করা।

সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী ধারণার প্রতি আগ্রহ এবং পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা আরও জোরদার করতে হবে। নতুন বছরে আমাদের যে বড় লক্ষ্য হতে পারে তা হলো—মানবিকতা ও দায়িত্বশীলতার আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা।

২০২৪ সালের থেকে বিদায় নিয়ে আমরা ২০২৫ সালকে স্বাগত জানাচ্ছি। নতুন বছরে আমাদের সামনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। তবে সেই পথচলায় অতীতের শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমাদের উচিত অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে প্রস্তুত থাকা। শুধু নিজের উন্নতি নয় বরং সমাজের, দেশের এবং পৃথিবীর উন্নতি আমাদের উদ্দেশ্য হতে হবে। ২০২৫ সাল হবে এক নতুন সূচনা, যেখানে আমরা সকলেই একযোগে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাব।

লেখক: কবি, লেখক ও কলামিস্ট

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর